Barak UpdatesHappeningsBreaking News

সিএএ : প্রমাণ চাই, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তান থেকে এসেছেন, লিখেছেন ধর্মানন্দ দেব

//ধর্মানন্দ দেব//

বাড়িতেই বসে অনলাইনে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সোমবার সন্ধ্যায় নাগরিকত্ব সংশোধন আইন কার্যকর হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার একটি অনলাইন পোর্টালও চালু করেছে । যে পোর্টালের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই অনলাইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কীভাবে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে, কী কী নথি লাগবে, আপনি কি সেই নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য স্বল্প পরিসরে তুলে ধরার চেস্টা করছি৷

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হল গোটা দেশজুড়ে। লোকসভা ভোটের মুখে মোদি সরকারের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ । যাঁরা আবেদন করতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ফর্ম। যেমন, শিশুদের ক্ষেত্রে আলাদা ফর্ম, অন্য দেশ থেকে এসে আবেদন করলে আলাদা ফর্ম। আবার বাবা বা মা, কেউ ভারতীয় বলে যাঁরা নাগরিকত্বের দাবি জানাতে চান তাঁদের জন্য পৃথক আবেদনের প্রক্রিয়া। এমন সাত রকমের ফর্ম রয়েছে।

এখন দেখে নেওয়া যাক অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি । অনলাইনে আবেদন করার জন্য https://indiancitizenshiponline.nic.in/ ওয়েবসাইটের হোমপেজেই দেওয়া হয়েছে আবেদন লিঙ্ক। অথবা সরাসরি https://indiancitizenshiponline.nic.in/Login লিংকে ক্লিক করেও আবেদন করা যেতে পারে। আবেদনের সময় দিতে হবে নিজের কাছে থাকা সক্রিয় মোবাইল নম্বর অথবা ইমেইল আইডি। দিতে হবে ক্যাপচা কোড। পরবর্তী পর্যায়ে নিজের নাম এবং ইমেইল আইডি দিয়ে ফের ক্যাপচা কোড দিতে হবে। এরপর আপনার মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল আইডিতে একটি OTP পাঠানো হবে৷ সেই ওটিপি নির্দিষ্ট জায়গায় দিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে যেতে হবে।

পরবর্তী পর্যায়ে একটি নতুন পেজ খুলে যাবে। কারা আবেদন করতে পারবেন, কী কী নথি লাগবে, পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য পড়ে নিতে হবে। তারপর ‘Apply Online’-এ ক্লিক করতে হবে আবেদনকারীদের।পরে একটি নতুন পেজ খুলে যাবে। সেই পেজের শুরুতেই একটি ‘Temporary Application Id’ থাকবে (ধরা যাক- 021111202420056LPZM1)। সেটা লিখতে হবে। তারপর যাবতীয় তথ্য পূরণ করতে হবে আবেদনকারীদের। অনেক কিছু তথ্য দিতে হবে। ক্লিক করতে হবে ‘Save and Next’ বাটনে। এভাবেই একে-একে ঠিকানা, পরিবার, অপরাধ সংক্রান্ত ইতিহাস তথ্য দিতে হবে। তারপর আসবে ‘Photo/Documents’-র জায়গা। সেখানে নিজের ও নথির ছবি আপলোড করতে হবে। ‘আপলোড ফটো’ অপশনে গিয়ে আবেদনকারীর ছবি আপলোড করতে হবে। আপনি যে যে তথ্য দিয়েছেন, তা সঠিক হয়েছে কিনা, সেটা দেখার জন্য ‘View Application’-তে ক্লিক করতে হবে আবেদনকারীদের। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে ‘FINAL SUBMIT TO THE MINISTRY’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। যে প্রক্রিয়ার পরে আবেদনপত্রে কোনও ভুল থাকলেও আর সংশোধন করা যাবে না। ‘FINAL SUBMIT TO THE MINISTRY’ বাটনে ক্লিক করার পরে একটি ‘MHA File Number’ (কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ফাইল নম্বর) জেনারেট হবে। সেই নম্বর রেখে দিতে হবে আবেদনকারীদের। যে ‘ডায়লগ বক্সে’ ওই নম্বর দেখাবে, তা ‘Close’ করে নথি আপলোড করতে হবে। স্ক্যান করা পিডিএফ নথি লাগবে। সেই নথি আপলোড হয়ে যাওয়ার পরে ‘Print Application’ বাটনটা কার্যকর হবে। তারপর প্রিন্ট-আউট করে রেখে দিতে হবে নিজের আবেদনপত্র।

এবার ‘Online Payment’-র ট্যাবে যেতে হবে। সেখানে আবেদনকারীর নাম, ফর্ম, টাকা, MHA ফাইল নম্বর থাকবে। নীচেই ‘Payment Gateway’-র ‘Payment’ আছে। তাতে ক্লিক করতে হবে। অনলাইনে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে টাকা দিতে পারবেন। টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া সফল হলে একটি রশিদ মিলবে। সেটা নিজের কাছে রেখে দিতে হবে। অনলাইনে যে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন, সেটার স্বপক্ষে বিভিন্ন নথি জমা দিতে হবে জেলাশাসক বা ডেপুটি কমিশনারের অফিসে। যদি নাগরিকত্বের আবেদন গৃহীত হয়, তাহলে আবেদনপত্রে দেওয়া ঠিকানায় একটি চিঠি পাঠানো হবে। সেইসঙ্গে রেজিস্টার্ড ইমেল আইডি ও মোবাইল নম্বরে পাঠানো হবে বার্তা। সেই চিঠি পাওয়ার পরে indiancitizenshiponline.nic.in-তে গিয়ে নিজের ক্যাটেগরি অনুযায়ী ‘Form X’ বা ‘Form XI’ বা ‘Form XII’ পূরণ করতে হবে এবং জেলাশাসকের অফিসে সব অরিজিনাল কপি জমা দিতে হবে। আবেদনকারীদের ক্লিক করতে হবে ‘Apply Form X/XII’ বাটনে।  তারপর আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে হবে। ‘Modify/Print Form X/XII’ বাটনে ক্লিক করতে হবে তাঁদের। রেজিস্টার্ড ইমেল আইডিতে ওটিপি আসবে। সেটা ‘Submit and Continue’-তে ক্লিক করতে হবে।

পরে একটি নয়া পেইজ খুলে যাবে। সেখান যাবতীয় তথ্য পূরণ করে ‘Save and Next’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এবার আবেদনকারীর ছবি ও স্বাক্ষর আপলোড করতে হবে। আপলোড করার পরে ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য ‘Form X Final submit to the Ministry’-তে ক্লিক করতে হবে প্রার্থীদের। ‘Close’ বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং অনলাইন ফি জমা দিতে হবে। অনলাইনে টাকা দেওয়ার পরে পূরণ করা ফর্মটা নিয়ে গিয়ে জেলাশাসকের অফিসে জমা দিতে হবে আবেদনকারীদের। সঙ্গে অরিজিনাল সার্টিফিকেট, টাকা দেওয়ার রশিদ, ছবি, স্বাক্ষর-সহ যাবতীয় নথি নিয়ে যেতে হবে। যদি নাগরিকত্বের আবেদন গৃহীত হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার বা জেলাশাসকের কাছে তাঁর নাগরিকত্বের শংসাপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
এখন আমরা দেখে নেই উপরোক্ত প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করতে হলে কী কী নথির প্রয়োজন । নতুন নাগরিকত্ব রুলসে নথির উল্লেখ আমরা পাই তিনটি তপশিলে , সেগুলি হচ্ছে- তপশিল-১ক (Schedule-1A), তপশিল-১খ (Schedule-1B) এবং তপশিল-১গ (Schedule-1C) । তপশিল-১ক (Schedule-1A) -তে উল্লেখ করা নথিগুলি নিম্নরূপ-
১) আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জারি করা পাসপোর্টের অনুলিপি ।

২) ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (FRRO) অথবা ভারতে ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক জারিকৃত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা আবাসিক পারমিট ।

৩) আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সরকারি কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা জন্ম শংসাপত্র ।

৪) আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের
স্কুল সার্টিফিকেট বা স্কুল বা কলেজ বা বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা জারি করা শিক্ষাগত শংসাপত্র ।

৫) আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তান বা অন্য কোনও সরকারি এজেন্সি কর্তৃক জারি করা যে কোনও ধরনের পরিচয় নথি ।

৬) আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা যে কোনও লাইসেন্স বা শংসাপত্র ।

৭) আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে জমি বা প্রজাস্বত্ব রেকর্ড ।

৮) যে কোনও নথি যা দেখায় যে আবেদনকারীর পিতা-মাতা বা দাদা-দিদিমা বা দাদা-দিদিমাদের মধ্যে একজন আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের তিনটি দেশের যে কোনও একটির নাগরিক ছিলেন।

৯) আফগানিস্তানের সরকারি কর্তৃপক্ষ বা সরকারি সংস্থা দ্বারা জারি করা অন্য কোনও নথি যা নিশ্চিত করবে যে আবেদনকারী আফগানিস্তান বা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে ছিলেন ।

দ্রষ্টব্য: উপরোক্ত নথিগুলি তাদের বৈধতার মেয়াদের পরেও গ্রহণযোগ্য হবে।

আবেদনকারী ৩১/১২/২০১৪ ইংরেজি তারিখে বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন তা প্রমাণ করার জন্য নথির তালিকা দেওয়া হয়েছে তপশিল ১খ-তে। সেগুলির মধ্যে যে কোনও একটি আপনাকে দাখিল করিতে হবে। নথিগুলি হচ্ছে –

১) ভারতে আগমনের সময় ভিসা এবং ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্পের কপি।

২) ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (FRRO) অথবা ভারতে ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসার কর্তৃক জারিকৃত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা আবাসিক পারমিট ।

৩) আদমশুমারি সম্পর্কিত জরিপ পরিচালনা করার সময় এই ধরনের ব্যক্তিদের ভারতে আদমশুমারি গণনাকারীদের দ্বারা জারি করা স্লিপ।

৪) ভারতে সরকার জারি করা লাইসেন্স বা শংসাপত্র বা পারমিট (ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড ইত্যাদি সহ)।

৫) ভারতে জারি করা আবেদনকারীর রেশন কার্ড ।

৬) সরকারী স্ট্যাম্প সহ আবেদনকারীকে সরকার বা আদালত কর্তৃক জারি করা যেকোনো চিঠি।

৭) ভারতে জারি করা আবেদনকারীর জন্ম শংসাপত্র।

৮) আবেদনকারীর নামে ভারতে জমি বা ভাড়ার রেকর্ড বা নিবন্ধিত ভাড়া চুক্তি ।

৯) প্যান কার্ড ইস্যুকরণ নথি যা ইস্যু করার তারিখ বহন করে ।

১০) কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার বা যে কোনও পাবলিক সেক্টর দ্বারা জারি করা অন্য কোনও নথি কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার বা ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ বা অন্যান্য সরকারি কর্তৃপক্ষ।

১১) কোনও গ্রামীণ বা শহুরে সংস্থার নির্বাচিত সদস্য বা তার কর্মকর্তা বা রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক জারি করা শংসাপত্র।

১২) ব্যাঙ্ক (বেসরকারি ব্যাঙ্ক সহ) বা পোস্ট অফিসের সাথে সম্পর্কিত এবং জারি করা রেকর্ড এবং অ্যাকাউন্টের বিবরণ
আবেদনকারীর নামে অ্যাকাউন্ট।

১৩) আবেদনকারীর নামে ভারতে বিমা কোম্পানি দ্বারা জারি করা বিমা পলিসি।

১৪) আবেদনকারীর নামে বিদ্যুৎ সংযোগের কাগজপত্র বা বিদ্যুৎ বিল বা অন্যান্য ইউটিলিটি বিল ।

১৫) আবেদনকারীর বিষয়ে ভারতে আদালত বা ট্রাইব্যুনালের রেকর্ড বা প্রক্রিয়া।

১৬) কর্মচারী প্রভিডেন্ট দ্বারা সমর্থিত ভারতে যেকোনো নিয়োগকর্তার অধীনে পরিষেবা বা কর্মসংস্থান দেখানো নথি
তহবিল (EPF)/ সাধারণ ভবিষ্য তহবিল/ পেনশন/ কর্মচারীদের রাজ্য বিমা কর্পোরেশন (ESIC) নথি।

১৭) ভারতে জারি করা আবেদনকারীর স্কুল ছাড়ার শংসাপত্র।

১৮) একটি স্কুল বা কলেজ বা একটি বোর্ড বা একটি বিশ্ববিদ্যালয় বা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা জারি করা একাডেমিক শংসাপত্র।

১৯) আবেদনকারীকে পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে।

২০) বিবাহের শংসাপত্র

দ্রষ্টব্য: (i) উপরের নথিগুলি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা উচিত এবং এমনকি
তাদের বৈধতার সময়সীমা অতিক্রম করলেও গ্রহণযোগ্য হবে৷

(ii) নথিগুলি নিশ্চিত করতে হবে যে আবেদনকারী ৩১/১২/২০১৪ ইংরেজি তারিখে বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।

তপশিল ১ ক ও ১খ নথির যে কোনও একটি করে নথি অর্থাৎ মোট দু`টি নথির সাথে তপশিল ১গ-তে উল্লেখ করা শপথনামাটি দাখিল করিতে হবে । শপথনামায় সেই দেশের সম্পূর্ণ পোস্টাল ঠিকানা দিতে হবে এবং ভারতে প্রবেশের তারিখ, সাল ও মাস দিতে হবে ।
(লেখক পেশায় আইনজীবী)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker