Barak UpdatesHappeningsBreaking News

শহরের দক্ষিণ অঞ্চলে আমরা এক লক্ষ নাগরিক আছি, লিখেছেন দিলীপকুমার দে

//দিলীপকুমার দে//

শহরের দক্ষিণ অংশের বৃষ্টির জল যেসব নালা দিয়ে বের হয় সেগুলোর নাম ‘লঙ্গাই খাল’ , ‘বাচাই খাল’ আর ‘সিঙ্গির খাল’।
শিলচরের প্রায় সবাই রাঙির খাল চেনেন। তা থেকেই একটি অঞ্চল ‘রাঙ্গির খাড়ি’ নামে পরিচিত।
কিন্তু বাচাই খাল ও লঙ্গাই খালের নাম অনেকে উল্টোপাল্টা ব্যবহার করেন। নাইটিঙ্গেল হাসপাতালের কাছ দিয়ে যে বড় খাল গেছে তার নাম ‘বাচাই খাল’, আর ন্যাশনাল হাইওয়ে চিত্তরঞ্জন এভিনিউর পাশ দিয়ে যে খালটি গেছে সেটি ‘লঙ্গাইখাল’। বিস্তীর্ণ সোনাই রোড, লিংক রোড, হাইলাকান্দি রোড, ন্যাশনাল হাইওয়ে-চিত্তরঞ্জন এভিনিউ অঞ্চলের নালা নর্দমা ও বৃষ্টির জল নিষ্কাশন হয় এই লঙ্গাই খাল দিয়ে। লঙ্গাইখালটি বড় ছিল। দখল হতে হতে এটি এখন নালার রূপ নিয়েছে। আমরা লঙ্গাই খাল দখলমুক্ত ও খোদাই করার দাবি জানিয়ে আসছি। গণস্বাক্ষরযুক্ত স্মারকলিপি জেলা আয়ুক্তের কাছে অনেক আগেই জমা দিয়েছেন ‘সক্রিয়পন্থী প্রবীণ নাগরিক মঞ্চ’।
দক্ষিণ শিলচরে কোনও রাজনৈতিক দলের অফিস নেই, কোনও দৈনিক পত্রিকার দফতর নেই, কোনও বিধায়ক কিংবা সাংসদের বাড়ি-অফিস নেই। তাই জলে ডুবলে তেমন কোনও খবর হয় না। বিশাল দক্ষিণ শিলচরে কোনও পার্ক নেই, কোনও অডিটোরিয়াম নেই, কোনও খেলার মাঠ নেই। আছে কিন্তু লক্ষাধিক মানুষের বসবাস।
সোনাই রোড, হাইলাকান্দি রোড, নেতাজি সুভাষ এভিনিউ, লিংক রোড, চিত্তরঞ্জন এভিনিউ, পঞ্চায়েত রোড- দাস কলোনি এবং এসব রোডের প্রায় ৭০/৮০টি গলিপথ সামান্য প্রাক-বর্ষণে জলে ডুবে যায়। তবুও লঙাই খাল সাফ হয় না, দখলমুক্ত ও খনন তো দূরের কথা।
রোড শো হল, ভোট গেল। কিন্তু এদিকে কোনও রোড শো, মিছিল করার মুখ নেই।
সোনাই রোডে নামকরা স্কুল-কলেজ রয়েছে। আইজল যাবার পথও এটি। আর হাইলাকান্দি রোড- নেতাজি সুভাষ আ্যভিনিউ দিয়ে যেতে হয় মেডিকেল কলেজ, ক্যানসার হাসপাতাল, অগুনতি নার্সিং হোম ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে। তাছাড়া পলিটেকনিক, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, ডেন্টাল কলেজ, পশুচিকিৎসা কলেজ, আসাম বিশ্ববিদ্যালয় যেতে মাড়াতে হয় এই পথ। বিকল্প নেই এই পথের। বরাকের একমাত্র মন্ত্রী এই পথ দিয়েই বাড়ি যান। আর ওদিকেই নাকি স্থানান্তরিত হবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। কিন্তু রাঙ্গির খাল দখল হয়ে এখন নিজের নাম হারিয়ে শুধু ‘ন্যাশনাল হাইওয়ে নালা’। বৃষ্টির জলে গৃহবাসী, পথচারী, যানবাহন ব্যবহারকারী স্থবির হয়ে পড়েন ঘন্টার পর ঘণ্টা। এম্বুলেন্স চলতে পারে না। রোগীরা হন বিপন্ন।

আর জল সরবরাহ বিভাগ ঘোলা জল মূল শহরের তিনগুণ বেশি দামে কম পরিমাণে সরবরাহ করে। একই শহরে জলের দামের পার্থক্য কেন? সেই ঘোলা জল দু-তিন বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে দিনের হিসেবে টাকা আদায় করে জল সরবরাহ বিভাগ।

আমাদের কি প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, সংগ্রাম, ভোট বয়কট করার কথা ভাবতে হবে? বুড়োরা সাথে আছি, যুবসমাজ এগিয়ে এলে ভাল। এই লড়াইয়ে দলীয় রঙ লাগাবেন না। অকর্মণ্য জনপ্রতিনিধিদের নিমন্রণ করতে হবে না। স্তাবক, চামচা পাতি নেতাদের ডাকারও দরকার নেই, এদের তফাতে রাখুন। ভাবুন – আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনি, নারী ও বৃদ্ধ সহ সবাইকে নোংরা জল ঠেলে এসব পথে যেতে হচ্ছে। নেতা, পাতিনেতারা এসব দেখেও না দেখার ভান করছেন।
নারী-পুরুষ, ছাত্র-যুব, গৃহবাসী, দোকানী, কর্মরত, বেকার সবাই দল মত, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে গণতান্ত্রিক উপায়ে যৌথ আন্দোলন করার কথা ভাবুন। প্রথমে আমরা মানুষের অধিকারটুকু পাই, পরে নাগরিক। তারপর আমাদের অন্য পরিচয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker