Barak UpdatesBreaking News

করিমগঞ্জে দত্তক নিয়ে যৌন নির্যাতন! রিপোর্ট চাইল কেন্দ্র
Child abused after adoption! Centre seeks report

৬ জানুয়ারিঃ দত্তকের কথা শুনে স্বপ্না (পরিবর্তিত নাম) খুব খুশি হয়েছিল। চোখের সামনে ভাসছিল, বড় বাড়ির মেয়ে হবে। নতুন বাবা জলসম্পদ দফতরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার, মা বিদ্যুত দফতরে চাকরি করেন। এখন রত্না বোঝে, নিজের মায়ের মৃত্যুর পর বিমাতা, সতভাইয়েরা অন্যের বাড়িতে কাজের জন্য দিয়ে দিলে খেতে পেতো ঠিকই। সম্ভ্রমেও সমস্যা হয়নি। কিন্তু পালক পিতার কাছে যে সম্ভ্রম বাঁচানোই দায়।

স্বপ্নার মা-বাবা নেই। সত-ভাইয়েরা অন্যের বাড়িতে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল। বিষয়টি চাইল্ডলাইনের নজরে আসতেই তারা তাকে উদ্ধার করে। নিয়ম মেনে কাছাড় চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে হাজির করানো হয়। কমিটিই নিবেদিতা নারী সংস্থা নামে শিলচরের এনজিওকে তার দেখভালের দায়িত্ব দেয়। তখন তার বয়স ১১ বছর। কাগজপত্র অন্তত তাই বলে!

দুই বছর পরে তাকে দত্তক নিতে চায় করিমগঞ্জের নিঃসন্তান দম্পতি গোপাল দাস, লাকি কলিতা। দফায় দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি সন্তুষ্ট হয়ে নিবেদিতা-কর্ত্রীকে নির্দেশ দেয়, কিশোরীকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দিতে। ছয়মাস নজরদারির পরই দত্তক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। এর আগে একদিন মেয়ে কেমন আছে দেখতে গেলে কিশোরী অভিযোগ জানায়, গোপালবাবু তাকে মাঝেমধ্যেই জড়িয়ে ধরেন। শরীরে তেল মালিশ করে দিতে বলেন। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যরা সেদিন উভয়পক্ষকে বুঝে চলতে পরামর্শ দিয়ে আসেন। কিছুদিন পর লাকিদেবী তাকে নিয়ে কমিটির সামনে উপস্থিত হন। পাল্টা অভিযোগ, মেয়েটি একেবারে সমাজে চলার উপযুক্ত নয়। আচার-আচরণ কিছুই জানে না। জিজ্ঞাসাবাদে কিশোরীটি বলে, নতুন বাবাকে তার একদম ভাল লাগে না। আপত্তি করলেও শরীরের যেখানে-সেখানে হাত দেন। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি ফের তাকে নিবেদিতা নারী সংস্থায় পাঠিয়ে দেয়।

সংস্থার সচিব দিবা রায় জানান, তিনি তখন তাকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে পরীক্ষা করালে ধরা পড়ে, সে যৌন নির্যাতনের শিকার। পরে মেয়েটিই জানায় নতুন বাবার নানা কীর্তি। মাকে জানিয়েও লাভ হয়নি।  তাই দুইজনকেই অভিযুক্ত করে শিলচর থানায় এফআইআর দেন তিনি। দিবা রায়ের অভিযোগ, পুলিশ এমন একটি অভিযোগকে গুরুত্ব দেয়নি। শিলচর থেকে মামলাটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় করিমগঞ্জে। তারা অভিযুক্তকে গ্রেফতারের বদলে উঠেপড়ে লাগে মেয়ের বয়স নিরূপণে। সেই সুযোগে অভিযুক্ত আগাম জামিনের আবেদন করেন। পুলিশ পকসো (প্রটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস অ্যাক্ট)-র উল্লেখ না করায় ভারতীয় ফৌজদারি কার্যবিধিতে তার অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর হয়।

এ বার ক্ষিপ্ত হন দিবা রায়। তিনি বিষয়টি কেন্দ্রীয় শিশু ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গাঁধীর নজরে নেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিঠি লিখেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে। ওই সূত্রে শিশু ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনস্থ সেন্ট্রাল অ্যাডাপ্ট রিসোর্স এজেন্সি-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার দীপক কুমার করিমগঞ্জের জেলাশাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন। জেলাশাসক প্রদীপ তালুকদার জানান, তিনি এখনও কোনও চিঠি পাননি।

করিমগঞ্জের পুলিশ সুপার গৌরব উপাধ্যায় বলেন, মেয়েটি ১৮-উত্তীর্ণ বলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রিপোর্ট দিয়েছে। তাই পকসো এ ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। তবে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে দেন তিনি। পুলিশ সুপার উপাধ্যায় বলেন, একজন ডিএসপি-কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ২৩ জানুয়ারি ফের মামলাটি আদালতে উঠবে। সে দিন অভিযুক্তের অন্তর্বর্তী জামিনের মেয়াদ ফুরোবে। পুলিশ সে দিনই তাকে আদালত থেকে গ্রেফতার করে আনার চেষ্টা করছে।

রাজ্য পুলিশ এ ভাবে সাফাই গাইলেও কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সিটির চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার দীপক কুমার তাদের উপর ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, পুলিশ কেন তার বয়স নিরূপণের জন্য অস্থির হয়ে উঠল। তিনি জেলাশাসকের উত্তরেও সন্তুষ্ট নন। বলেন, চিঠি না পাওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না। মন্ত্রীর অফিস থেকেও পৃথক চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠির খোঁজ করলেও তিনি মন্ত্রীর অফিসে একই বার্তা পাঠান, কোনও চিঠি এখনও পাননি।

এ দিকে, বুধবার পকসোর গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ১৮-অনূর্ধবদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তাতে বেড়ে গিয়েছে দিবা রায় বনাম গোপাল দাস মামলার গুরুত্বও।

English text here

Related Articles

2 Comments

  1. শিলচরের অটোচালকরা তাদের অবৈধভাবে পাশে দুজন যাত্রী বসান, যা পরিবহন আইন বিরুদ্ধ , পরিবহন বিভাগের উচিত শীঘ্রই এই অবৈধ যাত্রী বহন বন্ধ করা।

    1. DTO, Police as well as District Administration can not deny/ over look their duty and responsibilities……but they support such illegal practice, shame…….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker