Barak UpdatesHappeningsBreaking News
গ্রহণ চলুক নিজস্ব স্টাইলে, লিখেছেন ড. হিমাদ্রি শেখর দাস
চাঁদের রক্তাক্ত রূপ দেখে ভয় লাগা অস্বাভাবিক নয়! পূর্ণিমার রাতে চাঁদের সোনালি রূপ দেখেই যখন চোখ অভ্যস্ত, তখন হঠাৎ একটি বিশেষ দিনে তার ওপর আঘাতের চিহ্ন দেখার পর কার মন না বিচলিত হয়! চাঁদকে যারা ভালোবাসেন তাঁরা ওকে দুর্যোগ থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায় এই নিয়েই চিন্তা করতে থাকেন। সেই বিশেষ দিনে চলে গান এবং প্রার্থনা। তাঁরা বিশ্বাস করেন এতেই নাকি চাঁদের আঘাত শুকিয়ে যাবে। আবারও ঝলমলে হয়ে উঠবে রাতের আকাশের প্রিয় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক! প্রার্থনা বিফলে যায় না। চাঁদ আবার সুস্থ হয়ে ওঠে। ক্যালিফোর্নিয়ার নেটিভ আমেরিকান হুপা এবং লুইসিনো জনজাতির লোকেরা চাঁদের জন্য এভাবেই একসময় প্রার্থনা করতেন। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর এক কোণায় কিছু জনজাতি লোকদের এই অনন্য ভাবনার কাহিনি বেশ চমকপ্রদ, তাই না?
ভারত তথা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে চন্দ্র অথবা সূর্যগ্রহণের সময় কুসংস্কার নামক রাহু গ্রাস করে মানুষের চিন্তা ও মননকে।
গ্রহণের সময় প্রচলিত কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা অনেকেই করেন না। কুসংস্কারের প্রলেপ একটু গাঢ় হয়ে যাওয়ার জন্যই বোধ হয় এই ঘটনা ঘটে। বিজ্ঞানের ভাবনা মস্তিষ্কের অন্দরে পৌঁছানোর আগেই গায়েব হয়ে যায়। হাজার যুক্তি ভোঁতা হয়ে যায় প্রচলিত অন্ধবিশ্বাসের জন্য। বিজ্ঞানীদের চন্দ্রবিজয়ও ভাবনায় তুফান তোলে না। আসলে কুসংস্কার নামক নেশায় তাদের ভাবনা হাইজ্যাক হয়ে যায়। একজন জ্যোতির্বিদের বদলে জ্যোতিষীর বাণী কানে মধু লাগে। গ্রহণের সময় রাহু-কেতুর সঙ্গে বারো রাশির খেলা শুরু হয়ে যায়। জাতকদের ভাগ্য নিয়ে চলে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দৈনিক পত্রিকা থেকে টিভির পর্দা…বিজ্ঞানের পাশাপাশি অপবিজ্ঞানও এগিয়ে চলে।
গ্রহণের দিন চন্দ্র এবং সূর্য যেন প্রাণ ফিরে পান! বছরের বাকি দিন এই দুই মহাজাগতিক বস্তু নির্জীব হলেও ওই বিশেষ দিনে তারা পৌরাণিক কাহিনীর চরিত্র হয়ে ওঠেন। চিন, জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়া…সর্বত্র এক চিত্র। আসলে অলীক ভাবনাতেই কিছু লোক আনন্দ খুঁজে পান। টিভিতে গ্রহণ দেখবো, কিন্তু সরাসরি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখবো না…এমন চরিত্রের মানুষ এই উন্নত সভ্যতায় এখনও খুঁজে পাওয়া যায়। গ্রহণ নিজের স্টাইলে চলুক, আমি নিজের মত চলবো…এমন লোকদের প্রণিপাত করেই কলম থামাচ্ছি। বোধোদয় হোক তাঁদের।
( ড. হিমাদ্রি শেখর দাস আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক)