NE UpdatesBarak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking News

সুস্মিতার আর্জিতে আধার লক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ

ওয়েটুবরাক, ১২ এপ্রিল: সুপ্রিম কোর্টের এসওপির দোহাই দিয়ে অসমে ২৭ লক্ষাধিক মানুষের বায়োমেট্রিক ‘লক’ করে রেখেছে এনআরসি দফতর। ফলে তাঁরা আধার কার্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, পাচ্ছেন না ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড-সহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা।

তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর পক্ষে সওয়াল করে সোমবার মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেলন বিশ্বজিৎ দেব সুপ্রিম কোর্টে দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের এসওপিতে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার পরেই বায়োমেট্রিক তথ্য খুলে দেওয়ার নির্দেশ ছিল। আরজিআই কর্তৃক ‘নোটিফাই’ করার কথা বলা হয়নি।

তাঁর আরও দাবি, আধারের সঙ্গে নাগরিকত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। তাই এনআরসির কাজের জন্য আধার থেকে বঞ্চিত রাখা বেআইনি ও অসাংবিধানিক। প্রয়োজনে নতুন করে বায়োমেট্রিক নেওয়ার হোক।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, এস রবীন্দ্র ভাট ও পি এস নরসিংহের বেঞ্চ ১৭ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে এ নিয়ে কেন্দ্র, অসম সরকার, আধার কর্তৃপক্ষ ও আরজিআইয়ের বক্তব্য জানতে চেয়েছে।

অসম সরকার অবশ্য ২১ মার্চ বিধানসভায় দাবি করেছে, আরজিআই এখনও এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেনি। তাই বায়োমেট্রিক লক খোলা যাচ্ছে না। কিন্তু ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের উপস্থিতিতে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ফাইনাল এনআরসি’ বলা হয়েছিল। এনআরসির ওয়েবসাইটেও সেই উল্লেখ রয়েছে।

সুস্মিতার আবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর এনআরসির খসড়া তালিকায় নাম না থাকা ৪০ লক্ষের অনেকের বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট পরবর্তী তালিকা প্রকাশ করে আরজিআই ও এনআরসি দফতর। সেখানে ১৯ লক্ষাধিক মানুষের নাম বাদ পড়ে। সব মিলিয়ে মোট ২৭ লক্ষ ৪৩ হাজার মানুষ আধার পাচ্ছেন না। কারণ সরকারের বক্তব্য, তাঁদের বায়োমেট্রিক তথ্য লক হয়ে রয়েছে। যতদিন না এনআরসি চূড়ান্ত হচ্ছে, ততদিন লক খোলা যাবে না।

বিশ্বজিৎ দেব আদালতে বলেন, এসওপিতে রয়েছে, আরজিআই দ্বারা তালিকা প্রকাশের পরে বায়োমেট্রিক তথ্য রিলিজ করা হবে। সেখানে ‘নোটিফাই’ করার উল্লেখ নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেও কোথাও বলা হয়নি যে, এনআরসি না হওয়া পর্যন্ত আধার নম্বর দিতে পারবে না।

 

তিনি আরও বলেন, আধার কার্ডের সঙ্গে এনআরসি বা নাগরিকত্বের সম্পর্ক নেই। আধার আইনে বলা হয়েছে, আবেদন করার ১২ মাস আগে ভারতে ১৮২ দিন বা তার বেশি থাকলেই আবেদনকারী আধার পাওয়া যোগ্য। বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, প্রয়োজন হলে ওই ২৭ লক্ষাধিক মানুষকে আধার দিতে নতুন করে বায়োমেট্রিক সংগ্রহ করা হোক। কিন্তু সংবিধান ও আইনের কোনও ধারাতেই, একই রাজ্যের মানুষদের একাংশের সঙ্গে বৈষম্য করে তাঁদের চাকরি, ব্যাঙ্কের পাশবই, শিক্ষা, রেশন, প্যান কার্ড, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বঞ্চিত রাখা যায় না। এতে সংবিধানের ১৪, ১৯, ২১ নম্বর ধারা ভঙ্গ হচ্ছে।

অসম সরকারের বক্তব্য, ২৭ লক্ষাধিক মানুষের আধার আটকে থাকার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে একাধিকবার কেন্দ্রকে বলা হয়েছে। অসম সরকার এ বার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে, যাতে আদালত কেন্দ্রকে ওই ২৭ লক্ষাধিক মানুষের আধার নম্বর দিতে তথা বায়োমেট্রিক লক খুলে দিতে নির্দেশ দেয়। অসম সরকার এও জানিয়েছে, তারা বর্তমান এনআরসির তথ্য শুদ্ধ বলে মানে না। তাই সম্পূর্ণ রি-ভেরিফিকেশনের আর্জি জানাবে আদালতে। সেই পরিস্থিতিতে এনআরসির কাজ কবে শেষ হবে, তার নিশ্চয়তা নেই। এ নিয়ে ২৭টি দল-সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার জানিয়েছে, ওই ২৭ লক্ষাধিক মানুষকে আধার কার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু আধার পাওয়ার সঙ্গে নাগরিকত্ব পাওয়ার কোনও সম্পর্ক থাকবে না। উল্লেখ্য, এনআরসি সংক্রান্ত মামলার মূল আবেদনকারী অসম পাবলিক ওয়ার্কসও আধারের জন্য বায়োমেট্রিক লক খুলে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker