Barak UpdatesBreaking NewsFeature Story

ভিখিরি বৃদ্ধাকে ভাইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে দিল কালাইনের এনজিও
NGO from Kalain helps to unite old beggar with her brother

৪ ডিসেম্বরঃ অধিকাংশ দিন উপোষই কাটছিল বৃদ্ধার। হাত ভাঙার পর থেকে নড়তেই যেন কষ্ট। কিন্তু পাগলের খোঁজ কে আর রাখে! তবে ব্যতিক্রম আজও আছে। কাটিগড়া যুব সমাজ একতা মঞ্চ এবং কালাইন ইউনাইটেড ইয়ুথ ক্লাবের সভ্যরা তাঁকে রাস্তা থেকে তুলে কালাইন হাসপাতালে নিয়ে যান। তখনই ধরা পড়ে, মহিলা কীসের পাগল! সমস্ত কথাবার্তা স্বাভাবিক। সকলের সব প্রশ্নের সুন্দর জবাব দেন।

বললেন, তাঁর নাম শিবাণী দাস। এই সময়ে ঘনিষ্ট বললে তার এক ছোট ভাই রয়েছে। নাম মানিক দাস। হাইলাকান্দি জেলার ঘাড়মুড়ায় বাড়ি। কীভাবে যেতে হয় সেখানে, তাও বুঝিয়ে দেন ক্লাবের সম্পাদক শারিমূল হক লস্কর সহ নাসিরুদ্দিন বড়ভুইয়া, কমরুল ইসলামদের। তাঁরা ওখানকার পুলিশের সঙ্গে  যোগাযোগ করেন। পরে পুলিশের সহায়তায় ভাইকে খুঁজে বের করে নিয়ে আসেন কালাইনে। মানিক দাসও হতদরিদ্র দিনমজুর। স্ত্রী ও তিন সন্তানকে কোনওমতে দিন কাটান। কিন্তু বোনের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেননি। বরং তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শিবাণীর বিয়ে হয়েছিল। সংসার টেকেনি। সে থেকে হাইলাকান্দিতেই পরিচারিকা হিসেবে এক বাড়িতে থাকতেন। মাঝেমধ্যে বাড়ি যেতেন। কিন্তু বছর চারেক আগে একদিন নিখোঁজ হয়ে যান শিবাণী। আর সন্ধান পাননি মানিকরা। সেই কাজটাই করে দিলেন শারিমূল, কমরুলরা। বাজার থেকে সাত হাজার টাকা সংগ্রহ করে তুলে দেন মানিকের হাতে। অ্যাম্বুলেন্স ডেকে ভাই-বোনকে নিয়ে যান হাইলাকান্দি সিভিল হাসপাতালে। সেখানেই এখন শিবাণীদেবী চিকিসাধীন। পাশে সারাক্ষণ অনুজ মানিক।

বিষয়টি অবশ্য খুব সহজে হয়ে যায়নি। দুই এনজিও-র এক সম্পাদক সারিমূল হক লস্কর জানান, মহিলাকে কালাইন বাজার থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্ট্রেচার খুঁজলে তারা তা দিতে অস্বীকার করেন। সকলের এককথা, হাসপাতালের  সীমানার বাইরে নেওয়ার নিয়ম নেই। এ বার স্ট্রেচারের দাবিতে রাস্তা অবরোধ শুরু করলে সবাই উত্তেজিত হয়ে উঠছে দেখে স্ট্রেচারটি দিতে বাধ্য হন। কিন্তু হাসপাতালে আনার পর শুরু হয় আরেক প্রস্ত যন্ত্রণা। ডাক্তারবাবু তাকে দেখেই মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন।

সারিমূলরা ভাবেন, তাকে মেডিক্যালে পাঠালে কেউ একবারের জন্য ফিরে তাকাবে না। তাদের পক্ষেও নিয়মিত খোঁজ করা সম্ভব হবে না। তাই তারা আপত্তি করেন। বলেন, শুধু হাত ভেঙেছে তার। এ জন্য মেডিক্যালে নিতে হবে ! রীতিমত চাপ সৃষ্টির পর কালাইন প্রাথমিক  স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাকে ভর্তি করায়। এর পরই একে একে জিজ্ঞাসা করে বেরিয়ে আসে ভাই মানিক দাসের কথা। ঘাড়মুড়ার প্রত্যন্ত এলাকায় মানিক দাসকে  নিয়ে আসতে কিন্তু সমস্যা হয়নি। কিন্তু মুশকিলটা নতুন করে দেখায়, শিবাণীদেবীকে অ্যাম্বুলেন্সে হাইলাকান্দি নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলে। নতুন যুক্তি, ভিন জেলায় অ্যাম্বুলেন্স যায় না। পরে বিভিন্ন সূত্রে চাপ সৃষ্টি করা হলে অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker