Barak UpdatesHappeningsBreaking News

স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের বক্তৃতা

উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, শিলচর শহর সহ কাছাড় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত শ্রদ্ধেয় নাগরিকবৃন্দ,

আজ ভারতের 77-তম স্বাধীনতা দিবস। এই উপলক্ষে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন আমাদের দেশের হাজার হাজার বীর শহিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশমাতৃকার চরণে অনেকে তাঁদের জীবন উতসর্গ করে গিয়েছেন, অনেকে দিয়েছেন জীবনের মহামূল্যবান সময়। বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি তাঁদের প্রত্যেকের প্রতি। আজও এই স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত সুরক্ষায় যারা প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছেন, তাঁদের প্রতিও আমার শ্রদ্ধা জানাই।

আজ স্বাধীনতা দিবসের এই পুণ্যলগ্নে আমি আমার অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন করি মহাত্মা গান্ধী এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি। তাঁদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমেই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, চন্দ্রশেখর আজাদ, রানি লক্ষ্মীবাই, মাতঙ্গিনী হাজরা, উল্লাসকর দত্ত, কামিনীকুমার চন্দ, অরুণকুমার চন্দ, শ্যামাচরণ দেব, শম্ভুধন ফংলো, জ্যোতির্ময় সেন প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। 77-তম স্বাধীনতা দিবসে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলৈ, দেশভক্ত তরুণরাম ফুকন, অম্বিকাগিরি রায়চৌধুরী, বিষ্ণুরাম মেধি, শহিদ মণিরাম দেওয়ান, পিয়ালি ফুকন, কুশল কোঁয়র, কনকলতা বরুয়া সহ আসামের সকল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। এই কয়েকজনের নামোল্লেখ করলেও আমি আমার ব্যক্তিগত তরফে এবং সরকারের তরফ থেকে সকল অগণিত স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি আমার শতকোটি প্রণাম জানাই।

এ বার আপনারা দেখেছেন, আমাদের সরকার শিলাফলকম কার্যসূচি ঘোষণা করেছে। প্রতি জিপিতে এলাকার মানুষেরাই শিলাফলক লাগিয়েছেন। তাতে নিজের এলাকার বীর শহিদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম খোদাই করে তাঁদের শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। এই কর্মসূচির দরুন প্রতি জিপির মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম নিজের এলাকার মহান ব্যক্তিদের সম্পর্কে চিনতে-জানতে পেরেছে। আমিও এই সুযোগে কাছাড় জেলার সমস্ত শিলাফলকে উল্লেখিত সংগ্রামী এবং শহিদদের প্রতি আমার ব্যক্তিগত তরফে এবং সরকারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করছি।

এ বার আসি আমাদের সরকারের কিছু উন্নয়নমূলক কাজকর্মের কথায়। কাছাড় জেলায় কী কী কাজকর্ম হয়েছে, সে সব আপনারা অবগতই রয়েছেন। তবু কয়েকটি বড় কাজের কথা আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। আমাদের এই অনুষ্ঠান স্থলের একেবারে পাশেই রয়েছে এই সরকারের কাজকর্মের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। দুধপাতিল ও শিলচর শহরকে জুড়ে দিতে তৈরি হয়েছে আরসিসি সেতু। 87 কোটি 10 লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই সেতু অ্যাপ্রোচ সহ একশ শতাংশ নির্মিত হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। বরাক নদীর ওপর এই সেতু নির্মাণের দরুন মাছুঘাট এবং দুধপাতিল তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম খণ্ডের বাসিন্দাদের বিরাট উপকার হয়েছে। আগে তাদের আট কিলোমিটার ঘুরে রংপুর দিয়ে শিলচর শহরে আসতে হতো। এখন সেতু পেরোলেই শহরে চলে আসতে পারছেন তাঁরা। এই সেতু উদ্বোধনের পর কম খরচে তারা তাদের উতপাদিত কৃষিসামগ্রী শহরে এনে বিক্রি করতে পারবেন। তাতে ওই অ়ঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার যে উন্নতি ঘটবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সঙ্গে এই সেতুর সুবাদে শিলচর শহর উত্তরদিকে সম্প্রসারিত হতে চলেছে, এরও এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।

এ ছাড়াও, আপনারা অবগত রয়েছেন, কাছাড়ে ইন্টিগ্রেটেড ডিসি অফিস নির্মাণের এক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর কাজ শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে।

বন্যার প্রকোপ থেকে রেহাই দিতে চলতি অর্থবছরে জলসম্পদ দফতর মাসিমপুর থেকে কাটাখাল পর্যন্ত বাঁধের রায়পুর অংশে 18 কোটি 84 লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভাঙা বাঁধ পুনর্নির্মাণ করেছে। সিঙ্গিরবন্দে বরাক নদীর ভাঙন রোধ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। 3 কোটি 49 লক্ষ 20 হাজার টাকার এই প্রকল্পে বহু আবাসিক এলাকা এবং কৃষিজমি নদীগ্রাস থেকে রেহাই পেয়েছে। একই ভাবে শিলচর শহরের তারাপুর শিববাড়ি রোডের প্রটেকশন ওয়ার্ক সহ তারাপুর থেকে মাসিমপুর পর্যন্ত বাঁধ পুনর্নির্মাণে দশ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

এসএম রোড থেকে দর্মিখাল পর্যন্ত বাঁধে সোনাই নদীর ভাঙন রোধে ফেজ-ওয়ানের কাজ আগেই শেষ হয়েছিল। এ বার 2 কোটি 61 হাজার টাকায় ফেজ টু-র কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ধলাই পুরনো সড়কে রুকনি নদীর ভাঙন ঠেকাতে 3 কোটি 17 লক্ষ 37 হাজার টাকার একটি প্রকল্পের কাজও সম্পন্ন। এক কোটি টাকায় কাজ হয়েছে পালংঘাট থেকে উজানে, সোনাই নদীর বাঁধে। ঝাঞ্ঝারবালিতে সোনাই নদীর ভাঙন ঠেকাতে দুই কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন। এ ছাড়া, 56 কোটি টাকার আরও একটি প্রকল্পে সোনাইমুখ থেকে তারাপুরে বিভিন্ন ভাঙন মেরামতেরও কাজ অনেকটা এগিয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে বন্যার হাত থেকে শিলচর শহর সুরক্ষিত থাকবে। সেইসঙ্গে শিলচর শহরের জল দ্রুত বের করে দিতে বাংলাঘাটে অতিরিক্ত ডাবল শাটার স্লুইস নির্মাণে 5 কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে।

কাছাড় জেলায় জলজীবন মিশন পাইপযোগে জল পৌঁছানোর 950টি প্রকল্প নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে 375টির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। 338টি পিআরআই বা ইউজার্স কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সে সবের দ্বারা 1 লক্ষ 57 হাজার 231টি বাড়িতে পানীয় জলের বন্দোবস্ত হয়েছে। ওই সব প্রকল্পে 581 জন জলমিত্র নিয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে 489 জনের হাতে এনগেজমেন্ট লেটার তুলে দেওয়া হয়েছে। 382 জন তাদের পারিশ্রমিক পেতে শুরু করেছেন। 2160টি স্কুলে টেপ ওয়াটার কানেকশনের লক্ষ্য নিয়ে 2115টির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। একই ভাবে 1155টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে টেপ ওয়াটার কানেকশনের লক্ষ্য নিয়ে 1131টির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।

স্বচ্ছ ভারত মিশন গ্রামীণ প্রকল্পে 9000টি শৌচাগার নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে 8185টির জিওট্যাগিং সম্পন্ন। জেলায় কম্যুনিটি ম্যানেজড স্যানিটারি কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে 235টি। গোবর্ধন প্রকল্পে কম্যুনিটি লেবেল প্লান্ট তৈরি হয়েছে 30টি এবং হাউসহোল্ড লেবেল প্লান্ট হয়েছে 6টি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর রাজাবাজার, শালচাপড়া, পালংঘাট, সোনাই, বিন্নাকান্দি ও বড়খলা ব্লকে একটি করে প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট স্থাপন করেছে। তাপাং, বড়জালেঙ্গা, কালাইন, উধারবন্দ এবং কাটিগড়ায়ও প্লাস্টিক ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্পে জেলার 25টি জিপিতে 65টি প্যাডেল চালিত ট্রাই-সাইকেল দেওয়া হয়েছে। আরও 39টি জিপির জন্য 99টি এই ধরনের প্যাডেল ট্রাই-সাইকেল আসছে। এ ছাড়া, 11টি জিপিতে 15টি ব্যাটারি চালিত ই-রিকশা প্রদান করা হয়েছে।

আপনারা নিশ্চয়ই এরই মধ্যে জেনে গিয়েছেন যে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, বিশেষ করে, স্বাস্থ্য সেবা উতসবে কাছাড় জেলা আসামের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। কাছাড়ের 52 শতাংশ হাসপাতাল এ গ্রেড পেয়েছে, 46 শতাংশ পেয়েছে বি গ্রে়ড। সতীন্দ্রমোহন দেব সিভিল হাসপাতাল কায়াকল্প অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। এ ছাড়াও জেলার 30টি সিএইচসি ও পিএইচসি এবং 33টি এইচডব্লুসি এই বছর কায়াকল্প অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে।

আপনাদের জানাতে পেরে ভালো লাগছে যে, আসামে দুইটি হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার এ বার এনকিউএএস সার্টিফিকেট পেয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো আমাদের জেলার চণ্ডীনগর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার। কাছাড়ে চলতি অর্থবর্ষে 1745 জন আশাকর্মীকে স্মার্ট মোবাইল দেওয়া হয়েছে। এই সময়সীমায় জেলায় 111টি সাবসেন্টারকে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারে উন্নীত করা হয়েছে।

গত অর্থবছরে কাছাড় জেলায় আবগারি দফতর বিরাট সাফল্য অর্জন করে। 185 কোটি 71 লক্ষ টাকা রাজস্ব বাবদ আদায় হয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সংগৃহীত হয়েছে 62 কোটি 6 লক্ষ টাকা।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, জেলায় পরিবহন বিভাগের রাজস্ব সংগ্রহ প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে জেলায় পরিবহন বিভাগ মোট 19 কোটি 25 লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে তা সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বেশি। গত চার মাসে মোট জরিমানা আদায় করা হয়েছে 1 কোটি 12 লক্ষ টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা প্রায় চারগুণ বেশি।

যে সব যানবাহনের ফিটনেস ফি অনেকদিন ধরে বকেয়া রয়েছে, তাদের ওই ফি পরিশোধে এখন ছাড়ের সুবিধা মিলছে। এই সুবিধা 15 অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। অনেকে পুরনো গাড়ি ড্যামারেজের জন্য আবেদন না করেই টিন-লোহার দোকানে বিক্রি করে দিয়েছেন। ড্যামারেজ না নেওয়ায় তাদের নামে কর-রাজস্ব-ফাইন জমছে। তা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্যও পরিবহন বিভাগ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করেছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে ওইসব পাওনা মিটিয়ে দিতে চাইলে 25 শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। তাই এই বিশেষ সুযোগ গ্রহণ করতে সরকারের তরফ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে৷

এখন প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাষীরা ক্ষতিপূরণ লাভ করেন। গত বছরের ভয়াবহ বন্যার দরুন কাছাড় জেলার 4308 জন চাষী বিমা কোম্পানির কাছ থেকে 1 কোটি 86 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধিতে চলতি অর্থ বছরে 31369 জন কৃষক আর্থিক সহায়তা লাভ করেছেন। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনে নেওয়ার প্রকল্পে রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। আগে 2040 টাকা কুইন্টাল দরে ধান কেনা হচ্ছিল। এখন তা 2183 টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বার পাম তেল উৎপাদনে আমাদের রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। সে জন্য কাছাড়ের দেড়শো হেক্টর জমিতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। চলতি বছরে 5000 হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কালাইন ব্লকের ক্রেগপার্ক টি এস্টেটে একটি অয়েল পাম নার্সারি স্থাপন করা হয়েছে। তারিণীপুরে তৈরি হয়েছে একটি হর্টিকালচারাল নার্সারি। বন্যাক্রান্ত কৃষকদের মধ্যে বিতরণের জন্য 50 হেক্টর শালি ধানের চারার কম্যুনিটি নার্সারি চলছে।

সদরঘাটে নির্মিত হয়েছে সয়েল অ্যান্ড ইনপুট টেস্টিং ল্যাবরেটরি। সোনাই এবং বাঁশকান্দি ব্লকে দুটি ট্রেনিং হল সহ নলেজ সেন্টার তৈরি প্রায় শেষের পথে। ক্যাপিটেল পয়েন্টের কাছে এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের কার্যালয় নির্মাণের কাজ চলছে।

কাছাড় জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের সরকার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। সেই লক্ষ্যে ফিস হ্যাচারি, বায়োফ্লক ইত্যাদির সংখ্যা লাগাতার বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় 11টি সেমি বায়োফ্লক চালু হয়েছে। তাতে মৎস্যজীবীরা উপকৃত হচ্ছেন। এই বছরেই দুইটি ফিন ফিস হ্যাচারি এবং দুইটি মিনি ফিস ফিড মিল চালু করা হয়েছে। এনইএইচ প্রকল্পে 18.25 হেক্টর জমিতে নতুন পুকুর খনন করা হয়েছে। তিনটি ফিস কিয়স্ক বসানো হয়েছে। 12টি আইস-বক্স বাহী ই-রিকশা এবং 11টি আইস-বক্স বাহী মোটর সাইকেল তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া, আরআইডিএফ প্রকল্পে 18টি তিন চাকার এবং 4টি চার চাকার রেফ্রিজারেটেড ফিস ট্রান্সপোর্ট ভেহিক্যাল আনা হয়েছে।

হস্ততাঁত ও বস্ত্র দফতর কাবুগঞ্জে হ্যান্ডলুম ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছে। প্রতি বছর অন্তত 15জন সেখানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। প্রশিক্ষণ কালে মাসে তাঁদের দেড় হাজার টাকা করে স্টাইপেন্ড দেওয়া হচ্ছে। আপনারা জানেন যে, হস্ততাঁত শিল্পীদের জন্য উইভারস মুদ্রা স্কিম চালু রয়েছে। 2023-24 বর্ষে এই স্কিমে ঋণ পেতে 5জন আবেদন করেছেন। বিভাগের তরফে সবকটি আবেদন ব্যাঙ্কে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কাছাড় জেলায় স্বনির্ভর নারী ফ্ল্যাগশিপ স্কিমের প্রথম পর্যায়ে 7,990 জন তাঁতীর আবেদনে অনুমোদন জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে 594 জন তাদের উতপাদিত 2873টি সামগ্রী নির্দিষ্ট পোর্টালের সাহায্যে বিক্রি করেন এবং সরকার তাদের সেই সামগ্রীর জন্য 6,37,155 টাকা তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করেছে। সে জন্য শিলচর ও লক্ষীপুরে দুটি প্রকিউরমেন্ট সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে 562 জন আবেদন করেছেন। তাঁদের মধ্যে 502 জনের আবেদন স্বনির্ভর নারী পোর্টালের অনুমোদন লাভে সমর্থ হয়েছে। এ ছাড়া, সোনাইর মঙ্গলপুরে ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের জন্য ভারত সরকারের বস্ত্র মন্ত্রকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

পূর্ত দফতরের বড়খলা-কাটিগড়া টেরিটোরিয়াল রোড ডিভিশন আসাম মালায় বড়খলা-কালাইন সড়কের 21 কিলোমিটার 378 মিটার রাস্তা জাতীয় সড়কের সম-পর্যায়ে নির্মাণ করতে চলেছে। আগামী আড়াই বছরের মধ্যে মহাসড়কের বড়খলা পয়েন্ট থেকে কালাইন বাজার পর্যন্ত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সড়ক নির্মিত হলে জোয়াই-বদরপুর ও ইম্ফল-বদরপুর সড়ক মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে।

এ ছাড়া, বড়খলা-কাটিগড়া টেরিটোরিয়াল রোড ডিভিশন মুখ্যমন্ত্রীর পাকা পথ নির্মাণ প্রকল্পে 32 কিলোমিটার 870 মিটার, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নত পাকা পথ নির্মাণ প্রকল্পে 15 কিলোমিটার 835 মিটার এবং মুখ্যমন্ত্রীর পথ নবীকরণ প্রকল্পে 29 কিলোমিটার 830 মিটার সড়ক নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। লক্ষীপুর টেরিটোরিয়াল রোড ডিভিশন 2023-24 অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত 21 কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছে। তিনটি আরসিসি সেতুর কাজও শেষ হয়েছে। শিলচর-উধারবন্দ রোড ডিভিশনের অধীনে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় 5 কিলোমিটার 570 মিটার রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। এসওপিডিজি এবং আরআইডিএফ প্রকল্পে মোট 25 কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। সেতু নির্মাণ হয়েছে দুটি। পুরাতন লক্ষীপুর রোডে বরাক নদীর ওপর বাদ্রীর অ্যাপ্রোচ নির্মিত হয়েছে।

বর্ডার এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে গুমড়া নাতানপুর পূর্ত সড়ক থেকে তারাপুর জামে মসজিদ পর্যন্ত আটশো মিটার রাস্তা আশি লক্ষ টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে। খেলমা পার্ট টুতে দুই ফেজে 89 লক্ষ টাকায় 1 কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বটেরচক পিএইচই থেকে আনন্দপুর 1300 মিটার রাস্তায় দুইটি কালভার্ট সহ সিসি ব্লক বসানো হয়েছে। সে জন্য খরচ হয়েছে 77 লক্ষ টাকা। বটেরচক, লেবারপুতা, চণ্ডীনগর, কিন্নখাল ও হরিনগর বিএসএফ চেক পোস্টে পাঁচটি শৌচাগার নির্মাণ হয়েছে 16 লক্ষ টাকা ব্যয়ে। এ ছাড়া, 38 লক্ষ টাকায় খুলিছড়া ও লায়লাপুরে জওয়ানদের জন্য দুইটি অস্থায়ী ব্যারাক তৈরি করা হয়েছে। ধলাইখাল এবং তুলারতল বিওপিতে ব্যারাক, কিচেন, ডাইনিং হল, টয়লেট ব্লক নির্মিত হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে এক কোটি টাকা।

জেলায় অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার সুবিধা পাচ্ছেন 1 লক্ষ 16 হাজার 720 জন। প্রায়োরিটি হাউসহোল্ডের সুবিধা পান 9 লক্ষ 77 হাজার 798 জন। রেশন কার্ডের জন্য আরও দুই লক্ষ নতুন আবেদন বিবেচিত হয়েছে।

কাছাড়বাসী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণদানের সুপারিশ, ভর্তুকি এবং বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে চলেছে। 2022-23 অর্থবর্ষে প্রাইম মিনিস্টারস এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রামে কাছাড়ে মোট 94 জনের প্রকল্পে ব্যাঙ্কের মঞ্জুরি মিলেছে। নর্থইস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট স্কিমে 29 জন আবেদন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে 22 জনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এর মধ্যে 11 জনের আবেদন রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য কমিশনারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। আসাম টি ইন্ডাস্ট্রিজ স্পেশাল ইনসেনটিভ স্কিমে 7টি আবেদন পাওয়া গিয়েছে। জেলা শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র সবকটি আবেদন রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য কমিশনারের কাছে পাঠিয়েছে। 2019 সালের আসাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট পলিসির সুবিধা গ্রহণের জন্য 11টি আবেদন পাওয়া গিয়েছে। 10টিই রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য কমিশনারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফরোয়ার্ড করা হয়েছে।

জলসেচ বিভাগ প্রধানমন্ত্রী কৃষিসেচ যোজনার হর ক্ষেত কো পানি-র অধীনে মোট 986টি নলকূপ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করেছে। এর মধ্যে 739টি ইলেকট্রিক্যাল এনার্জিতে এবং 247টি সোলার এনার্জিতে চলছে। তাতে জেলার 3,544 হেক্টর জমিতে একাধিক ফসল উতপাদনের সুব্যবস্থা হয়েছে। এ ছাড়া, এসওপিডির অধীনে আরও 20টি হাইব্রিড টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। এই কাজ শেষ হলে বছরে আরও আশি হেক্টর কৃষিজমিতে জলসেচের বন্দোবস্ত হবে।

রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার সাধন করে বহুসংখ্যক উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন আসাম সরকার সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। রাজ্যের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া, সবচেয়ে দুর্বল মানুষটিকেও টেনে তুলতে হবে, এই লক্ষ্যে যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে। অরুণোদয় প্রকল্পে 19 লক্ষের বেশি মানুষ মাসে 1250 টাকা করে পাচ্ছেন। এ বার এই সংখ্যা 27 লক্ষে বৃদ্ধি পেতে চলেছে। সরকারি কর্মচারীদের অধিকাংশের গাড়ি কেনার স্বপ্ন থাকে। এই স্বপ্ন পূরণে গ্রহণ করা হয়েছে আসাম বাহন প্রকল্প এবং আপন বাহন প্লাস নামের দুটি প্রকল্প। কৃষি আয়কর আইনের অধীনে যে রেহাই ব্যবস্থা রয়েছে, তা আরও তিন বছর চা শিল্পের জন্য বলবত থাকবে।

আগে বার্ষিক আড়াই লক্ষ টাকার অধিক উপার্জনকারীরা খাদ্য নিরাপত্তা আইনের সুবিধা পাওয়ার অধিকারী ছিলেন না। এখন তা আসামে চার লক্ষ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে। দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে 3,317 কিলোমিটার বনভূমি জবরদখল মুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বনপ্রাণীর হারানো বাসস্থান পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এ বার এক কোটি বৃক্ষরোপণের জন্য আসামে অমৃত বৃক্ষ আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমার অনুরোধ পরিবেশ, প্রকৃতি এবং সর্বোপরি আমাদের নিজেদের উত্তর প্রজন্মের বাঁচা-বাড়ার স্বার্থে, আসুন সবাই তাতে সামিল হই, এই আন্দোলনকে সার্থক করে তুলি।

এই সরকারের সাফল্যের সমস্ত কথা তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে বললে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই আমার বক্তৃতা আর দীর্ঘ করছি না। আবারও আপনাদের স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি।

জয়হিন্দ, বন্দেমাতরম।

ভারতমাতা কি জয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker