AnalyticsBreaking News

নাগরিকত্ব/৪৪ঃ কম বসতির এলাকায় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের সুপারিশ ছিল জেপিসির

২৯ মার্চঃ নতুন ভিত্তিবর্ষের যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, তাতে স্পষ্ট, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আর কোনও উদ্বাস্তুকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার সহ সমস্ত স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে। বিশেষ করে, অসমে যেন বাংলাদেশ থেকে কোনও মতে আর অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে। কারণ এমনিতেই অসম ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটে গিয়েছে। কমিটি এই শর্তেই ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরকে ভিত্তিবর্ষ বলে মেনে নিয়েছে যে, সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজ একশো শতাংশ শেষ করবে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাবে। কেউ অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে প্রযুক্তির প্রয়োগে তাকে ধরে ফেলবে।

৫.৪৯ কমিটি দেখতে পেয়েছে, প্রস্তাবিত সংশোধনী কার্যকর হলে অবৈধ অনু্প্রবেশকারীদের বোঝা অসমকে বইতে হবে বলে বিভিন্ন অসমিয়া সংগঠন, গোষ্ঠী প্রস্তাবিত সংশোধনীর প্রতিবাদ করছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার পেয়ে তারা আদি বাসিন্দাদের দাবিয়ে রাখবে। এইসব আন্দোলনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের দরুন অসম সহ উত্তর-পূর্বে জনবিন্যাসগত পরিবর্তন ঘটার কোনও রিপোর্ট তাদের কাছে নেই, কমিটি তা মানতে পারে না। আসলে পরবর্তী জনগণনায় জনবিন্যাসগত পরিবর্তনটা বোঝা যায়। কিন্তু অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা রেশন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট ইত্যাদি আদায় করে নিজেকে প্রকৃত ভারতীয় বলেই দাবি করে। কমিটি তাই মনে করে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরকেল ভিত্তিবর্ষ করা বেশ তাতপর্যবাহী। ধরেই নেওয়া হয় যে, এর পরে আর অনুপ্রবেশ ঘটতে দেওয়া হবে না। প্রতিবেশী দেশগুলি একে সুযোগ বলে ধরে নিলে তাও রোখা হবে। এ কথা সত্য যে, আদি অসমিয়া জনগণের স্বার্থ সুরক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে। উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন প্রকল্পে কেন্দ্র রাজ্য সরকারকে যে ক্ষতিপূরণ দেবে, তাতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় উদ্বাস্তুদের থাকার ব্যবস্থা করা ঠিক হবে না। জনবিন্যাসগত পরিবর্তন কম প্রভাব ফেললেই আদি অসমিয়ারা কম চিন্তিত হবেন।

৫.৫০ কমিটি লক্ষ্য করেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই এনআরসি-র খসড়া প্রকাশিত হয়েছে। তাতে ৪০ লক্ষ ৭০ হাজার ৭০৭ জনের নাম ওঠেনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দাবি-আপত্তি জানানোর প্রক্রিয়া গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে। চলবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। কমিটি এও দেখতে পেয়েছে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য রাজ্য সরকার, রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া এবং এনআরসি কো-অর্ডিনেটরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কেন্দ্রীয় সরকার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) তৈরি করেছে। সরকারের তৈরি সেই এসওপি-তে সু্প্রিম কোর্ট অনুমোদন জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া সময় মেনে দাবি-আপত্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই এনআরসি প্রকাশিত হবে। কমিটি সরকারকে এই প্রক্রিয়া দ্রুত করতে এবং এমন স্বচ্ছতায় করতে বলেছে যেন সকল প্রকৃত ভারতীয়দের নাম এনআরসি-তে অন্তর্ভুক্ত হয়।

৫.৫১ কমিটি এও লক্ষ্য করেছে, ভারত ১৯৫১ সালের শরণার্থী সংক্রান্ত ইউএন কনভেনশন বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে সাক্ষর করেনি। ফলে ভারতের কোনও শরণার্থী বা অনুপ্রবেশকারী নীতি নেই। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মায়ানমার, থাইল্যান্ড বা ভুটান কেউ এই কনভেনশন বা প্রটোকলে সই করেনি। তবে সম্প্রদায়, ধর্ম, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি কারণে অত্যাচারের শিকার হয়ে কেউ ভারতে প্রবেশ করে এবং তা প্রমাণ করতে সক্ষম হয় তাহলে ২০১১ সালের এসওপি-তে একজন বিদেশি নাগরিক দীর্ঘকালীন ভিসা নিয়ে ভারতে বসবাস করতে পারেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের দাবি, নথিপত্র এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, আর কে শরণার্থী, তা বের করতে সক্ষম হন তারা। ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯২০ সালের পাসপোর্ট (এন্ট্রি ইনটু ইন্ডিয়া) অ্যাক্ট, ১৯৩৯ সালের রেজিস্ট্রেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট এবং তাতে তৈরি নীতি-নির্দেশিকা মেনে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হয়। এই ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিচার হয়, শাস্তি হয় এবং পরে যে দেশের নাগরিক সেই দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker