AnalyticsBreaking News

হাজেলা চাইলেন বলেই পাঁচ নথি বাদ !

          প্রণবানন্দ দাশ

  • ভারতবর্ষের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের সর্বশেষ আশ্রয় হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। এন আর সি-র রাজ্য সমন্বয়কারী প্রতীক হাজেলা নিছক একজন সরকারি আমলা। এর বেশি কিছু নন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত তাকে Extra Constitutional Authority-র পর্যায়ে স্বীকৃতি দিচ্ছে। তিনি বললেন, ৫টি নথি বাদ দিতে হবে, সুপ্রিম কোর্ট তাতেই সিলমোহর দিয়ে দিল! এখানে কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও গণ সংগঠনের অভিমতের কোনও মর্যাদাই নেই? সুপ্রিম কোর্ট যদিও বলছে, আগামী ২৩ অক্টোবরের শুনানিতে তারা ওই ৫টি নথি নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেবেন। কিন্তু ততক্ষণে তো দাবি জানানোর এক মাস কেটে যাবে। সিদ্ধান্ত যদি নিতেই হয় তবে বুধবার কেন নেওয়া হল না? কেন আরও একমাস ঝুলিয়ে রেখে চল্লিশ লক্ষ মানুষকে বিনিদ্র রজনী কাটাতে বাধ্য করা হল?
  • হাজেলার প্রস্তাবে সুপ্রিম কোর্ট যে ৫টি নথি বাদ দিয়ে দাবি জানানোর কথা বলছে তাতে ১৯৫১-র এনআরসি-ও রয়েছে। তবে কী হাজেলার দৃষ্টিতে ওই এনআরসি অবৈধ? যদি তা-ই হয়ে থাকে তবে ওই নথি সহ আরও ৪টি নথি দিয়ে যাদের নাম প্রথম ও সম্পূর্ণ খসড়ায় উঠল তারা কী করে বৈধ হবেন?
  • কেউ যদি মনে করে থাকেন প্রতীক হাজেলা একক সিদ্ধান্তে ওই ৫টি নথি বাতিলের আর্জি সুপ্রিম কোর্টে দিয়েছেন, তবে তিনি ভুল করবেন। হাজেলার পেছনে অত্যন্ত প্রভাবশালী কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের নিশ্চিত মদত রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য হাজেলাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। হয়তো অনেকের মনে আছে। ওইদিন থেকেই সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে হাজেলার কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। অনেকেই হয়তো ‘হাজেলা উচিত শিক্ষা পেয়েছে” বলে খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয়, তাতে তাঁর ভালোই হল। কারও কাছে কোনও জবাবদিহি করার আর প্রয়োজন থাকলো না। নিজের ইচ্ছে খুশি তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। না হলে এটা ভাবা যায়, একটি গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকত্বের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না! মানুষ তাহলে কোথা থেকে এনআরসি সংক্রান্ত খবর পাবেন? হাজেলাকে কোনও প্রশ্ন করাও যাবে না। আমরা কি কোনও স্বৈরতন্ত্রে বসবাস করছি?

আমার মনে হয়, এখন আর চুপ করে বসে থাকার দিন শেষ। কথা বলতে হবে মানুষকে। আওয়াজ জোরদার করতে হবে, প্রয়োজনে গোটা মামলা ৫ সদস্যের বেঞ্চে পাঠানো হোক। প্রতীক হাজেলাকে অবিলম্বে এনআরসি প্রক্রিয়া থেকে ছেঁটে ফেলা হোক। ভিন রাজ্যের কোনও সিনিয়ার আমলাকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এবং যে নথি মেনে গোটা এনআরসি প্রক্রিয়া হয়েছে, সেইসব নথিই দাবি পর্যায়ে বৈধ রাখতে হবে। মানুষের নাগরিকত্ব প্রমাণে প্রয়োজনে আরও যে কোনও বৈধ নথিকে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে।

এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিত, এনআরসি কোনও মানুষের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া নয়। এটা মানুষের নাগরিকত্ব প্রমাণের একটা সুযোগ। তাই যে কোনও অবস্থাতেই সেই সুযোগ সুনিশ্চিত করতে হবে।

(মূল লেখার সম্পাদিত অংশ)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker