Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking News

মহাজনী গানে ফক-ইরার মঞ্চ মাতালেন প্রেমাংশু, গাইলেন একঝাঁক লোকশিল্পীও

ওয়ে টু বরাক, ১৭ জুলাই : শুধুমাত্র লোক গান নিয়ে কীভাবে হলভর্তি মানুষকে ৫ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা যায়, তা দেখিয়ে গেলেন কলকাতার মহাজনী শিল্পী প্রেমাংশু দাস। রবিবার শিলচর বঙ্গভবনে ফক-ইরার পঞ্চম বার্ষিক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি। নিজে অনুষ্ঠান করলেন প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো, গাইলেন, গানের সঙ্গে সঙ্গে ‘ভাবে’র তর্জমা করলেন, আর সেই ‘ভাবে’ আপ্লুত করলেন দর্শকশ্রোতাকে। শিল্পীর গানে বা তাঁর কথায় কখনও দুহাত তুলে, কখনও আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে, আবার কখনও প্রকৃত কৃষ্ণ ভক্তের মতো নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে নেচে দর্শকরা বুঝিয়ে দিলেন, লোক গান বা ভক্তিরস তাঁদের ধমনীতে রয়েছে।

এ দিন সন্ধ্যে সাড়ে ৫টায় এক ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানেই এই আয়োজনের উদ্বোধন হয়। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে থেকে দু’জন ঢাকিকে নিয়ে সারিবদ্ধভাবে একটি মিছিল প্রবেশ করে। মিছিলে যাঁরা ছিলেন, তাদের হাতে ছিল একটি করে প্রদীপ। ঢাকবাদ্য সহকারে এই মিছিল সোজা চলে আসে মঞ্চে। সেখানে একপাশে শাহ আব্দুল করিম, সাধক ভবা পাগলা, রাধারমণ দত্ত ও লালন ফকিরের প্রতিকৃতি আর অন্য পাশে ছিল কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যের ছবি। সবাই প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ রাখলেন প্রতিকৃতি সামনে। অনেকটা যেন লোকগানের পূর্বজদের স্মরণ করে লোক উতসবের সূচনা হল।

এ দিন মিছিলে বরাক উপত্যকার লোক সঙ্গীত জগতের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছে। এঁদের মধ্যে ছিলেন দোতরা বাদক নৃপেন কুমার দাস, লোকশিল্পী ও শিক্ষক মনোরঞ্জন মালাকার, সানাই বাদক নলিনী শব্দকর, গাজি গানের শিল্পী সাইদুল মিয়া, বিশিষ্ট আবৃত্তিকার অমিত শিকিদার, সমাজসেবী ও সংগঠক সাধন পুরকায়স্থ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক অজয় কুমার রায়, সমাজসেবী স্বর্ণালি চৌধুরী, তবলিয়া বিপ্লব দে প্রমুখ। পরে মঞ্চে আসেন ট্রেনে হারমোনিয়ম নিয়ে ঘুরে ঘুরে গান করা অন্ধ লোকশিল্পী মৃদুল পাল, অন্ধ ছাত্রী রুদ্রানী দাস প্রমুখ। ফক-ইরার পক্ষে এদের প্রত্যেককে বরণ করা হয়। এর পাশাপাশি আয়োজকদের পক্ষ থেকে দোতরা শিল্পী নৃপেন কুমার দাসকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মান তুলে দেওয়া হয়।

উদ্বোধনী পর্ব শেষ হতেই শুরু হয়ে যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথমে কর্মশালার প্রশিক্ষার্থীরা দুটি দলে ভাগ হয়ে পর পর দুটি লোক সঙ্গীত গেয়ে শোনায়। উল্লেখ্য, ১৪ থেকে ১৬ জুলাই তিন দিন ধরে শিলচর সঙ্গীত বিদ্যালয়ে মহাজনী গানের কর্মশালার আয়োজন করেছিল ফক-ইরা। যার পোশাকী নাম দেওয়া হয় ‘সহজ আলাপ’। মোট ২০৪ জন প্রশিক্ষার্থী এই কর্মশালায় যোগদান করে। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন মহাজনী শিল্পী প্রেমাংশু দাস। একঝাঁক শিল্পীর পর পর দুটি উপস্থাপনা দেখতে এ দিন দর্শক আসনে প্রচুর সংখ্যায় অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের ঠিক পরেই ছিল নির্বাণের পরিবেশনায় লোক আঙ্গিকের ওপর একটি নৃত্য। এতে বেশ কয়েকজন শিল্পী অংশগ্রহণ করে।

পঞ্চম বার্ষিক অনুষ্ঠানে ফক-ইরা লোকগানের মালা নাম দিয়ে একটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান রেখেছিল। এতে শিলচরের লোকগান নিয়ে মঞ্চে ধরা দেন শিলচরের কয়েকজন নামি শিল্পী। ফক-ইরার শিল্পীরা এ দিন আসর বন্দনা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন। এরপর ক্রমান্বয়ে মঞ্চে আসেন বিধান লস্কর, মঙ্গলা নাথ, মঞ্জুশ্রী দাস, শর্বানী ভট্টাচার্য, তাহেরা বেগম লস্কর, বিক্রমজিত বাউলিয়া ও শেখর দেবরায়।

প্রসঙ্গত, বার্ষিক অনুষ্ঠান হলেও এ বার ফক-ইরা নিজস্ব কোনও অনুষ্ঠান রাখেনি। আমন্ত্রিত শিল্পীদের পরিবেশনায়ই জোর দিয়েছে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ৭ জন লোকশিল্পীকে পদক তুলে দিয়ে সম্মান জানানো হয়। সেইসঙ্গে গায়ক, সুরকার, গীতিকার বিশ্বরাজ ভট্টাচার্যকেও সম্মান জানানো হয়। কারণ তাঁর লেখা ও সুর করা বহু গান বিভিন্ন মঞ্চে গেয়েছেন ফক ইরার শিল্পীরা।

ফক-ইরার হয়ে এ দিন গান বাজনায় ছিলেন সায়ন রায়, দেবরাজ ভট্টাচার্য, শুভ্রাংশু পাল, প্রীতম দত্ত, সুদর্শন নাথ, নিরুপম বড়ভূঁইয়া, স্বরূপা পাল, রীমা মিত্র, দেবজিত পাল, শিবম পাল, সুকান্ত সূত্রধর, বিয়ান আচার্য ও ভাস্কর দাস। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন দেবাশিস পুরকায়স্থ। ফক-ইরার পক্ষে অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন ভাস্কর দাস। মঞ্চসজ্জায় অঙ্কন কংসবণিক। এক্কেবারে শেষে কর্মশালার প্রশিক্ষার্থীদের শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

(প্রতিবেদন : দিদৃক্ষা)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker