AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/৪৩ঃ বিল যেন অসম চুক্তির বাস্তবায়নে বিঘ্ন না ঘটায়, বলেছিল জেপিসিCitizenship/43: JPC told that the Bill shouldn’t create problem in implementation of Assam Accord
২৮ মার্চঃ অসম চুক্তির মাধ্যমেই নাগরিকত্ব আইনের ১৯৮৫ সালের সংশোধনীতে ৬(এ) ধারার সংযোজন ঘটেছে। বিভিন্ন মহল থেকে উদ্বেগের সঙ্গে জানানো হয়েছে, এই ৬(এ) এবং প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিলের মধ্যে বিরোধ দেখা দেবে। আইন বিষয়ক মন্ত্রকও বলেছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পরে কোনও ধরনের ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট ছাড়া অসমে প্রবেশ করেছে, এমন সংখ্যালঘুদের আইনি স্বীকৃতি প্রদানের যে প্রস্তাব বিলে করা হয়েছে, তাতে অসম চুক্তির সঙ্গে সংঘাতের জায়গা রয়েছে। পরিষদীয় বিভাগ স্পষ্টীকরণ দেয়, মূল আইনের ৬(এ) ধারা শুধুই ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে যারা বাংলাদেশ থেকে অসমে ঢুকেছে, তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এর পরে যারা এসেছেন, তাদের শনাক্তকরণ, আটকে রাখা বা প্রত্যর্পণের কোনও কথা তাতে উল্লেখ করা হয়নি। প্রস্তাবিত বিলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষকে নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে অসম চুক্তি থেকে ছাড় দেওয়ারই প্রস্তাব এবং তা সারা ভারতে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে।
পরিষদীয় বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গে জানিয়েছে, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে যারা অসমে প্রবেশ করেছে, তাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনে অসম চুক্তির সঙ্গে কোনও বিরোধ নেই। আর প্রস্তাবিত বিলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ছয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর যারা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অসমে প্রবেশ করেছে, তাদের কথা বলা হয়েছে। যদি কারও বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে মামলা ঝুলে থাকে, তবে তাকে আর প্রস্তাবিত বিলের ২(১)(বি) ধারায় অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা যাবে না। প্রস্তাবিত বিল আইনে পরিণত হওয়ার দিনে ওইসব ব্যক্তি ঝুলে থাকা মামলা থেকে রেহাই পাবেন এবং মূল আইনের তৃতীয় তফশিল ও ৬ নং ধারা অনুসারে তারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
৫.৪৬ যৌথ সংসদীয় কমিটি সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের দিকেও খেয়াল রেখেছে, যেখানে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে বৃহত্তর বেঞ্চ যতক্ষণ না সিদ্ধান্ত জানায়, ততক্ষণ আমরা নাগরিকত্ব আইনের ৬(এ) ধারাকে বৈধ বলেই মেনে নিচ্ছি। ৬(এ) ধারা সংবিধান বা নাগরিকত্ব আইনের মূল কাঠামোকে লঙ্ঘন করছে কিনা, এ নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের ১৩ প্রশ্নে সরকার জানিয়েছে, ৬(এ) ধারাকে অসাংবিধানিক বলে আবেদনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ কোনও আইনের বৈধতাকে মাত্র দুটি কারণেই চ্যালেঞ্জ জানানো যেতে পারে। প্রথমত, পরিষদীয় যোগ্যতায় ঘাটতি এবং দ্বিতীয়ত, সংবিধানের তৃতীয় খণ্ডে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের কোনওটি লঙ্ঘন করা হয়। আবেদনকারী চ্যালেঞ্জ জানাতে গিয়ে ওই দুই কারণের কোনওটিরই কথা উল্লেখ করেননি।
৫.৪৭ যৌথ সংসদীয় কমিটি তাই মনে করে, সুপ্রিম কোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ যতক্ষণ না এ ব্যাপারে তাঁদের চূড়ান্ত রায় দেন, ততক্ষণ মূল আইনের ৬(এ) ধারা বৈধই। সম্ভাব্য জটিলতা ঠেকাতে পরিষদীয় বিভাগের প্রস্তাব, অসম চুক্তির বিজ্ঞপ্তিতে মূল আইনের ২(১)(বি) ধারাকে যুক্ত করে দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হোক। এই রিপোর্টের ২.৪৩ প্যারায় সে কথার উল্লেখ রয়েছে। তবে এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের আগে সরকারের সতর্কতার সঙ্গে এগোনো দরকার। কারণ বিষয়টি বিচার বিভাগের বিবেচনাধীন। সমস্ত ধরনের আইনি পরামর্শ নিয়ে না এগোলে পরবর্তী সময়ে ঝঞ্ঝাট বাঁধতে পারে। কমিটির স্পষ্ট অভিমত হচ্ছে, অসম চুক্তির মূল যে উদ্দেশ্য, অসমিয়া জনগণের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও ভাষিক ঐতিহ্যের সুরক্ষা, তা পূরণ করতে হবে। সে জন্য সরকারকে দেখতে হবে, প্রস্তাবিত বিল যেন অসম চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন না ঘটায়। অসমের নাগরিক সমাজ সহ উত্তর-পূর্বের মানুষের যে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা, তা দূর করার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে ৬(এ) দফার অধীনে এমন কিছু নীতি-নির্দেশিকা তৈরি করতে হবে, যাতে নাগরিকত্ব বিল আইনে পরিণত হলে আদি বাসিন্দাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে, এই আশঙ্কা কেটে যায়।
৫.৪৮ একদিকে অসম চুক্তিতে ভিত্তিবর্ষ ধরা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, অন্যদিকে প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব বিলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই প্রেক্ষিতে কমিটির মনে হয়েছে, সরকারের উদ্দেশ্য হল ভারতীয় মূলের উদ্বাস্তুরা বিনা দোষে অন্যায়-অবিচারের শিকার হচ্ছেন, তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা। বাংলাদেশ সহ তিন দেশের যে সব সংখ্যালঘু জনতা ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে এ দেশে পালিয়ে এসেছেন, সরকার তাদের প্রতি যে মানবিক দৃষ্টি দেখাচ্ছে, তা প্রশংসার যোগ্য।