Barak UpdatesHappeningsBreaking News

রাজ্যের অর্থনীতিতে কাছাড়ের গুরুত্ব ক্রমে বাড়ছে, বললেন পরিমল শুক্লবৈদ্য

স্বাধীনতা দিবসে শিলচরে আয়োজিত সরকারি অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর হুবহু ভাষণ

শ্রদ্ধেয় নাগরিকবৃন্দ,

আজ ভারতের ৭৬-তম স্বাধীনতা দিবস। এই বিশেষ আনন্দঘন মুহূর্তে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। সেইসঙ্গে শ্রদ্ধা জানাই সমস্ত বীর শহিদদের প্রতি, যাঁদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। আপনারা সবাই জানেন, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের দেশ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের কবল থেকে মুক্ত হয়, লাভ করে বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার সুরক্ষায় যারা প্রাণপাত পরিশ্রম করে চলেছেন, তাঁদের প্রতি আমার অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জানাই। আজ স্বাধীনতা দিবসের এই পুণ্যলগ্নে আমি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর প্রতি, তিনিই ব্রিটিশদের রক্তচক্ষুর বিপরীতে অহিংস নীতিতে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এর ফলে ব্রিটিশ শাসক ভারতবর্ষ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

শ্রদ্ধা জানাই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে, তিনি আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করে ব্রিটিশের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজকের দিনে স্মরণ করি সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, বিপিনচন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, উল্লাসকর দত্ত, অরুণকুমার চন্দ, শ্যামাচরণ দেব, মণিরাম বরুয়া, শচীন্দ্রমোহন দত্ত, কনকলতা বরুয়া, পিয়ালী ফুকন, কুশল কোঁয়র প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের। এখানে শুধু কয়েকজনের নামোল্লেখ করলেও আমি আমার ব্যক্তিগত তরফে এবং সরকারের তরফ থেকে সকল স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই।

আপনারা সকলেই নিশ্চিতভাবে লক্ষ্য করেছেন, বর্তমান সরকার রাজ্য জুড়ে জনগণের সেবায় নানা কল্যাণকর প্রকল্প হাতে নিয়ে চলেছে। মন্ত্রী-আমলারা সবাই ঘনঘন বিভিন্ন অঞ্চল সফর করছেন। সে জন্য জনগণের সঙ্গে মন্ত্রী-আমলাদের সরাসরি সম্পর্ক গড়ে উঠছে। আর এরই প্রতিফলন ঘটছে সরকারের সিদ্ধান্তে, কাজকর্মে। আমরা ভাগ্যবান যে, ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মতো একজন মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছি। তাই আমাদের সুখে-দুঃখে, আনন্দে দুর্যোগে তিনি সশরীরে উপস্থিত হন। আর মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রতি মুহূর্তে যাবতীয় কাজকর্মের তদারকি করেন, বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রশাসনযন্ত্রকে সারাক্ষণ সক্রিয় থাকতে হয়। বন্যার দিনগুলিতে আমরা দেখেছি, তিনি এক সপ্তাহে তিন-তিনবার শিলচরে ছুটে এসেছেন। জলে নেমে আমাদের খোঁজখবর নিয়েছেন। গিয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। বন্যার জল নেমে যাওয়ার পরও তাঁর চিন্তা যায়নি। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলাশাসকদের ভিডিয়ো কনফারেন্সে নির্দেশ দিলেন, শিবিরে থাকাকালে পর্যাপ্ত রেশন সামগ্রী দেওয়া হোক।

রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষেপে কিছু কথা তুলে ধরছি। রাজ্যে নিরাপত্তা জনিত পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গত ৩ দশক থেকে বহাল থাকা ১৯৫৮ সালের সশস্ত্র বাহিনী (বিশেষ অধিকার ) আইন ২০২২-র ১ এপ্রিল থেকে রাজ্যের ২৩টি জেলা এবং মহকুমায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমসমূহ তীক্ষ্ণভাবে নিরীক্ষণ করে পুলিশ বিভাগ থেকে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কাজ শুরু হয়েছে। আলফা (স্বাধীন)-এ যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে ফেসবুকে দেওয়া ৩৫৬টি পোস্ট পুলিশ বিভাগ থেকে সনাক্ত করা হয়েছে এবং কাউন্সেলিঙের মাধ্যমে এর মধ্য থেকে ১৯৩ জন যুবক-যুবতীকে উগ্রপন্থী সংগঠনে যোগদান করা থেকে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। রাজ্যে সক্রিয় থাকা মৌলবাদী এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠন সমূহের কার্যকলাপের উপর রাজ্য পুলিশ বিভাগ থেকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।

গত ৪ মার্চ এবং ১৪ এপ্রিল বরপেটা পুলিশ আল কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের ১২ জন সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের সঙ্গে জেহাদী এবং মৌলবাদী সম্পর্কিত সংবেদনশীল নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তভার রাষ্ট্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
রাজ্য সরকার অবৈধ ড্রাগস এবং সরবরাহকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত রাজ্যে ৫৮৯১ জনকে অবৈধ ড্রাগ ব্যবসায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ১১২.৬৯৯ কেজি হেরোইন, ৩১২৯৪.৭৬৫৮ কেজি গাঁজা এবং ২১০.৮১৯৭৬৫২ কেজি আফিং বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাজেয়াপ্ত এইসব সামগ্রীর বাজার মূল্য আনুমানিক ৭৫১.০৬ কোটি টাকা।

রাজ্যের সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিআইডির মুখ্য কার্যালয়ে জালিয়াতির অনলাইন টাকা লেনদেনের বিরুদ্ধে নাগরিকদেরকে সহায়তার জন্য হেল্পলাইন নম্বর ১৫৫২৬০ whatsapp নম্বর ৭০৯৯০৩৩৪৮৯ চালু করা হয়েছে। এছাড়াও দুইটি ওয়েবসাইট www.cyberpolice.nic.in এবং www.cybercrime.gov.in চালু আছে।

রাজ্যে শিক্ষা খন্ডে সরকার থেকে নতুন বিদ্যালয়, স্নাতক মহাবিদ্যালয় স্থাপনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। চা বাগান অঞ্চলে মোট ১১৯টি হাই স্কুলের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে এবং এই বছর ৯৭টি চালু করা সম্ভব হয়েছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহে মহিলাদের উন্নয়ন সাধনে সরকার রাজ্যের নয়টি সংখ্যালঘু জনবসতিপ্রধান স্থানে মহিলা মহাবিদ্যালয় স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এগুলি নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে বর্তমানে আছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে ২১টি আদর্শ আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে।
রাজ্য সরকার থেকে বিভিন্ন সড়ক এবং সেতু নির্মাণের প্রকল্প রূপায়ণ করে সড়ক নির্মাণের অগ্রাধিকার অব্যাহত রাখা হয়েছে। রাজ্যে ১৩,৭৪৭টি সংযোগহীন স্থানকে সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে পথ সংযোগের সুবিধা করে দিতে সরকার থেকে অনুমোদন জানানো হয়েছে। অসমমালা কর্মসূচির অধীনে রাজ্যে রাষ্ট্রীয় এবং জেলার প্রধান পথ সমূহের উন্নয়ন সাধন করে এই গুলিকে দুই লেন যুক্ত পথে উন্নীত করার প্রয়াস চলছে।


মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজ্যে স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে রাজ্যে মিশন অমৃত রূপায়ণ করার জন্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প রূপায়ণে প্রতিটি জেলায় ৭৫টি করে অমৃতসরোবর খননের কাজ চলছে। ২০২৪ সালের মধ্যে সকলের জন্য গৃহের সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে রাজ্যে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ২০,৮৪,০৭০টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। ভূমিহীনদের থাকার সুবিধা করে দিতে বঙ্গাইগাও কাছাড়, চরাইদেও, ধুবড়ি, ডিব্ৰুগড়, হাইলাকান্দি, লখিমপুর, মরিগাঁও এবং নগাঁও–এই নয়টি জেলায় প্লাস্টার হাউস নির্মাণ করার একটা নতুন প্রচেষ্টা হাতে নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সামাজিক সাহায্য কর্মসূচির অধীনে মোট ২৩.৮৩ লক্ষ বৃদ্ধ পেনশন, বিধবা পেনশন, দিব্যাঙ্গ পেনশন রাজ্যে দেওয়া হচ্ছে। আসাম রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা অভিযানের মাধ্যমে রূপায়ণ করা কনকলতা মহিলা সবলীকরন যোজনার অধীনে মোট ২.৫৫ লক্ষ আত্মসহায়ক গোষ্ঠীকে ৩৯৭.৭৪ কোটি টাকার রিভলভিং ফান্ড দেওয়া হয়েছে এবং মোট ৪৪৫.৬৫ কোটি টাকার মূলধনী রাজসাহায্যের প্রত্যেককে ৫০০০০ টাকা করে ৮৯,১৩০ আত্মসহায়ক গোষ্ঠীকে অর্থ দেওয়া হয়েছে।

২০১৩ সালের রাষ্ট্রীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনে ২০২২ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্য ২,৩৯,৪৫,০৩৪ জন লোককে বিনামূল্যে চাল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬,৮৬,১১০টি অন্তোদয় অন্ন যোজনার পরিবার এবং ৫১,২২,২১৬টি প্রায়োরিটি হাউজহোল্ড পরিবার। অন্তোদয় অন্নযোজনার পরিবার ৩৫ কেজি করে এবং প্রায়োরিটি হাউজহোল্ড সমূহকে প্রতি মাসে ৫ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনার অধীনে রাজ্যে মোট ৩৪,৮২,৮১৯টি এলপিজি সংযোগ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে রাজ্য সরকারের
উদ্যোগে কৃষকদের কাছ থেকে ১৯৪০ টাকা ন্যূনতম মূল্যে মোট ৪,৩৩,৭৮৮ টন ধান ক্রয় করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে ৪২,২০৯ জন কৃষক আর্থিকভাবে উপকৃত হয়েছেন। রাজ্যে ৩৩ টি জেলায় মোট ১৮৪টি কেন্দ্রে ধান ক্রয় করা হয়। এ বছর রাজ্যে তিন লাখ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ কর্মসূচির অধীনে ২০২১-২২ বছরে রাজ্যের কৃষকদেরকে প্রত্যক্ষ লাভ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় ১,১৭১.৭৭ কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার অধীনে কৃষি বিভাগে ২০১৯ এবং ২০২০ বর্ষে ২.৬৫৭ লক্ষ কৃষককে ১৬১.৮ কোটি টাকা শস্য বিমার দাবি হিসাবে আদায় দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজ্যে ২২৬ কোটি টাকা শস্য বীমার প্রিমিয়াম আদায় দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সমগ্র গ্রাম উন্নয়ন যোজনার অধীনে এখন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ রাজসাহায্যে ১৬,১৯০টি ট্রাক্টর বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্যের জন্য ১৪,৩৫৪ হেক্টর কৃষি জমির ২,০০৯৯৪ জন কৃষককে ৪০,০০০ কুইন্টাল উন্নত মানের ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে।

২০২১ সালের ২৬ জুলাই সংঘটিত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পরে আসাম এবং মিজোরাম দুই রাজ্যেই ২০২১ সালের ৫ আগস্ট এক যৌথ প্রস্তাবে স্বাক্ষর করে। এর ফলে দুইটি রাজ্যের মধ্যে যানবাহন যাতায়াত স্বাভাবিক রাখতে সব প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর তারিখে নতুন দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় মন্ত্রী অতুল বরা এবং মন্ত্রী অশোক সিংহলের নেতৃত্বে আসাম সরকারের এক প্রতিনিধি দল গত ৯ আগস্ট আইজলে মিজোরামের গৃহ মন্ত্রী, রাজস্ব মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় মিলিত হন। দুই পক্ষই সীমান্তে শান্তি অটুট রাখার উপরে গুরুত্ব প্রদান করে এবং আগামী অক্টোবর মাসে গুয়াহাটিতে পরবর্তী পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

আসাম আন্দোলনে গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে দুই লাখ টাকা করে প্রদান করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই আন্দোলনে আক্রান্ত মহিলাদেরকে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রত্যক্ষ লাভ হস্তান্তর প্রক্রিয়া মাধ্যমে প্রদান করা হবে। আসামের মূল অসমীয়া মুসলমান সম্প্রদায় ক্রমে গড়িয়া মরিয়া দেশীয় চা জনজাতি সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত জলহা এবং সৈয়দদেরকে সনাক্ত করে তাদের স্বাস্থ্য, অর্থ অন্তর্ভুক্তিকরন, শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা বিকাশ, নারী সবলীকরণ এবং সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত লোকদেরকে জাতিগত প্ৰমাণপত্ৰ প্ৰদানের জন্য এসওপি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কেবিনেট থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রমাণপত্র সমূহ অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। জেলা পরিবহন আধিকারিকের কার্যালয়ে না গিয়ে পরিবহন সংক্রান্ত সেবা সমূহ লাভ করার জন্য ৪০টি আধার ভিত্তিক অনলাইন সেবা আরম্ভ করা হয়েছে। সিএম ট্রেনস অর্থাৎ সিএম ট্রান্সপোর্ট রেনডমাইজেশন এলোকেশন নেটওয়ার্ক সিস্টেম আরম্ভ করা হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সম্পর্কহীন সেবার জন্য অনলাইন আবেদনসমূহ পরীক্ষা এবং অনুমোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি বিধানসভা সমষ্টির ৫০ জন যুবক-যুবতীর জন্য গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সব বিধানসভা সমষ্টির মোট ৬৩০০ জন যুবক-যুবতীকে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

রাজ্যের মীন বিভাগে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য প্রকল্প রূপায়ণের ফলে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গেছে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ ঘোষনার অধীনে রাজ্যে মোট ১১,০২১.৯০ লাখ টাকার প্রকল্প ব্যয়ের অনুমোদন জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে মীন, পশুপালন এবং দুগ্ধ মন্ত্রণালয় নামে একটি নতুন মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। এই খন্ডে বিশেষ কিষান ক্রেডিট কার্ডের জন্য এখন নতুন কর্মসূচি শুরু হয়েছে। রাজ্যে ৭,৪২৭ জন সুবিধাভোগী ৪৬.৫৬ কোটি টাকার কেসিসি ঋণের অনুমোদন লাভ করেছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য গ্রুপ দুর্ঘটনা বীমা প্রকল্পের অধীনে মীন খন্ডে ১৮ বছর থেকে ৭০ বছর বয়সের ১ লক্ষ ৫৫ হাজার লোককে আওতায় আনা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু বা স্থায়ীভাবে সম্পূর্ণরূপে অক্ষম হওয়া লোককে ৫ লক্ষ টাকা, আংশিকভাবে পঙ্গু হওয়া লোককে আড়াই লক্ষ টাকা এবং দুর্ঘটনার ফলে চিকিৎসালয় ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। রাজ্যে প্রধান রাজস্ব উপার্জনকারী বিভাগ হিসাবে ২021-22 অর্থবছরে ১৯৩০.৬৭ কোটি টাকা আবগারি রাজস্ব সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে অবৈধ সুরার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ৩৩৫৭ জন লোককে গ্রেফতার এবং ২৯৭০৮৬ লিটার অবৈধ সুরা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ২৬,৪৭,৮০০ টাকার জরিমানা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে।

স্বাস্থ্য খন্ডে রাজ্যে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে আটটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ আছে। রাজ্যে আর ও সাতটি নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মাণের কাজ পূর্ণ গতিতে চলছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার অধীনে ১০৯ কোটি টাকা এবং অটল অমৃত যোজনার অধীনে কোটি টাকা ক্লেইম অ্যামাউন্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত চিকিৎসালয়ে পরিশোধ করা হয়েছে। এই দুইটি প্রকল্পের অধীনে মোট ২,৩৮,৪৭৭ জন সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। শিক্ষা বিভাগে ২০২২ সালে ৪,৫১,৪৮১ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক এবং ৩৭,৭৩,৬৪৫ জন পড়ুয়াকে বিনামূল্য ইউনিফরম দেওয়া হয়েছে। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে সামগ্রিক বিকাশ সাধনের উদ্দেশ্যে এসসিইআরটি থেকে একটি পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা হচ্ছে। আমরুত মিশনের অধীনে শিলচর সহ ১৫ টি প্রকল্পের কাজে রাজ্যে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এবং ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই প্রকল্পগুলির কাজ শেষ হবে। ফলে রাজ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ তরান্বিত হবে। অমৃত সরোবরের বিশেষ পর্যায়ের অধীনে পুনরুদ্ধারের জন্য ত্রিশটি জলাশয়কে নির্বাচন করা হয়েছে। ১৬.৬৬ কোটি টাকার অনুমোদিত ব্যয়ে তিনটি জলাশয়কে সিগনেচার প্রকল্প হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু কল্যাণে রাজ্যে ১০০০টি আদর্শ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এই আদর্শ কেন্দ্রগুলিতে শিশু উপযোগী টয়লেট, পৃথক পাকঘর, শিশুর ব্যবহৃত আসবাবপত্রের সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং জল জীবন মিশনের পানীয় জলের সুবিধা থাকছে। আসাম সরকার ২০২১ সালের ৩০ জুলাই থেকে খিলঞ্জিয়া এবং জনজাতি বিশ্বাস এবং সংস্কৃতি নামক একটি নতুন বিভাগ চালু করেছে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত জলজীবন মিশনের অধীনে ২৩,৩০,২৯৬টি গৃহে নলযুক্ত বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

শ্রদ্ধেয় নাগরিকবৃন্দ,

এবারে আমি কাছাড় জেলার সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যার কিছু চিত্র তুলে ধরছি। এই বিধ্বংসী বন্যায় ২৬৪২২টি পাকা বাড়ি ও ৫৪৩৭৪টি কাঁচাবাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫৩৮টি গোয়ালঘরও বন্যার দরুন নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা শীঘ্রই সরকার থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন। কী করে কাছাড়ে এমন বন্যা হলো, কী করে এত জল শহরে ঢুকে গেল, সে নিয়ে বিস্তারিত চর্চা হয়েছে। তবে আপনাদের জানাতে পেরে ভালো লাগছে যে, অস্থায়ী ভাবে হলেও বেতুকান্দি, ভাগাডহর, বড়জুরাই, বেরেঙ্গা রিং বাঁধ, বাদ্রীঘাট, উত্তর কৃষ্ণপুর, গোঁসাইপুর, চলিতাকান্দি, বাগপুর নিয়াইরগ্রাম, পেলাডহর প্রভৃতি এলাকা দিয়ে জল ঢোকার আর কোনও আশঙ্কা নেই। বন্যার সময় লক্ষ লক্ষ দুর্গত জনতাকে সাহায্যের জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে যে সব মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। এনজিও এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে যারা এগিয়ে এসেছিলেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। জেলা প্রশাসন, জেলা দুর্যোগ মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ, বিদ্যুত বিভাগ, খাদ্য ও গণবন্টন দফতর, পঞ্চায়েত সহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মী অফিসারদেরও সাধুবাদ জানাই।

বন্যার প্রসঙ্গ আসায় একটি কথা মনে করিয়ে দিই বন্ধুগণ, এখন সমস্ত সরকারি কাজকর্মে আধার কার্ড থাকা জরুরি হয়ে পড়েছে। একে সুরক্ষিত রাখবেন। এ পর্যন্ত জেলায় ১৭ লক্ষ ১৯ হাজার ৪৪৫ জন আধার কার্ড করে নিয়েছেন। অর্থাত আমাদের হিসেবে ৯৩.৪ শতাংশ মানুষ আধার কার্ড পেয়ে গিয়েছেন। বাকিরাও উপযুক্ত নথি দিয়ে আধার কার্ড করিয়ে নেবেন। আধার কার্ড ছাড়া রেশন পেতে সমস্যা হতে পারে। কারণ আমাদের সমস্ত রেশন কার্ড ডিজিটাইজড করা হয়েছে। হিসাব করে দেখা গিয়েছে, ১৩ লক্ষ ১৫  হাজার ৩৭৯ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৭ লক্ষ ৮০ হাজার ৯১৯ জনের নাম রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার লিঙ্ক করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর কাছাড় জেলায় ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৪১২জনকে আয়ুষ্মান ভারত পিএমজেওওয়াই কার্ড প্রদান করেছে। তাদের মধ্যে ১৭৬৩৯জন রোগী এই কার্ডের সুবিধা নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রমে এখানে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫১৯টি শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ৮৫২৫টি শিশুকে হৃদরোগজনিত সমস্যা, মারাত্মক অপুষ্টি এবং ঠোঁটকাটা, জিভ চেরা হিসেবে শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, কাছাড় জেলায় এখন চতুর্দিকে কাজ চলছে। কোথাও রাস্তা তৈরি হচ্ছে, কোথাও স্কুলের দালানবাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে, হচ্ছে আইসিইউ-ল্যাবরেটরি, আরও কত কী। বিস্তৃত বলতে গেলে অনেক সময় লাগবে, এত সময় নিয়ে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না। তাই কয়েকটি বড় কাজেরই উল্লেখ করছি। গত ৬ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে একটি সরকারি আইন মহাবিদ্যালয় নির্মাণকাজের শিলান্যাস হয়েছে। পূর্ত দালানবাড়ি বা বিল্ডিং ডিভিশন এখন এর নির্মাণকাজ শুরু করতে চলেছে। এ ছাড়াও লক্ষ্মীপুর সিভিল সাবডিভিশনে ২০২১-২২ বর্ষে বাইশ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। হয়েছে দুটি আরসিসি সেতুও। বরাক উপত্যকার জন্য পৃথক সচিবালয় তৈরির যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, সেই মিনি সচিবালয় নির্মাণের কাজও চলেছে।

রামনগর আইএসবিটি থেকে সোনাবাড়িঘাট পর্যন্ত ১২ কিমি ৭৫০মিটার দীর্ঘ শিলচর বাইপাসের কাজ আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাঝপথে জল ওঠা শুরু হলে সমস্যা দেখা দেয়। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পূর্ত দফতরের শিলচর এনএইচ ডিভিশন জোর গতিতে কাজ করে এখন একে সম্পূর্ণ চলাচলযোগ্য করে তুলেছে। সদরঘাটে বরাক নদীর ওপর নির্মিত সেতু সংস্কারের জন্য ৭ কোটি ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার কাজ ২০২০-২১ অ্যানুয়েল প্ল্যানে মঞ্জুর হয়েছে। শীঘ্র ওই কাজ উপযুক্ত প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার ডেকে সমঝে দেওয়া হবে। একই অ্যানুয়েল প্ল্যানে ৫৩ নং জাতীয় সড়কেও ২ কোটি ৫৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৪৫ টাকার কাজ মঞ্জুর হয়েছে। ওই কাজ এরই মধ্যে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সেখানে কাজ শুরু হবে। ৫৪ নং জাতীয় সড়কের শিলচর-লায়লাপুর অংশে ৮ কিলোমিটার ৮৭৬ মিটার রাস্তায় সিসি ব্লক বসানোর কাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ হতে চলেছে। এ ছাড়া, ধলাই ও সোনাই টেরিটোরিয়াল রোড ডিভিশন ১টি সেতু তৈরি করেছে। ১৩০ কিলোমিটার ৬৩০ মিটার রাস্তা বানিয়েছে। আরও দুইটি সেতু নির্মাণ, দুটি বাজার আধুনিকীকরণ এবং ১৭৭ কিলোমিটার ৬২০ মিটার রাস্তা তৈরির জন্য মঞ্জুরি মিলেছে৷ শীঘ্রই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। বড়খলা কাটিগড়া টেরিটোরিয়াল রোড ডিভিশনের অধীনে বরাক নদীর ওপর ৮ কোটি ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরসিসি সেতু নির্মাণের কাজ ৭৬ শতাংশ এগিয়েছে। ৩৩০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুতে দুধপাতিলের বাসিন্দারা সহজে শিলচরে যাতায়াতে সক্ষম হবেন। আসাম মালায় বড়খলা কালাইন সড়কের সংস্কার সাধন করা হচ্ছে। জাতীয় মানের সড়ক তৈরি হচ্ছে ২১ কিমি ৩৮৭ মিটার। সে জন্য ১১৫ কোটি টাকা খরচ হবে।

ধলাই ও লক্ষ্মীপুরে মিনি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের জন্য ১২ কোটি টাকা করে ২৪ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে ওই কাজ শীঘ্র শুরু হবে। এ কথা উল্লেখ করতে আমার বড় ভালো লাগছে যে, এ বার সিনিয়র ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নুরুদ্দিন ট্রফি জিতেছে আমাদের জেলা ক্রিকেট দল। ওই টিমের প্রত্যেক ক্রিকেটারকে আমি আবারও আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

আপনারা জানেন যে, পরিবহন বিভাগের কাজকর্মে স্বচ্ছতা ও নীতিনিষ্ঠার ওপর বেশ কিছুদিন ধরে বিশেষ ততপরতা শুরু হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে, কত সহজতর উপায়ে মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। এই সব বিষয়কে মাথায় রেখে ৪০টি অনলাইন সার্ভিস শুরু করা হয়েছে। ফলে ওই সব সেবার জন্য এখন আর কাউকে ডিটিও অফিসে যেতে হয় না। সব ধরনের ফি বা ট্যাক্সও এখন অনলাইনেই গ্রহণ করা হয়। অফিস চত্বরে নগদ লেনদেনের কোনও ব্যাপার নেই। এমনকী আরসি অর্থাত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স আনার জন্য অফিসে গিয়ে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন পড়ছে না। হাতে হাতে দেওয়ার ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়া হয়েছে। এর বদলে ডিটিও নিজে সেগুলি নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দিচ্ছেন। এখানে উল্লেখ করতে হয় মুখ্যমন্ত্রীর ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কিল প্রোগ্রামের কথা। এই প্রোগ্রামে কাছাড় জেলার সাত বিধানসভা কেন্দ্রের ৩৫০ জন যুবক বিনা ফি-তে নেট্রিপের উধারবন্দে গিয়ে ড্রাইভিং ট্রেনিং নিয়েছেন।

কাছাড়বাসী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্র বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণদানের সুপারিশ, ভর্তুকি এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ প্রদান করে চলেছে। আনারস, রাজমা, বাঁশজাত সামগ্রীর মতো কাছাড়ের রফতানিযোগ্য দ্রব্যের উন্নয়ন এবং রফতানি বৃদ্ধির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নিচ্ছে। আমাদের আনারস এখন শুধু আসাম বা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাজারে সীমাবদ্ধ নেই। আপনারা জেনে খুশি হবেন, এই কিছুদিন আগে দুবাইয়ে রফতানি হয়েছে কাছাড়ের আনারস। ঝাড়খণ্ড, কর্নাটক, দিল্লিতে তো বিক্রি হয়ই। মার অ্যাগ্রো অর্গানিক প্রডিউসারস কোম্পানি আনারস চাষে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।

আমাদের সরকার কৃষিব্যবস্থার যান্ত্রিকীকরণে সিএমএসজিইউওয়াই স্কিমে ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে ট্রাক্টর দিচ্ছে। কাছাড় জেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৫৯ জন ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৭৩ জন এই সুবিধা গ্রহণ করেছেন। ৮৫ হাজার টাকা করে ভর্তুকিতে ১৫৩ জন পাওয়ার টিলার নিয়েছেন। জেলার ৬৮৯০৯ জন কৃষক প্রাইম মিনিস্টার কৃষক সম্মান নিধি থেকে প্রতি ত্রৈমাসিকে দুই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আজ এই অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক সৈকত রায়চৌধুরীকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরির চিন্তা না করে আট লক্ষ টাকা খরচ করে বাগেরকোণা খাসপুরে পলি হাউস তৈরি করেছেন। তাঁর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সরকার ২ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা ভর্তুকি মঞ্জুর করেছে। কৃষি ও উদ্যান শস্য ক্ষেত্রে বলুন, কিংবা শিল্প বাণিজ্যে, এই ধরনের উচ্চশিক্ষিত যুবাদের বেশি পরিমাণে আকৃষ্ট করা গেলেই সমাজের মঙ্গল।

মাছ উৎপাদনে কাছাড় জেলাকে স্বনির্ভর করে তুলতে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। সেই লক্ষ্যে ফিস হ্যাচারি, পুকুর, ব্যাকইয়ার্ড অর্নামেন্টাল ইউনিট, বায়োফ্লক ইত্যাদির সংখ্যা লাগাতার বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ২৫ হেক্টর জলাভূমিকে মাছচাষের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। ব্লু রেভুল্যুশন স্কিমে চারটি আরএএস অর্থাৎ রিসার্কুলেটরি অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মতস্য সম্পদ যোজনায় পাঁচটি বায়োফ্লক ফিস ফার্মিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে দুটি ফিডমিল, একটি হ্যাচারিও। ৭৪ জনের কিষান ক্রেডিট কার্ড মজুর হয়েছে। ৫৭৬২জন ফিসারম্যান ইনসুরেন্স করেছেন।

জলসেচ বিভাগ প্রধানমন্ত্রী কৃষিসেচ যোজনার অধীনে মোট ৯৮৬টি নলকূপ প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে কৃষকদের উপকার করে চলেছে। তাতে জেলার ২৮৭২ হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদনের সুব্যবস্থা হয়েছে। এ ছাড়া সোনাই ও রুকনি নদীর ওপর দুটি বড় সেচ প্রকল্পের কাজ কেন্দ্রের অনুমোদন পেতে চলেছে। এই দুটির কাজ শেষ হলে কাছাড় জেলায় বছরে ৫০ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে জলসেচের বন্দোবস্ত হবে

আপনারা জানেন, গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের অর্থনীতিতে কাছাড় জেলা ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে। চলতি অর্থবর্ষে অর্থাত্ এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চার মাসে কাছাড় জেলায় আবগারি রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫১ কোটি ৩৫ হাজার ৭৮৯ টাকা। ২০২১-২২ এক অর্থবর্ষের হিসাব টানলে দেখা যায়, আমাদের জেলা থেকে রাজকোষে আগারি রাজস্ব গিয়েছে ১৫০ কোটি ৩৬ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৮৯ টাকা। এ ছাড়া, গ্রামোন্নয়ন দফতর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে কর সংগ্রহ করেছে ১ কোটি ৩৮ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা।

বন্ধুগণ, কাছাড় জেলায় ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ডিজেবিলিটি পেনশন পাচ্ছেন ১৯৩২ জন। ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওল্ড এজ পেনশন পাচ্ছেন ২৮০০৭ জন। ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ৫৪৩১ জন। ইন্দিরা মিরি বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ৮০৮৪ জন। শহিদ কুশল কোঁয়র সর্বজনীন বৃদ্ধ পেনশন পান ৬৪১৫৫ জন। ৭৮৫ জন পান আইদেউ সন্দিকৈ মহিলা সম্মান প্রকল্পের সুবিধা।

মুখ্যমন্ত্রীর নির্বাচন-পূর্ব প্রতিশ্রুতি পূরণে মাইক্রো ফাইনান্সে কাছাড় জেলায় ৮২ হাজার ৩১৪ জন উপকৃত হয়েছেন। অরুণোদয় প্রকল্প পাচ্ছেন ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৪৮ জন। বসুন্ধরা পরিষেবায় এখন পর্যন্ত জেলায় ২৫ হাজার ৪৪টি জমি খন্ডের নামজারি সম্ভব হয়েছে।

কাছাড় জেলার শহর এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার কাজও যথেষ্ট সন্তোষজনক। যেমন প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে নির্মাণকাজ এগিয়ে নিয়েছেন, তেমনি দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ গ্রহণ করে অধিকাংশ বেনেফিসিয়ারি তাদের ঘর তৈরি করে নিয়েছেন। গ্রামোন্নয়ন দফতরের এমজিএনরেগা প্রকল্পে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯ লক্ষ ৪৬ হাজার ৩৮২ কর্মদিবস কাজ হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের চারমাসে কাজ দেওয়া হয়েছে ৮ লক্ষ ২৬ হাজার ৭৮০ কর্মদিবস। আপনারা জানেন, আমাদের সরকার চা বাগানের সার্বিক কল্যাণে নানা প্রতিশ্রুতি পালন করে চলেছে। সে জন্য এমজিএনরেগা প্রকল্পের বহু স্কিম নেওয়া হয়েছে কাছাড়ের চা বাগান এলাকায়।

প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনার সুফল কাছাড় জেলায় ৮৬৬২ জনের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। বাস্তবে পেয়েছেন ৯২১৭ জন। অর্থাৎ সাফল্যের হার ১০৬ শতাংশ। এই প্রকল্পে প্রত্যেক প্রসূতিকে তিন কিস্তিতে পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

দীনদয়াল দিব্যাঙ্গজন পেনশন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ৬৪০৯ জনকে। এই প্রকল্পে বিভিন্ন বয়সের দিব্যাঙ্গদের মাসে এক হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়। ছয়মাস থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে কাছাড় জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগের পরবরিশ (PARVARISH) প্রকল্প সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। খুশির কথা, এই সূত্রেই কাছাড় স্কচ অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। এই প্রকল্পে অপুষ্টিতে ভোগা ৯৫৭টি শিশুকে চিহ্নিত করে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন জনের সাহায্য সহযোগিতায় তাদের পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এই পরবরিশ প্রকল্প এখন কম্যুনিটি বেসড ম্যানেজমেন্ট অব অ্যাকুয়েট ম্যালনিউট্রেশন-এ যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে আরও ২৪১টি শিশুকে চিহ্নিত করা হয়। তাদের মধ্যে ১১৩টি শিশু সুস্থ-স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিকল্পে গত এক বছরে কাছাড় জেলার ৩৫টি সেকেন্ডারি লেভেল স্কুলে ৪৭ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষক এবং ১৭ জন স্নাতক স্তরের শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছে। হস্ততাঁত ও বস্ত্র দফতর কাছাড় জেলায় সিঙ্গিরবন্দ ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে ৩০০ জনকে স্বনির্ভর করে তুলেছে। হ্যান্ডলুম ওয়েভারস মুদ্রা স্কিমে চলতি অর্থবছরে ২৫ জনের ঋণের জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্কে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনের ঋণ মঞ্জুর হয়েছে। বাকিদেরও ঋণ সংক্রান্ত কাজকর্ম এগিয়ে চলেছে।

আরও অনেক বিভাগের গত একবছরের বেশ সাফল্য রয়েছে। বহু তথ্য-পরিসংখ্যান আমার হাতে মজুত আছে। কিন্তু আপনারা সকাল থেকে এসে বসে আছেন, তাই সে সব আর উল্লেখ করছি না। এ ছাড়া, সাফল্য দাবির বিষয় নয়, ভোগ উপভোগের। আশা করব, আপনারা আমাদের সরকারের নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প সম্পর্কে অবগত হবেন, সে সবের সুবিধা ভোগ করবেন।

জয়হিন্দ, বন্দেমাতরম। ভারত মাতা কি জয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker