Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
এসেছিলেন সার্কাসে খেলা দেখাতে, লকডাউনে এখন শিলচরে মাছ বেচেন সারদাCame with circus party, got stuck due to lockdown, Sarada now sells fish in Silchar
৭ জুন: সার্কাসের রিঙে খেলা দেখাতেন৷ এখন রাস্তার ধারে বসে মাছ বেচেন৷ সময়ের ব্যবধান মাত্র ৪৫ দিনের৷ এরই মধ্যে লকডাউন তাঁর জীবনটাকে বদলে দিয়েছে৷ চল্লিশ পেরিয়েছে বেশ কিছুদিন৷ তবু সারদা সিংহের খেলা দেখতে টিকিট কেটে ভিড় করতেন দর্শকরা৷ রশির ওপর দিয়ে সাইকেল চালিয়ে কত বাহবা কুড়িয়েছেন! একটু এ দিক-ও দিক হলেই একেবারে নীচে৷ জীবনের ঝুঁকি জেনেও মানুষকে বিনোদন দিয়েছেন৷
‘তবে তা কি আর শুধু মানুষের কথা ভেবে!’ নিজেই বললেন সারদা, ‘ক্ষিধের তাড়নায় ১১ বছর বয়সে সার্কাসের দলে নাম লেখাই৷ ট্রেনিং, প্র্যাকটিস ওসবের কোনও বালাই নেই৷’ দেখতে দেখতেই দলে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন৷ ও দিকে সবে কৈশোর পেরনো রতন সিংহেরও তখন সার্কাসে বেশ কদর৷ ভালবাসায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা৷ শেষে বিয়ে৷ এখন দুই মেয়ে তাদের৷ বিয়ের পর বড় মেয়ে আর রিঙে আসে না৷ ১৫ বছরের পুনম তাদের সঙ্গেই ঘুরে বেড়ায়, খেলা দেখায়৷
কলকাতার বাবুবাজারে বাড়ি হলেও ওটা শুধু ঠিকানামাত্র৷ বছরের বারোমাস সার্কাস নিয়েই ঘুরে বেড়ান৷ যেমন অসমে এসে প্রথমে হাইলাকান্দিতে৷ ওখান থেকে করিমগঞ্জে৷ পরে আসেন শিলচরের গান্ধীমেলায়৷
কিন্তু কে জানত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে! আর দেশে মাসের পর মাস লকডাউন হবে! প্রথম কোপেই মেলা বন্ধ, সার্কাসও৷ কী আর করেন তাঁরা! ১১০জন মানুষ৷ কতদিন হাতের টাকা ভেঙে খাওয়া যায়৷ শুরু হয় অর্ধাহার৷ শেষে শুধু ফেন-ভাত৷ তাদের দুর্দশার কথা জেনে বিভিন্ন এনজিও ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যায়৷ সরকারি তরফে দুইদিন চাল-ডাল দেওয়া হয়৷
লাইন ধরে ওইসব নিতে অস্বস্তি বোধ করেন সারদা৷ কিন্তু ভিনরাজ্যে কী আর করা যায়! রতন অনেক হেঁটেও কোথাও কাজ জোটাতে পারেননি৷ শেষে সারদাই সিদ্ধান্ত নেন, মাছ বেচবেন৷ কলকাতায় একসময় তার বাবার মাছের ব্যবসা ছিল৷
শিলচরে গান্ধীমেলার মাঠের সামনেই ছোটখাটো মাছের বাজার৷ পুরনো বিক্রেতারা তার প্রস্তাবে আপত্তি করেননি৷ বরং কম দামে ভাল মাছ কিনতে সাহায্য করেন তাঁরা৷
মাছ ব্যবসায়ীদের এই সহযোগিতা সারদাকে শিলচর সম্পর্কে নতুন করে ভাবায়৷ এখন তিনি আর সার্কাসের দলে ফিরতে চান না৷ ফিরতে চান না কলকাতাতেও৷ বললেন, ‘মাছই বেচব৷ শিলচরে থাকব৷’