NE UpdatesHappeningsCulture

কটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ ও বাংলা সাহিত্য সভার কবিপ্রণাম

১৯ মে : ‘কবিপক্ষে রবিপ্রণাম : সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ’ নামে একটি অনন্য রবীন্দ্র স্মরণ অনুষ্ঠান ১৫ মে, রবিবার কটন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ এবং বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর যৌথ আয়োজন ছিল এটি। সহযোগিতায় কটনের বাঙালি ছাত্র সংস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যমণ্ডিত সুডমার্সন হলে এ দিন ছিল চাঁদের হাট।‌ কে নেই? প্রয়াত বিশ্রুত শিল্পী জয়ন্ত হাজরিকার পত্নী মনীষা হাজরিকা, ভারতকণ্ঠ দেবজিৎ সাহা, ভয়েস অব আসাম সেকেন্ড রানার্স আপ সুদীপ্তা চক্রবর্তী, জি বাংলা সারেগামাপা সেকেন্ড রানার্স আপ চন্দ্রা শিকদার, উত্তরপূর্বের বিশিষ্ট সরোদিয়া তরুণ কলিতা, অসমের যুব প্রজন্মের অন্যতম কয়েকজন শিল্পী রূপম ভূইয়া, অনিন্দিতা পাল, ড. মৌসুমী সহরিয়া, শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী প্রমুখ। এ দিন একের পর এক শিল্পী রবীন্দ্র সংগীতের আসর মাতিয়ে তোলেন।‌ এঁদের মধ্যে রূপম ভূইয়া, মৌসুমী সহরিয়া, শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী প্রমুখের বিশুদ্ধ উচ্চারণে পুরো প্রেক্ষাগৃহ মুগ্ধ হয়ে যায়।‌ অনুষ্ঠানে শুরু থেকে শেষ অবধি ঠায় বসে রসগ্রহণ করেছেন বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, ভাষিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিলাদিত্য দেব।

রূপম এ দিন শোনান ‘মায়াবন বিহারিণী হরিণী’ আর ‘আজ যেমন ক’রে চাইছে আকাশ’। মনীষা হাজরিকা শোনান ‘মনে কী দ্বি়ধা রেখে গেলে চলে’। অনিন্দিতা পাল শোনান ‘আমার মল্লিকাবনে যখন প্রথম ধরেছে কলি’ আর ‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে’। সুদীপ্তা চক্রবর্তীর কণ্ঠে শোনা যায়, ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’, ‘বড়ো আশা করে’ এবং ‘নিত্য তোমার যে ফুল ফোটে’।‌ ড. মৌসুমী সহরিয়া গেয়েছেন কীর্তনাঙ্গের ‘আমার যা আছে আমি সকল দিতে পারিনি তোমারে নাথ’।‌ শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী শুনিয়েছেন, ‘এ কী লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’। চন্দ্রা শিকদারের মিষ্টি গলায় শোনা গেল ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে’ এবং ‘দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি’।

‌এ দিন সরোদে ‘এসো শ্যামল সুন্দর’-এর সঙ্গে মূল রাগটি বাজিয়ে শোনান তরুণ কলিতা। আর ভরাট কণ্ঠে আবৃত্তি করে শ্রোতাদর্শকদের চিত্তজয় করেন উত্তরপূর্বের অন্যতম সেরা বাচিক শিল্পী শিবশংকর দাস। এই পর্বে যন্ত্রশিল্পী রূপে ছিলেন বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর অন্যতম সাংস্কৃতিক সম্পাদক পূর্ব ভারতীর বিশিষ্ট তবলিয়া দেবাশিস ভট্টাচার্য, স্বনামধন্য গিটারিস্ট রাজু আনসারি, বিশিষ্ট পিয়ানোবাদক রূপক(পার্থ)‌দেব এবং পারকাসনে অধ্যাপক অমল সাহা। এ দিন প্রদীপ প্রজ্বলন ও কল্পবৃক্ষে বারিসিঞ্চনে অংশগ্রহণ করেন মনীষা হাজরিকা, দেবজিৎ সাহা সহ বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ এবং মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, ভাষিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিলাদিত্য দেব সহ বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর রাজ্য কার্যকরী সভাপতি খগেনচন্দ্র দাস, উপসভাপতি চন্দন ভাদুড়ি, গুয়াহাটি শাখার সভাপতি ড. শৈবাল সেনগুপ্ত প্রমুখ।

এ দিন অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয় কটনের ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা। পরিচালনা করেন ড. শিপ্রা গুহ নিয়োগী। ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ উদ্বোধনী সংগীতের মধ্য দিয়ে সূচনা হয়।‌ এরপর আরেকটি সমবেত সংগীত ‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে’। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা অংশগ্রহণ করেছে তারা হলো, শতাব্দী আচার্য, মণিকা শীল, অভিষেক ভদ্র, মেঘালী দাস, শিল্পা দেবী, জয়ত্রী বরঠাকুর, ঋতব্ৰতা ভট্টাচাৰ্য, সংযুক্তা ফুকন, রিয়া সরকার, বরাকের শিল্পী গৌরব দাস, প্রমিথিউস চক্রবর্তী। এ দিন বিশেষ আমন্ত্রিত শিল্পী রূপে অংশগ্রহণ করে শিশুশিল্পী অভিলাষা চক্রবর্তী শুনিয়েছে ‘তুমি আমায় ডেকেছিলে’ এবং ‘তুমি কোন কাননের ফুল’। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী স্বর্ণালী চক্রবর্তী শোনায় ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’ ও ‘ভালোবেসে সখী’। এই পর্বটি পরিচালনা করে বিভাগের ছাত্রী অপূর্বা দত্ত ও প্রিয়াংকা তালুকদার।

অনুষ্ঠানের মধ্য পর্বে বাংলা সাহিত্য সভা, অসম-এর শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। মৌসুমী শিকদার গেয়ে শোনান ‘একী লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ’ ও মহুয়া চক্রবর্তী শোনান ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’। কবিতায় ডালিয়া সিনহা (শেষের কবিতা) ও সুদেষ্ণা দেবরায় (মনেরে আজ কহ যে)।‌ কয়েকটি নৃত্য সেদিনের অনুষ্ঠানকে আরও নান্দনিক করে তুলেছিল। বাংলা বিভাগের ছাত্রী প্রিয়াংকা তালুকদার ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী জয়ত্রী বরঠাকুর দ্বৈতনৃত্যে অংশগ্রহণ করে। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রী বন্দিতা শর্মা, বর্তমান ছাত্রী সপ্তমী নাথ, সুজিতা দাসের নৃত্যও ছিল যথাযথ। তবে ‘দৃষ্টি অ্যাকাডেমি’র তিন শিল্পীর নৃত্যানুষ্ঠান সবার মন কেড়েছে।‌ আর, গুয়াহাটির সদ্যগঠিত একান্তভাবে মহিলাদের সংস্থা সৃষ্টি-র শিল্পীদের ‘ঋতুরঙ্গ’ ছিল সর্বার্থেই অসাধারণ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছেন সভার অন্যতম যুগ্ম‌ সম্পাদক বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী রূপম চক্রবর্তী ও সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী অলিভিয়া গোস্বামী। সংগীত পরিচালনায় ছিলেন সভার অন্যতম সাংস্কৃতিক সম্পাদক দেবাশিস ভট্টাচার্য। সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রধান তথা সভার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ড. প্রশান্ত চক্রবর্তী। অসমিয়া ও বাঙালি সমাজের তাবড় শিল্পীদের সমন্বয়ে এই কবিপ্রণাম বহুদিন মানুষের স্মৃতিতে থেকে যাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker