Barak UpdatesHappeningsBreaking News

গাড়ির ভেতর থেকে ছাত্ররাই বের করে আনল একের পর এক দেহ, হাত লাগায়নি পুলিশ, লিখেছেন বজলুর রহমান খান

//বজলুর রহমান খান//

গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি আমাদের কলেজের পাঁচ ছাত্র মনজুর, জাফর, আরিফ, সলমান এবং গোবিন্দের বিদেহী আত্মার প্রতি৷ স্রষ্টার কাছে তাদের মাগফেরাত কামনা করছি৷ ঘড়ির কাঁটায় প্রায় পৌনে ২টা হবে। কলেজের টিচারস কমন রুমে ঢুকেছি৷ অগ্রজ সহকর্মী অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন তাপাদার বললেন,  এইমাত্র খবর এসেছে কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কালাইনে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে আমাদের পাঁচজন ছাত্র মারা গেছে। সবাই মিলে খোঁজখবর নিতে থাকি। এর মধ্যে অধ্যক্ষ ডঃ মর্তুজা হোসেন ফোন করেন দেখা করার জন্য। ততক্ষণে কালাইন এলাকার ছাত্রদের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যাই, দুর্ঘটনাস্থলটা ঠিক কোথায় এবং কীভাবে ঘটেছে ওই দুর্ঘটনা৷ ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ সন্তোষকুমার দে, বাণিজ্য বিভাগের প্রধান জয়নাল আবেদিন তাপাদার এবং আমি কালাইনের উদ্দেশে রওয়ানা হই। আমাদের সবার মুখে উৎকন্ঠার ছাপ৷ মন ভারাক্রান্ত৷ বেলা ১টার সময় ছাত্রগুলি কলেজ থেকে বেরিয়ে বাড়ি পৌঁছাতে পারল না!  তাদের মৃত্যুসংবাদ শুনতে হলো!

দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি, বিপরীতদিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায় আমাদের ছাত্রদের অল্টো গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। সংঘর্ষের তীব্রতা এত মারাত্মক ছিল যে, ৩০-৪০ মিটার টেনে নিয়ে ট্রাকটি অল্টো গাড়িটিকে কয়েক পাল্টি দিয়ে রাস্তার পাশে জলের ডোবায় ফেলে। দুজন ছাত্র গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে যায় এবং রাস্তার উপরেই তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করে। তাদের নিথর দেহের আশপাশ রক্তে লাল। তিনজনকে উদ্ধার করা হয় গাড়ির ভেতর থেকে। দুজনকে কালাইন হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তৃতীয়জনকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথে সে মৃত্যুবরণ করে। আমরা দুজনকে দেখতে কালাইন হাসপাতালে যাই৷ হাসপাতালের ইনচার্জ জানালেন,  একজনের শরীর এমন মারাত্মক  মুচড়ে গিয়েছিল যে, দুর্ঘটনায় আহতের এমন অবস্থা হতে তিনি কোনও দিন দেখেননি।

দুঘটনাস্থলে উদ্ধারকার্যে আমাদের প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্ররা খুবই সক্রিয় ছিল। আমাদের এক ছাত্র শিবলীর শরীর তখনও জলে ভেজা। সে ডোবা থেকে ছাত্রদের নিথর দেহগুলি অন্যদের সঙ্গে এক এক করে বের করে এনেছিল। বিশেষ লক্ষ্যণীয়, পুলিশ তখন নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। ঘটনাস্থলে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে আমাদের কলেজের ছাত্ররাও সুবিচারের আশায় ধর্নায় সামিল হয়।

The Killer Truck

কিছুক্ষণ পরেই হাজির হলেন কলেজের বড়বাবু আব্দুল হেকিম, সহকারী অধ্যাপক আবু তাহের সহ অনেক প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র। অধ্যক্ষ মহোদয় পৌঁছেই ছাত্র এবং জনসাধারণকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন জানান৷ তৎসঙ্গে কাছাড় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে থাকেন। প্রতিবাদী জনতা বারবার পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ বিভাগ আইন অমান্যকারী যানচালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ।

বিকেল চারটায় ঘটনাস্থলে পৌঁছান উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। তিনি শিলং থেকে করিমগঞ্জ ফিরছিলেন। তারপর আসেন অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার জগদীশ দাস৷ তাঁদের কাছে কলেজের অধ্যক্ষ আবেদন রাখেন, আর কোনও মায়ের কোল যেন এভাবে খালি না হয়, প্রশাসন যেন সেভাবে ব্যবস্থা নেয়। সন্ধ্যায় পৌঁছেন আলগাপুরের বিধায়ক নিজামউদ্দিন চৌধুরী। কলেজ থেকে যান সহকর্মী পল্লব দেব, প্রগতি দত্ত, মিফতাউল প্রমুখ। বিধায়ক কমলাক্ষ দে ততক্ষণে যোগাযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। কলেজের তরফে অনুরোধ করা হয় মৃত ছাত্রদের পরিবারকে সরকারের তরফে আর্থিক সাহায্য প্রদানের জন্য। সন্ধ্যার পর বিধায়ক কমলাক্ষ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জেলা প্রশাসন মারফত আর্থিক সাহায্য ঘোষণার জন্য বলা হয়েছে। প্রশাসন আর্থিক সাহায্যের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহৃত হয়৷ আজ শেষবারের মত ওই  ৫ ছাত্রের দেহ কলেজে নিয়ে আসা হবে। কীভাবে সামলাব তখন তাদের সহপাঠীদের! নিজেকেই যে সামলাতে পারছি না!

(Taken from the Facebook post of the writer)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker