Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking News
ভাবীকালের চারদিনের সপ্তরাজ রঙ্গ উৎসব ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে, আসছে বাংলাদেশের নাট্যদলও
ওয়েটুবরাক, ২৪ ফেব্রুয়ারি : দ্বিতীয়বারের মতো ভাবীকাল থিয়েটার গ্রুপ শিলচরে ‘সপ্তরাজ রঙ্গ উৎসব’ শীর্ষক নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে। আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৫টায় গান্ধী ভবনে চারদিনের এই উৎসবের সূচনা হবে। এ বছর ভাবীকালের ৪০ বছর পূর্তি উদযাপনের অঙ্গ হিসাবে এই উৎসবকে আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছে ‘টিম শান্তনু’। আসছে বাংলাদেশের নাট্যদল মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়।
শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে উৎসব কমিটির সভাপতি শান্তনু দাস ও ভাবীকালের নির্দেশক শান্তনু পাল জানান, ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ গান্ধী ভবন মঞ্চে প্রতিদিন দুইটি করে নাটক উপস্থাপিত হবে। ৩ মার্চ উৎসবের সমাপ্তি সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হবে শিলচর বঙ্গ ভবন প্রেক্ষাগৃহে। সেদিন পরিবেশিত হবে বাংলাদেশের মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের প্রযোজনা “নীলাখ্যান”।
ঢাকার দলটি ছাড়াও আসছে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের আরও ছয়টি দল। ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম সন্ধ্যায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর পরিবেশিত হবে নৃত্যনীড়, করিমগঞ্জ-এর নৃত্যনাট্য “দেশহারাদের আত্মকথা”। এই সন্ধ্যার দ্বিতীয় নাটক পশ্চিমবঙ্গ নাট্য একাদেমি পুরস্কারে ভূষিত নাটক “ভৌতিক”, পরিবেশন করবে অন্য ভাবনা, বর্ধমান। ১ মার্চের প্রথম নাটক পাথারকান্দি নাট্যজনের “নুপূর মাঝির বৈঠা”, রানিকুঠি জিয়নকাঠি, কলকাতা পরিবেশন করবে ওই সন্ধ্যার দ্বিতীয় নাটক “উজ্জয়িনীর অন্ধকারে”। ২ মার্চ গান্ধীভবন মঞ্চে আজকের প্রজন্ম, শিলচর এর “তিন পুতুলের গল্প” এবং বিশ্বনাথ চারিয়ালির বারনাম থিয়েটারের “তিনিটা রঙ্গিন পখিলা” নাটকদুটি মঞ্চস্থ হবে। এই নাট্য উৎসবকে সফল করে তুলতে দর্শকদের বিনীত অনুরোধ জানায় ভাবীকাল থিয়েটার গ্রুপ এবং উৎসব আয়োজক সমিতির কর্মকর্তা রঞ্জনকুমার দাস, সুব্রত রায় প্রমুখ।
তাঁরা বলেন, জার্মান নাট্যনির্দেশক বারটল্ট ব্রেখটের চিন্তায় ভাবীকাল বিশ্বাস করে, নাটক হলো জগৎকে পাল্টানোর অন্যতম শক্তিশালী এক গণমাধ্যম। আর শিল্পীর কাজ হলো জনগণকে নিয়ে শিল্প সৃষ্টি করা। মানুষের চিন্তাকে স্পর্শ করা, অকল্যাণের বিরুদ্ধে শুভবুদ্ধির প্রচারের দায় নাটকের। তদুপরি রঙ্গমঞ্চের সমস্ত প্রচেষ্টার মূল লক্ষ্য হলো সমাজ এবং দেশে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করা। এই কারণেই ভাবীকালের এই সপ্তরাজ রঙ্গ উৎসবের আয়োজন।
উল্লেখ্য যে, ভাবীকাল এবং তার নাট্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কলা একাডেমি যৌথ উদ্যোগে ২০০৭ সাল থেকে উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক ভাবে প্রতি বছর যুব ও শিশু নাট্য কর্মশালার আয়োজন করে আসছে। এ ছাড়াও নিয়মিত ভাবে কর্মশালাভিত্তিক নতুন প্রযোজনা নিয়ে দর্শকদের সামনে দাঁড়িয়েছে ভাবীকাল। বিগত ৪০ বছরে ভাবীকাল ৪১টি ছোট নাটকের ১৪৫ রজনী ও ১৩টি বড় নাটক ২৬টি রজনীতে আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ, বাংলাদেশ সহ দেশে এবং বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চস্থ করে শিলচরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নাট্যচর্চায় সামান্য সংযোজন রাখতে পেরেছে।
সংস্থার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে শান্তনু পালের পরিচালনায় ‘হনুয়া কা বেটা’ ৫৪বার, ‘গগনচাঁদ আসছেন’ ১৮ বার, ‘মনসা ১২ বার, কোর্টমার্শাল’ ১৭বার, ,’চোর’ ১৬বার, অচলায়তন ১১বার, ‘সদানন্দ দ্যা ইডিয়ট’ ৮বার, ‘হুক্কা হুয়া উপকথা’ ৬বার, ম্যাকবেথ ৬বার, ‘বল্লভপুরের রূপকথা’ , মহা নির্বাণ, এবং ‘মৃত্যুর সাথে অভিসার’, ‘আজও বহমান’ অনাগত, ইত্যাদি । এছাড়াও ভাবীকাল, বিশ্বরূপ দাস, দেবাশীষ পাল ও প্রয়াত বাপী সেনগুপ্তের পরিচালনায় ভাবীকালের ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’, ‘সংকট” ‘তেঁতুলগাছ’, ‘তীরবিদ্ধ শিকার’ ইত্যাদি নাটকগুলি একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়ে সংস্থাকে শোভিত করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কাজে যেমন কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতালকে আর্থিক সাহায্য প্রদান, সময়ে সময়ে ফ্রি মেডিকেল হেলথ চেকআপের আয়োজন করা, গরীব ছাত্রদের বিনা পয়সায় শিক্ষাদান ইত্যাদিতে ভাবীকাল নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে ।
ভাবীকালের প্রাণপুরুষ শান্তনু পাল আরও জানান, এই চার দশকের যাত্রাকে স্মরণীয় করে তুলবার লক্ষ্যে ‘ সপ্তরাজ রঙ্গ উৎসব’ এর উদ্বোধনের প্রাক্কালে “নাটকের জন্য পথচলা” শীর্ষক একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক শোভাযাত্রা আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে আয়োজক সমিতি । ২৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪-৩০ মিনিটে শিলচর গোলদিঘি মল থেকে শুরু হয়ে সংক্ষিপ্ত পথচলা শেষ হবে গান্ধী ভবনে । এই পথচলায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানার সহ নাট্যকর্মী-অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং সকল সদস্যদের সামিল হবার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।