Barak UpdatesHappeningsBreaking News

শিলচরে সাধারণতন্ত্র দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী নন্দিতা গারলোসার ভাষণ

উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিলচর শহর সহ কাছাড় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শ্রদ্ধেয় নাগরিকবৃন্দ,

আজ ভারতের ৭৪তম সাধারণতন্ত্র দিবস। এ উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। এই শীতের সকালে আপনাদের উতসাহ-উদ্দীপনাই সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রতি সাধারণ জনতার শ্রদ্ধাবোধের সাক্ষ্য বহন করে। এই স্বাধীনতা ও সাধারণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের দেশের শত শত বীর শহিদ। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি। এ কথা আজ আর বলার অবকাশ রাখে না, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি আমাদের দেশে সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজও এই সাধারণতন্ত্রের সুরক্ষায় যারা প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছেন, তাঁদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধা জানাই।

আজ সাধারণতন্ত্র দিবসের এই পুণ্যলগ্নে আমি আমার অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন করি মহাত্মা গান্ধী এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি। তাঁরা নিজ নিজ পন্থায় ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্মরণ করি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, উল্লাসকর দত্ত, অরুণকুমার চন্দ, শ্যামাচরণ দেব, মণিরাম বরুয়া, শম্ভুধন ফংলো, কনকলতা বরুয়া, পিয়ালী ফুকন, কুশল কোঁয়র প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। এই কয়েকজনের নামোল্লেখ করলেও আমি আমার ব্যক্তিগত তরফে এবং সরকারের তরফ থেকে সকল স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই। সাধারণতন্ত্র দিবসে ভারতের সংবিধানকে শ্রদ্ধা জানাই, প্রণাম নিবেদন করি বাবাসাহের ভীমরাও আম্বেদকরের উদ্দেশে, যাঁর নেতৃত্বে এই সংবিধান প্রণীত হয়েছে।

আপনারা সকলেই লক্ষ্য করেছেন, এ বারের ইংরেজি নববর্ষের সকালে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সাংবাদিক সম্মেলনে বর্তমান সরকারের মন্ত্রীরা কে কতবার রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গিয়েছেন, কোথায় কোথায় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে, সমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছেন। সেইদিক থেকে আমি মনে করি, কাছাড় জেলা ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী। গত নভেম্বরে শিলচরে মন্ত্রিসভার বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম একসঙ্গে সমস্ত মন্ত্রী জেলায় রাত কাটিয়েছেন, নিজেদের বিভাগের কাজকর্ম পর্যালোচনা করেছেন। মন্ত্রিসভার বৈঠক ছাড়াও রাজ্যের সমস্ত মন্ত্রী কোনও না কোনও সময় কাছাড় জেলা সফর করে গিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, এই সবের সুফল নিশ্চিতভাবেই জেলাবাসী ভোগ করছেন।

কাছাড় জেলায় এ বার এক বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের অভূতপূর্ব বন্যা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গিয়েছে, অনেক সতর্কতার বার্তাও দিয়ে গিয়েছে। তাই রাজ্য সরকার চারটি স্পঞ্জ সিটি প্রজেক্টের মধ্যে শিলচরকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই প্রকল্পে বৃষ্টির জলকে ধরে রাখার বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাহলে একদিকে যেমন বৃষ্টিতে বর্তমানে শহরে যে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়, তা থেকে রেহাই মিলবে। পাশাপাশি জল সরবরাহ প্রকল্প এবং প্রকৃতি-পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়ক হবে। শিলচর শহরে এই প্রকল্পের জন্য চারটি জায়গাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে একটিকে বেছে নিয়ে ডিপিআর তৈরি করা হবে। সেখানে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক ৩০ হেক্টর জায়গা জুড়ে একশো কোটি টাকা ব্যয়ে জলাধার তৈরি করবে। সে জন্য অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক একটি পরামর্শদাতা সংস্থা প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে।

আপনারা নিশ্চয়ই এরই মধ্যে জেনে গিয়েছেন যে, আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের কাজকর্মে, বিশেষ করে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গত বছর কাছাড় জেলা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে। গত বছরে এই প্রকল্পে ৩৭১৬টি বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এ ছাড়াও, ৫৫২২টি বাড়ি নির্মাণের প্রথম কিস্তির অর্থ প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেয়েছে ৪৯৮০টি বাড়ি। আবাসন ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকই রাঙিরখালের উভয়দিকে রাস্তা চওড়া করে শক্ত গার্ডওয়াল তৈরি করছে। ৪২ কোটি ৬ লক্ষ টাকার ওই কাজ এখন চলছে। সঞ্জয় মার্কেটের কাছে বর্তমান কালভার্টটিকে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। সে জন্য ৪৮ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ইন্ডিয়া ক্লাব পয়েন্টে একটি বক্স সেল কালভার্ট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা। দুটি কাজেরই সাইট ক্লিয়ারেন্স চলছে এই সময়ে।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, জেলায় পরিবহন বিভাগের রাজস্ব সংগ্রহ প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে জেলায় পরিবহন বিভাগ মোট ৩৯ কোটি ৬২ লক্ষ ৭৮ হাজার ৩৭২ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে তা আগের বছর থেকে দশ কোটি টাকা বেশি। ফাইন বা জরিমানার হিসাব কষে দেখা যায়, গত নয়মাসে মোট জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ কোটি ১১ লক্ষ ৬০ হাজার ৮২৫ টাকা। এ ছাড়া, বেপরোয়া যান চালনা প্রতিরোধে বিভাগীয় কর্তারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-এনআইটিতে গিয়ে সচেতনতামূলক সভা-সমিতি করছেন।

কাছাড় জেলায় কী কী কাজকর্ম হয়েছে, কী কী কাজকর্ম এই সময়ে চলছে, সেইসব বি্স্তৃত বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে। এত সময় নিয়ে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না। তাই কয়েকটি বড় কাজেরই উল্লেখ করছি। পূর্ত দালানবাড়ি বা বিল্ডিং ডিভিশন নয় কোটি টাকা ব্যয়ে বড়খলায় মডেল ডিগ্রি কলেজ নির্মাণ করেছে। শিলচর বিএসসি নার্সিং কলেজে 1 কোটি ৮১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে মেরামতি, শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৬০ শয্যা ও ৪০ শয্যার দুটি আইসিইউ নির্মাণ, মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হসপিটালে অ্যাটেন্ডেন্টদের জন্য ওয়েটিং হল, রিটেইনিং ওয়াল এবং এক্সটারন্যাল ড্রেন নির্মাণ, মেডিক্যাল অক্সিজেন গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পিএমকেয়ার ফান্ডে নির্মিত হয়েছে এক হাজার এলএমপি ক্ষমতা বিশিষ্ট দুটি অক্সিজেন জেনারেশন প্ল্যান্ট। শিলচর মেডিক্যাল কলেজের কাজকর্ম ও সাফল্যের কথা এখন আর আমাদের উল্লেখের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ প্রায় সময় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আপনারাই তা লিখেন, শেয়ার করেন। ক্যাথল্যাবের সাহায্যে বরাকবাসী সহ পার্শ্ববর্তী রাজ্যের মানুষের উপকৃত হওয়ার কথা অনেক সময় আপনাদের পোস্ট থেকেই আমরা বিশদে জানতে পারি। এখন নির্মাণকাজ চলছে ক্যানসার হাসপাতালের। আশা করছি, আগামী ছয় মাসে এই কাজ শেষ হবে৷

 

এ ছাড়াও, আপনারা সবাই অবগত রয়েছেন, বরাক উপত্যকার জন্য পৃথক সচিবালয় তৈরির যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সেই মিনি সচিবালয় তৈরির কাজ চলছে। লক্ষীপুরে জুডিশিয়াল কোর্ট বিল্ডিং এবং বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি করা হয়েছে। সিগনেচার প্রজেক্ট হিসেবে গড়ে উঠেছে লক্ষীপুর ইনডোর স্পোর্টস স্টেডিয়াম। শিলচরে জুডিশিয়াল কোর্ট বিল্ডিঙের থার্ড ও ফোর্থ ফ্লোর নির্মাণের কাজ চলছে, সেজন্য ৯ কোটি ৭৮ লক্ষ ৩২ হাজার ৭৬৮ টাকা মঞ্জুর হয়েছে। সোনাইয়ে মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল নির্মাণের কাজ চলছে, সেজন্য মঞ্জুর হয়েছে ৩০ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। সায়েন্স সেন্টার কাম প্ল্যানেটরিয়াম স্থাপনের জন্য ১২৯ কোটি ২৬ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা মঞ্জুর হয়েছে। শিলচরে নির্মিত হবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। রাজ্যের দশ জায়গার সঙ্গে শিলচরেও একটি আইন মহাবিদ্যালয় তৈরি হবে। সোনাইয়ে তৈরি হচ্ছে মডেল উইমেন্স কলেজ। শিলচর মেডিক্যাল কলেজে এখন ৯৬ কোটি ৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৫০০ শয্যার ইমার্জেন্সি হসপিটাল তৈরিরও কাজ হচ্ছে।

ধলাই-সোনাই টেরিটোরিয়াল রোড ডিভিশনের অধীনে ৫টি সেতু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও দুটি সেতু নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

সড়ক নির্মিত হয়েছে ১৪১ কিলোমিটার ৭১২ মিটার। আরও ১৪৩ কিলোমিটার ৬৫০ মিটার সড়ক নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷

 

চলতি অর্থবছরে জলসম্পদ দফতর মাসিমপুর থেকে কাটাখাল পর্যন্ত বাঁধের রায়পুর অংশে ১৮ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাঙা বাঁধ পুনর্নির্মাণ করছে। ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই সেখানে ভাঙন ধরা পড়ে। সে থেকে তা খোলাই পড়ে ছিল। এ বার তা পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ প্রায় শেষের পথে। তাতে রাখালখালের পার, টুকেরগ্রাম, মানিকপুর, রায়পুর গ্রাম এবং সংলগ্ন জাতীয় সড়ক ও শালচাপড়া রেলস্টেশন জলযন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবে। সিঙ্গিরবন্দে বরাক নদীর ভাঙন রোধে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানকার হাতিরহাড় এলাকার বহু বাড়ি নদীগর্ভে চলে গিয়েছিল। ৮ কোটি ৪৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকার এই প্রকল্পে বহু আবাসিক, বাণিজ্যিক ও সরকারি সম্পত্তি এবং কৃষিজমি নদীগ্রাস থেকে রেহাই পেয়েছে। একই ভাবে এসএম রোড থেকে দর্মিখাল পর্যন্ত বাঁধে সোনাই নদীর ভাঙন রোধ করা হয়েছে। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার কাজের ফলে সোনাই শহরাঞ্চল, ৫৪ নং জাতীয় সড়ক, সোনাই-শিলচর পূর্ত সড়ক, কাবুগঞ্জ-সোনাই পূর্ত সড়ক, কাবুগঞ্জ-হাতিখাল পূর্ত সড়ক এবং কাজিডহর, চাঁদপুর, নরসিংপুর, বেরাবাক প্রভৃতি গ্রাম সুরক্ষিত হয়েছে। এই সড়কেই মালুগ্রামে রুকনি নদীর বাঁধে যে ভাঙন ঘটে, সেখানে আরও ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কাজ হয়। এটি ছিল ফেজ-ওয়ানের কাজ। ফেস-টুতে হচ্ছে ২ কোটি ৬১ হাজার টাকার কাজ। এ ছাড়াও এই সময়ে ধলাই পুরনো সড়কে রুকনি নদীর ভাঙন ঠেকাতে ৩ কোটি ১৭ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকার একটি প্রকল্পে কাজ চলছে। এক কোটি টাকার প্রকল্পে কাজ হচ্ছে পালংঘাট থেকে উজানে, সোনাই নদীর বাঁধে। ঝাঞ্ঝারবালিতে সোনাই নদীর ভাঙন ঠেকাতে দুই কোটি টাকার প্রকল্পে কাজ এগোচ্ছে। সেইসঙ্গে বাংলাঘাটে অতিরিক্ত ডাবল শাটার স্লুইস নির্মাণে টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটির অনুমোদন মিলেছে। প্রশাসনিক অনুমোদন হয়ে গেলেই ৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পে হাত দেওয়া হবে। এ ছাড়া, ৫৬ কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্পেও টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি কমিটির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। এখন প্রশাসনিক অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে।

কাছাড় জেলায় মাছের উতপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। সেই লক্ষ্যে ফিস হ্যাচারি, বায়োফ্লক ইত্যাদির সংখ্যা লাগাতার বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী মতস্য সম্পদ যোজনায় দশটি রায়োফ্লক ফিস ফার্মিং সিস্টেম চালু হয়েছে। তাতে এক হাজার জন মতস্যজীবী উপকৃত হচ্ছেন। এই বছরেই দুইটি হ্যাচারি এবং একটি ফিড মিল চালু করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তা পূরণ হলে আরও ৬০০ জন মৎস্যজীবী উপকৃত হবেন।

কাছাড় জেলায় রেশন কার্ডের মাধ্যমে এই সময়ে ১২ লক্ষ ১৯ হাজার ১০৪ জন বেনেফিসিয়ারি রয়েছেন। আমাদের সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এই বেনেফিসিয়ারির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। এই জেলায় আরও ২ লক্ষ ৩৮ হাজার জনকে রেশন কার্ডের সুবিধা প্রদান করা হবে। গ্রামীণ এলাকায় ব্লক পর্যায়ে এবং শহর এলাকায় পুরসভা পর্যায়ে স্ক্রুটিনি কমিটি গঠন করে এই কাজ সম্পন্ন হবে। দুর্নীতি রোধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি প্রতিটি বিভাগে কার্যকর রয়েছে। খাদ্য ও গণবণ্টন দফতর দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে রংপুর ও বিক্রমপুরে দুটি সমবায় সমিতির লাইসেন্স বাতিল করেছে। আরও দুটির লাইসেন্স সাসপেন্ড করেছে। একই ভাবে ৫টি রেশন সপের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এবং ৪৬টি রেশন সপের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে।

কাছাড়বাসী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণদানের সুপারিশ, ভর্তুকি এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে চলেছে। কাছাড় জেলা শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র ২০২২ সালে প্রাইম মিনিস্টারস এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রামে কাছাড়ে মোট ১৬৮ জনের প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। তাঁদের ৫১ জন ইতিমধ্যে ব্যাঙ্ক থেকে অর্থ পেয়ে গিয়েছেন। নর্থইস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট স্কিমে ৮ জনের আবেদন ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। ব্যাম্বু মিশনের অধীনে ১৭ জন শিল্পীকে টুলকিট প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফর্মালাইজেশন অব মাইক্রো ফুড প্রসেসিং এন্টারপ্রাইজ স্কিমে ৪১ জনের আবেদন বিভাগ ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সাতজনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। আসাম টি ইন্ডাস্ট্রিজ স্পেশাল ইনসেনটিভ স্কিমে কুম্ভা টি এস্টেট আবেদন করলে জেলা শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র তাদের ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার ইনসেনটিভ প্রদানের জন্য সুপারিশ করেছে৷

জলসেচ বিভাগ প্রধানমন্ত্রী কৃষিসেচ যোজনার হর ক্ষেত কো পানি-র অধীনে মোট ৯৮৫টি নলকূপ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তাতে জেলার ৩৯৪০ হেক্টর জমিতে একাধিক ফসল উতপাদনের সুব্যবস্থা হবে। এ ছাড়া, আগামী ৩১ মার্চের আগে এসওপিডিজির অধীনে আরও ২৮টি হাইব্রিড টিউবওয়েল বসানোর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এই কাজ শেষ হলে বছরে আরও ১১২ হেক্টর কৃষিজমিতে জলসেচের বন্দোবস্ত হবে।

হস্ততাঁত ও বস্ত্র দফতর কাছাড় জেলায় স্বনির্ভর নারী ফ্ল্যাগশিপ স্কিমে ৭৯৯০ জন তাঁতীর আবেদনে অনুমোদন জানিয়েছে। এই প্রকল্পে তারা তাদের উতপাদিত সামগ্রী নির্দিষ্ট পোর্টালে আপলোড করবেন এবং সরকার তাদের সেই সামগ্রীর ভালো দাম পাওয়ার বন্দোবস্ত করবে। সে জন্য শিলচর ও লক্ষীপুরে দুটি প্রকিউরমেন্ট সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া, সিঙ্গিরবন্দ ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে গত দুই বছরে ৩০০ জন স্বনির্ভর হয়েছেন।

চলতি অর্থবছরে কাছাড়ে ৫৫টি মডেল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। হয়েছে নতুন ওয়ান স্টপ সেন্টারও। গত ১৭ জানুয়ারি শিলান্যাস হয়েছে সমাজ কল্যাণ বিভাগের জেলা কার্যালয়ের নতুন দালানবাড়ির।

আপনারা সবাই জানেন, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে নেওয়ার প্রকল্পে রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। কাছাড়ের ১৮৪ জন এই প্রকল্পে ৮৬১ মেট্রিক টন ধান বিক্রয়ের জন্য নাম নথিভুক্ত করেছেন। তার মধ্যে ২৮ কুইন্টাল ধান এফসিআই এরই মধ্যে ক্রয় করেছে।

 

গ্রামোন্নয়ন দফতরের এমজিএনরেগা প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে ২৪ লক্ষ ৫৪ হাজার ৪১ শ্রমদিবস কাজ হয়েছে। আপনারা জানেন, আমাদের সরকার চা বাগানের সার্বিক কল্যাণে নানা প্রতিশ্রুতি পালন করে চলেছে। সে জন্য এমজিএনরেগা প্রকল্পে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার ৪৯১ শ্রমদিবস কাজ দেওয়া হয়েছে কাছাড়ের চা বাগান এলাকায়। জেলায় গ্রহণ করা হয়েছে ৮৩টি অমৃত সরোবর প্রকল্প।

কাছাড় জেলায় চলতি অর্থবর্ষে ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ডিজএবিলিটি পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন ২১৮৪ জন। ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওল্ড এজ পেনশন পাচ্ছেন ২৮ হাজার ৩৬৮ জন। ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল উইডো পেনশন পাচ্ছেন ৬২৫৫ জন। ৮৭৮৯ জন পান ইন্দিরা মিরি ইউনির্ভাসাল উইডো পেনশন। ৬৩৩২৩ জন পাচ্ছেন শহিদ কুশল কোঁয়র বৃদ্ধ পেনশন। ৯৪৯ জনকে দেওয়া হচ্ছে আইদেউ সন্দিকৈ মহিলা পেনশন।

সায়েন্টিফিক রুরাল গোডাউন নির্মাণের জন্য রাজ্য সমবায় দফতর ৭৮টি ডিপিআর তৈরি করেছে। এই কাজে ৬০ কোটি ৭ লক্ষ ১১ হাজার   খরচ হবে। প্রতিদিন ১০ লক্ষ লিটার দুগ্ধ উতপাদনের মাধ্যমে শ্বেতবিপ্লবের জন্য অসম সরকার, এনডিবিবি এবং ওয়ামুলের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মেয়াদ নতুন করে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন মহিলা সমবায় সমিতিকে ১৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, জিপি সমবায় সমিতিগুলিকে ৯৫ লক্ষ টাকা এবং দুগ্ধ সমবায় সমিতিগুলিকে ১৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

অরুণোদয় প্রকল্পে মাসিক অনুদানের পরিমাণ একহাজার টাকা থেকে ১২৫০ টাকা করা হয়েছে। এ বার অরুণোদয়-টুর কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। এখন এই প্রকল্পে ১৭ লক্ষ বেনেফিসিয়ারি রয়েছেন। একে ২৭ লক্ষে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা উন্নত হওয়ার প্রেক্ষিতে ২৪টি জেলা এবং একটি মহকুমা থেকে আফস্পা প্রত্যাহার করা হয়েছে। পুলিশ বিভাগ এবং বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগের ফসল হিসেবে আমরা আনন্দিত যে, চলতি অর্থবছরে কোনও চোরাশিকারী গণ্ডার হত্যার পায়নি। হোমগার্ডদের ডিউটি অ্যালাউন্স ৩০০ টাকা থেকে দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে ৭৬৭ টাকা করা হয়েছে।

 

এ কথা আপনারা সবাই অবগত রয়েছে, বর্তমান সরকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শূন্যপদে নিয়োগের জন্য পৃথক রিক্রুটমেন্ট বোর্ড গঠন করেছে। তার অধীনে লিখিত পরীক্ষা সুসম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে মৌখিক এবং নথিপত্র পরীক্ষা।

চলতি অর্থবছরে আরও অনেক বিভাগের আরও বেশকিছু সাফল্যের কথা রয়েছে। বহু তথ্য-পরিসংখ্যান আমার হাতে মজুত আছে। কিন্তু আপনারা সকাল থেকে এসে বসে আছেন, তাই সে সব আর উল্লেখ করছি না। আগামী দিনে সরকার আপনাদের জন্য আরও নানা প্রকল্প ঘোষণা করবে। আপনারা সে দিকে খেয়াল রাখবেন, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবেন, সরকারি প্রকল্প সমূহের সুবিধা ভোগ করবেন।

জয়হিন্দ, বন্দেমাতরম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker