Barak UpdatesHappeningsBreaking News

ভয়ে কুঁকড়েও মোদিতেই ভরসা মণীন্দ্র দাসদের

ওয়েটুবরাক, ২৫ এপ্রিল : ১০২ বছরের বৃদ্ধ ফরেনার্স ট্রাইবুনালের বারান্দায় শুয়ে আছেন। গাড়ি থেকে নামাতে গিয়ে কত কসরতই না করতে হল অসমের কাছাড় জেলার আমড়াঘাটের চন্দ্রধর দাসের ছেলেমেয়েদের। হাজিরা সেরে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় আরেক প্রস্ত লড়াই। নির্ধারিত দিনে না এসেও উপায় নেই, যদি ফের বিদেশি ঘোষণা করে দেন ট্রাইবুনালের সদস্য-বিচারক। জামিন লাভের আগে এক হাজিরার দিনে অনুপস্থিতির দরুন একতরফা রায়ে তাঁকে বিদেশি বলে জেলে পুরে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ভাবে আর কতদিন । কাঁপাগলায় চন্দ্রধরের জবাব, “নরেন্দ্র মোদি একটা ব্যবস্থা করবেন।” না, শেষপর্যন্ত সন্দেহভাজন হিসেবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন তিনি।

চন্দ্রধরের মতোই আজও মোদির ওপর আস্থাশীল বিদেশি ঘোষিত মণীন্দ্র চন্দ্র দাস। বললেন, মোদিই একদিন তাঁকে নাগরিকত্ব প্রদান করবেন। ২০২১ সালে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে জামিন লাভ করেন। সে থেকে প্রতি সপ্তাহে থানায় গিয়ে হাজিরা দেন। অসমে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য যে সব নথির প্রয়োজন, সবই ছিল চন্দ্রধর  দাস ও মণীন্দ্র দাসের। কিন্তু মুশকিল হল, ১৯৭১-র পরে তাঁরা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বলে সন্দেহ করেছিল পুলিশ। তাতেই নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় চাপে তাঁদের ঘাড়ে। শেষপর্যন্তও যা আর হয়ে উঠল না চন্দ্রধরের।

মণীন্দ্র দাস অবশ্য এতকাল আমতাআমতা করলেও এখন জোরগলাতেই স্বীকার করেন, নতুন আইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন। মোদির প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই।

নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির প্রধান সম্পাদক সাধন পুরকায়স্থ বললেন, মোদি না হয় বাঁচাবেন, কিন্তু ফাঁদটা পেতেছিল কে? সরকারই নানা কৌশলে বিদেশি বলে সন্দেহ করে মানুষগুলিকে ঝুলিয়ে রাখছে। উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবে বলে পাঁচ বছর কাটিয়ে দিল। পরে আইন করল, কিন্তু বিধি প্রণয়নে আর এক পাঁচ বছর লেগে গেল। এনআরসি, আধার যন্ত্রণার কথাও এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন।

বিজেপি প্রার্খী পরিমল শুক্লবৈদ্য অবশ্য নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন নিয়ে যেমন এক পা এগিয়ে কৃতিত্ব দাবির পক্ষপাতী নন, তেমনি বিধির জটিলতায় এখনও উদ্বাস্তুরা আবেদন করতে পারছেন না, একে ভোটের ইস্যু বলেও মনে করেন না। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার আশ্বাস স্মরণ করিয়ে দেন, ভোট মিটে গেলে ছয়মাসের মধ্যে হিন্দু বাঙালির এই সব সমস্যা মিটে যাবে।

বিরোধীরা আশাবাদী, এত সহজে মানুষ দফায় দফায় নাগরিকত্ব পরীক্ষার যন্ত্রণা ভুলে যাবে না। সবই ভোটের বাক্সে প্রতিফলিত হবে। তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব বলেন, দেশভাগের দরুন সিলেটের কিছু মানুষ এপারে এলেও তাঁরা তখনও অবিভক্ত সিলেটের নাগরিক হিসেবে অসমেরই বাসিন্দা ছিলেন। অহেতুক বিজেপি বরাকবিরোধী মানসিকতা থেকে মানুষগুলিকে হয়রান করছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহে শিলচরে এসে বলে গিয়েছেন, তাঁরা ক্ষমতা পেলে এনআরসি তুলে দেবেন। সিএএ তুলে দেবেন। হিন্দু-মুসলমানদের জোট বাঁধার আহ্বান জানিয়ে যান তিনি। এই বাঙালি আবেগকে ধরেই মানুষের কাছে যাচ্ছেন সুস্মিতা দেব ও শিলচরের তৃণমূল প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাস। কংগ্রেস প্রার্থী সূর্যকান্ত সরকারেরও দাবি, যে হিন্দুত্বের ধোঁয়া তুলে বিজেপি জিততে চাইছে, এ বার সিএএ, এনআরসি, ডি ভোটার ইস্যুতে হিন্দুরাই তাদের ডোবাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker