Barak UpdatesHappeningsFeature Story
নেতাজির মূর্তি সরানোর সিদ্ধান্ত অবিবেচকের কাজ, অভিযোগ তমালের
ওয়েটুবরাক, ১৭ ফেব্রুয়ারি : আসামের বর্তমান সরকারের বোধ বলতে কিছু নেই। চমকের সস্তা রাজনীতিকে আশ্রয় করেই সরকার চালাচ্ছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। অভিযোগ শিলচর জেলা কংগ্রেস কমিটির৷ সভাপতি তমালকান্তি বণিক বলেন, তিনি উচ্ছেদের নামে রাজ্যের একাংশ গরীব মানুষদের ঠেলে দিচ্ছেন চরম দুর্যোগের গভীর খাদে। আবার স্থানীয় ভাবে নিয়োগের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে স্থানীয় শিক্ষিত গরীব যুবকদের বঞ্চিত করে অন্যান্য জেলা থেকে পছন্দের লোকদের সরকারি চাকরি পাইয়ে দেবার কুপ্রবৃত্তির বাস্তবায়নে সচেষ্ট। তমালকান্তি বলেন, জনহিতকর ইতিবাচক বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নে সরকারি অনিচ্ছা রাজ্যের জনগণের দৈনন্দিন দুর্ভোগকে চরম সীমায় নিয়ে যাচ্ছে৷ আর চমক সৃস্টি করার খেয়ালি রাজনীতির স্বার্থে সরকারি কোষাগারের টাকা খোলামকুচির মত ওড়াচ্ছে। তাঁর কথায়, এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হলো, সরকারি টাকায় শহর শিলচরে নতুন মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা গ্রহণ।
তমালের বক্তব্য, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শিলচরের রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্টে থাকা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তিটিকে সরিয়ে দিয়ে ওইখানে আরও বড় নেতাজির মূর্তি স্থাপন করা হবে। অথচ বর্তমান মূর্তিটি বসানো হয়েছিলো ১৯৮৩ সালে। সে বছরের ২৬ জানুয়ারি উন্মোচিত নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের এই মূর্তিটি বসানোর পিছনে রয়েছে স্থানীয় লম্বা ইতিহাস। নেতাজির পদধূলি ধন্য এই শহরের গুণী, কৃতি ও মেধাবী মানুষেরা নেতাজির মূর্তি প্রতিস্থাপন করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল বোর্ড ও সেই সময়ের চেয়ারম্যান প্রয়াত সন্তোষ মোহন দেবের তৎপরতায় রাজনৈতিক দলবাজির উর্দ্ধে উঠে শহরের বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে মূর্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। কমিটির তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের ভাস্কর দ্বারা নির্মিত হয় দুইটি মূর্তি। একটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ও অপরটি নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর। শহরের মানুষদের থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে ও গান্ধী মেলায় লটারি খেলার আয়োজন করে সংগ্রহ করা হয়েছিল মূর্তি প্রতিষ্ঠার তহবিল। নেতাজি মূর্তি প্রতিষ্ঠাতে সক্রিয় ভাবে যোগ দিয়েছিলেন সর্বাধিনায়ক নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের হয়ে ভারতের স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা এবং যাদের শেষ জীবন কেটেছে শহর শিলচরে, সেই পরম শ্রদ্ধেয় সুনীল চক্রবর্তী ও সুশীল চক্রবর্তী। এই মূর্তিগুলির পিছনে রয়েছে স্থানীয় মানুষের ত্যাগ, পরিশ্রম, ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও ঐকান্তিক ভাবে এই শহরের সব ধর্মের ও সম্প্রদায়ের মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস। একে নেহাৎই একটি মর্মর মূর্তি বলে যারা ভাবেন তারা মুর্খের স্বর্গের বাসিন্দা, আকাট মুর্খজন, বলেন তমাল বণিক।
তাঁর কথায়, পুরনো জিনিসকে সংরক্ষণ করাই শিক্ষিত ও উন্নত মানসিকতার পরিচায়ক। প্রত্যেক পুরনো জিনিষের মধ্যে লেপ্টে থাকে একটি ইতিহাস এবং এই ইতিহাস চলমান সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। চল্লিশ বৎসর বয়সী এই নেতাজী মূর্তি শহর শিলচরের ঐতিহ্যেরও স্মারক, এর সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যায়নই শহরের নাগরিকদের কাছে একান্ত ভাবে কাম্য।
শহরে যতগুলি মূর্তি এখন পর্যন্ত বসানো হয়েছে , সব হয়েছে জনগণের থেকে চাঁদা সংগ্রহের মাধ্যমে৷ কখনও সরকারের কোষাগার ভেঙে এক টাকাও তাতে খরচ করা হয়নি। এতে প্রয়োজনীয় খাতে ব্যবহার করার জন্য সরকারের তহবিল যেমন সুরক্ষিত থাকে, তেমনি অনেক মানুষের চাঁদা দিয়ে সরাসরি যোগদানের ফলে প্রকল্পের সাথে গড়ে ওঠে এক বিশেষ সম্পর্ক। নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের মূর্তিও শহরের আম সাধারণ মানুষ ও তাঁদের বিভিন্ন সংগঠনই দেখভাল করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে।
শহর শিলচরের রাঙ্গিরখাড়ি স্থিত নেতাজির মূর্তি নতুন করে প্রতিস্থাপন করার নামে একটি বিশেষ দলীয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি টাকা, তছরুপ করা হবে বলে মন্তব্য করে তমাল বণিক এই চেষ্টার ভাষায় নিন্দা জানান৷ তিনি বলেন,
যখন শিলচরে ওই মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল তখন বর্তমান সরকারি দলের কোন নামনিশান ছিল না , তাই তাঁরা ওই মূর্তি বা শিলচর শহরের তৎকালীন মানুষের মনস্তত্ব অনুধাবন করতে পারবেন না, সেটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু তাই বলে বোঝার ও জানার চেষ্টাও করবে না সে ভাবনা তাদের রুচিহীনতার পরিচয়ই বহন করে। বর্তমানের উন্নত প্রযুক্তির যুগে শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেক কিছুই করা সম্ভব। যেহেতু শহরটা এখনো কোনও দলের নিজস্ব সম্পত্তি হয়ে যায়নি৷ তাই শহরের সৌন্দর্যায়নের নামে দল মত নির্বিশেষে শহরের প্রাক্তন কৃতি স্তম্ভদের কর্মকে হেয় করার ঘৃণ্য মানসিকতার উর্দ্ধে উঠে কাজ করুক সরকার, সেক্ষেত্রে শহর সৌন্দর্যায়নের কাজে এই শহরের সর্ব স্তরের মানুষের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে জাতীয় কংগ্রেসের শিলচর জেলা কমিটি, অঙ্গীকার করেন সভাপতি৷
তিনি আরও বলেন, “সুভাষের মূর্তিতে সংস্কারের কাজ হোক, সহযোগী হাত নিয়ে পাশে থাকবো আমরাও৷ কিন্তু বহু মানুষের দান, ত্যাগ ও স্মৃতি বিজড়িত এই নেতাজির মুর্তির বদলে অন্য আরেকটি মূর্তি বসানোর প্রচেষ্টার প্রতি থাকবে আমাদের তীব্র বিরোধিতা। সরকারের টাকা জনগণের টাকা, তার অপব্যবহার অচিরেই বন্ধ করতে হবে।”