Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News

প্রস্রাবের রঙ নীল! অতি বিরল জীবাণুর সন্ধান কাছাড়ে
Violet urine! Patient detected in Cachar with very rare disease

তিন চিকিৎসকের গবেষণা, এমন ঘটনা পৃথিবীতেই মাত্র দুই-তিনজনের হয়েছে

ওয়েটুবরাক, ১৭ মার্চ : আশি বছরের বৃদ্ধা অনেকদিন ধরেই কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ভুগছিলেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণও ঘটে একবার। সে থেকে শয্যাশায়ী। শরীরের ডানদিক অসাড়। জ্বর-জ্বর ভাব লেগেই থাকে। এ সব নিয়েই পরিবারের সদস্যরা চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু একদিন ইউরিন ব্যাগে নজর পড়তেই সব চিন্তা মাত্রা ছাড়ায়। নীল রঙের প্রস্রাব ! কোনও ভাবে কেরোসিন ঢুকে পড়েনি তো ! ভালো করে নেড়েচেড়ে দেখা যায়, প্রস্রাব ছাড়া কিছুই ঢোকার সুযোগ নেই ব্যাগে। প্রস্রাবের রঙ বদলের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধা পাগলের মতো আচরণ করতে থাকেন।

দক্ষিণ কাছাড়ের ওই পরিবারের সদস্যরা তাঁকে নিয়ে গেলেন শিলচরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। শুরু হয় চিকিৎসা। সঙ্গে পরীক্ষানিরীক্ষা, গবেষণা। ওষুধ পরার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই অবশ্য প্রস্রাবের রঙ স্বাভাবিক হয়ে যায়। রোগী ক্রমে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

কিন্তু কেন এমনটা ঘটল, এই প্রশ্নই তাড়া করে বেড়ায় তিন চিকিৎসককে। সুব্রত ভট্টাচার্য, রাজীব দে এবং রত্নদীপ নাথ শুরু করলেন গবেষণা। এক বছর পরে তাঁরা নিশ্চিত হন, সেরিসিয়া মেজেনসাস নামে এক অতি বিরল জীবাণু আক্রমণ করেছিল বৃদ্ধাকে।

ডা. ভট্টাচার্য বলেন, অশীতিপর রোগী আসলে পারপল ইউরিন ব্যাগ সিনড্রমে (পাবস) আক্রান্ত হয়েছিলেন। নামেই স্পষ্ট, এই রোগে প্রস্রাবের রং বেগুনি হয়ে যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নীল হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া, পাবসে আক্রান্ত রোগীর প্রস্রাবে অ্যালকেলাইন থাকে। কিন্তু বৃদ্ধার প্রস্রাব ছিল অ্যাসিডিক। গবেষণায় তাঁরা জানতে পারেন, খাদ্যতালিকায় ট্রিপটোফেন বেশি থাকলে সেটা পাকস্থলী, যকৃত ও প্রস্রাবনালীতে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দু ধরনের রঙ তৈরি করে। এর মধ্যে সেরেসিয়া মেজেনসাসে আক্রান্ত হলে প্রস্রাব নীল রঙের হয়ে যায়।

ভট্টাচার্যের দাবি, অসমে এটিই পাবসের প্রথম ঘটনা। উত্তর-পূর্বে তৃতীয়। এর আগে ইম্ফল এবং শিলঙে দুজন রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছিল। আর সেরেসিয়া মেজেনসাসের কথা বললে সারা পৃথিবীতেই দুই থেকে তিনজন তাতে আক্রান্ত হয়েছেন। “জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ডায়গনোস্টিক রিসার্চ”-এর ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় তাঁদের গবেষণার কথা প্রকাশিত হয়েছে। এর পরই চিকিৎসক-গবেষক মহলে এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়৷ তাঁদের এই গবেষণা চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, আশাবাদী তিন চিকিৎসক সুব্রত ভট্টাচার্য, রাজীব দে এবং রত্নদীপ নাথ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker