Barak UpdatesHappeningsBreaking News
শিলচরের ৯০ শতাংশ মানুষ নিজের ঐতিহ্যের কথা জানেন না, লিখেছেন শ্বেতা রায়
ওয়েটুবরাক, ২ মে : গ্লোবালাইজেশনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেকে স্মার্ট বানানোর চেষ্টায় নিজের শহর থেকেও প্রিয় হয়ে উঠছে সেসব শহরগুলো, যেখানে চারপাশে শুধু কংক্রিট আর কংক্রিটের দেওয়াল। নিজেদের জায়গার সমৃদ্ধ ইতিহাস অনেকেই ভুলতে বসেছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন ন্যূনতম তথ্য জানার জন্যও অনেক অনেক মানুষের কাছে ছুটতে হবে, অনেক বইপত্তর ঘাটতে হবে৷ তাও হয়তো হাতের নাগাল পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র এনআরসি কিংবা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের অস্তিত্বের লড়াই নয়, নিজেদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখাও আমাদের অস্তিত্বের লড়াই।
গত ১৮ই এপ্রিল ছিল বিশ্ব ঐতিহ্য দিবস। এই বিশেষ দিনটিকে কেন্দ্র করে লিও ক্লাব অফ শিলচর গ্ৰেটারের হয়ে আয়োজন করা হয়েছিল এক কুইজ ফেস-অফের, যেখানে বরাক উপত্যকার ঐতিহ্যকে ঘিরে থাকে কিছু প্রশ্ন। সেদিনের অভিজ্ঞতায় আমি বলতে বাধ্য, ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ আমাদের উপত্যকার ঐতিহ্যের ব্যাপারে অবগত নন৷ তারা কিছু জানার প্রয়োজনও বোধ করে না। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার দায়ভার শুধু সমাজের প্রবীণদের নয়। কিংবা সেই সব শিল্পীদের নয়, যারা তাদের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছেন স্থানীয় সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
ঐতিহ্যের তথ্য বহন করে নিয়ে যাবার দায়িত্ব অবশ্যই পরবর্তী প্রজন্মেরও৷ এই বিষয়টা যতদিন না সকল তরুণরা বুঝতে পারছে, এগিয়ে আসছে, ততদিন হয়তো আমরা আমাদের উপত্যকাকে ঠিক ভাবে জানতে পারব না। ” তোমাদের উপত্যকায় এমন কী আছে?” এই প্রশ্নটা কেউ করলে, চুপ করে না থেকে উত্তর তখনই দিতে পারব, যখন আমরা অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্ৰামে যোগ দেব। এই সংগ্রাম কোনও কঠিন সংগ্রাম নয়। নিজেদের উপত্যকাকে অল্প জানার চেষ্টা, একে নিয়ে চর্চা করা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম গল্পের আকারে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে পৌঁছে দেওয়া। এটাই শুধু দাবি, প্রত্যাশা৷
এবার আসা যাক, আমার সে দিনের প্রশ্নের তালিকায়৷ আপনাদের সঙ্গেও একবার কুইজ হয়ে যাক।
১. শিলচরের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাকে স্মরণ করা হয় ?
উঃ ক্যাপ্টেন থমাস ফিশার।
[ ১৮৩২ সালে শিলচর শহর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল৷ তিনিই কাছাড়ের সদর দফতর শিলচরের জানিগঞ্জে স্থানান্তরিত করেছিলেন। ]
২. শিলচর শব্দের অর্থ কি?
উঃ শিল =পাথর এবং চর=তীর/দ্বীপ
[ আদিকালে বরাক নদীর তীরে ছিল ব্যবসার কেন্দ্রস্থল। সেখানে জাহাজ থেকে মালপত্র নামানো হত। নদীর তীরে ছিল অনেক পাথর। আর সেই থেকে উঠে আসে নাম শিলচর]
৩. কাছাড়ের শেষ রাজা কে ছিলেন?
উঃ রাজা গোবিন্দ চন্দ্র।
[ ১৮৩০ সালের ২৪ এপ্রিল শেষ কাছারি রাজা গোবিন্দ চন্দ্রকে হরিটিকরে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচারকদের সহায়তায় একদল রাষ্ট্রদ্রোহী হত্যা করেছিল। ]
৪. রাজা গোবিন্দ চন্দ্রের সময়ে কাছাড়ের রাজধানী কোথায় ছিল ?
উঃ খাসপুর
[কাছাড় ছিল বৃহত্তর কাছারি রাজ্যের একটি অংশ। রাজা গোবিন্দচন্দ্র সময়ে রাজধানী ছিল খাসপুরে৷ ]
৫. বিখ্যাত সাপনালাটি কোথায়?
উঃ গান্ধীবাগ ( শহীদ বেদীর পাশে)
[ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই এলাকাটি ছিল একটি নিচু জলাভূমি। কামিনীকুমার চন্দ পৌরসভার প্রথম ভারতীয় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে একটি সাপের মতো লেক তৈরি করেন এবং খনন করা মাটিতে চারপাশের নিচু জমি ভরাট করেন। সেটিই স্নেক চ্যানেল বা “সাপনালা”৷ এর পাশে একটি সুন্দর বাগানও করা হয়েছিল।]
৬. নোবেল পুরস্কার প্রাপক কোন ব্যক্তি বরাক উপত্যকা পরিদর্শন করেন ?
উঃ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
[ সিলেট যাবার সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বদরপুর রেল স্টেশনে কিছু সময় কাটিয়ে ছিলেন। তাঁর লেখা ‘শেষের কবিতা’য় উল্লেখ রয়েছে আমাদের শহরের নাম। ]