Barak UpdatesHappeningsBreaking News
কাঁটাতার পেরিয়েই দুর্গাপূজা করিমগঞ্জের বাখরশালে
ওয়েটুবরাক, ১২ অক্টোবর : কাঁটাতারের বেড়ার এ পারে তাদের বাড়িঘর৷ ও পারে দুর্গামন্দির৷ করিমগঞ্জ জেলার বাখরশাল এলাকার মানুষ গেট পেরিয়েই মন্দিরে যান, পূজা দেন৷ দুর্গাপুজোর চারদিন এপার-ওপার একাকার হয়ে যায়৷ রাত দশটা পর্যন্ত গেট খোলা রাখে বিএসএফ৷ মানিকপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের ঠিক পেছনেই কুশিয়ারা নদী৷ কুশিয়ারা-ই দুই দেশের সীমান্ত ৷
আসলে কুশিয়ারার এ পারেই ছিল মানিকপুর গ্রাম৷ নরেন্দ্র মালাকারের জমিদারি৷ কিন্তু কুশিয়ারার ভাঙনে অধিকাংশই চলে যায় বাংলাদেশের জকিগঞ্জে৷ ভাঙন থেকে বেঁচে যায় দুর্গাবাড়ি৷ জমিদারি না থাকলেও মানিকপুরের শেষ জমিদার নরেন্দ্র মালাকার প্রতি বছর জাঁকজমক সহ দুর্গাপূজা করেছেন৷ চারদিন ধরে যাত্রা হতো তখন৷ তাঁর মৃত্যুর পর জাঁকজমক কমে যায়৷ তবু ছোট ভাই হৃদয়রঞ্জন পূজাটা ধরে রেখেছিলেন৷ ১৯৯৪ সালে হৃদয়রঞ্জনও প্রয়াত হন৷ এর পরই শুরু হয় সম্পত্তি বিবাদ৷ বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের গেট৷
তখন কাঁটাতার ছিল না৷ তবু বিতর্কিত জায়গায় পা মাড়াতে যাননি এলাকাবাসী৷ কয়েক বছরের মধ্যে মন্দির ঝোঁপঝাড়ে ঢেকে যায়৷ কিন্তু ২০০৮ সালে সীমান্তের দেড়শো গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের সময় দুটি ঘটনা সবাইকে চমকে দেয়৷ তখনই মন্দির সংস্কারে হাত লাগান তাঁরা, জানিয়েছেন অপু মালাকার, চম্পক মালাকার, পরিমল মালাকার-রা৷
প্রথম ঘটনা, নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে থাকেন এলাকার এক মুসলমান যুবক৷ ছুটিতে বাড়ি এসে এলাকার তৎকালীন পঞ্চায়েত সদস্য অপু মালাকারকে খুঁজে বের করেন৷ জানান, স্বপ্নে দুর্গাদেবী তাঁকে মন্দির সংস্কার করতে বলেছেন৷ অপুরা এতে বিশেষ গুরুত্ব দেননি৷ কিন্তু কিছুদিন পরে এক বিএসএফ জওয়ানও একই স্বপ্নের কথা শোনান৷ এর পরই মোবারকপুর বিওপি-র সীমান্ত রক্ষীরা গ্রামবাসীদের নিয়ে মন্দির সংস্কারে হাত লাগান৷ নিজেরা দেন টিনের চাল তৈরির পুরো খরচ৷ ফের শুরু হয় মানিকপুর মন্দিরের দুর্গাপূজা৷ প্রতি বছর জওয়ানরা স্বেচ্ছায় পুজোর চাঁদা দেন৷ পানীয় জলের ব্যবস্থাটাও তাঁরাই করেন৷
মানিকপুরের দুর্গাবাড়ির বিশেষত্ব হল, দশমীতে নয়, এখানে ষষ্ঠীর বিকালে ধুমধাম সহকারে আগের বছরের প্রতিমা বিসর্জন হয়৷ দশমী তিথিতে শুধুই নবপত্রিকা নদীতে ভাসান তাঁরা৷ নতুন প্রতিমা সারা বছর মন্দিরে পূজিতা হন৷ জমিদারের মন্দিরের দেড়শো বছরের পুরনো রীতিকেই আঁকড়ে রয়েছেন বাখরশালবাসী৷ মন্দির পরিচালনায় সাহায্যের হাত বাড়ান জবাইনপুর, সরিষা, চরাকুড়ি, শীতলপাড়া প্রভৃতি গ্রামের মানুষও৷ পূজা কমিটির সভাপতি পরিমল মালাকার জানিয়েছেন, চারদিনে হাজার দশেক পুণ্যার্থী খিচুড়ি খান৷ সবাই কাঁটাতারের ও পারে গিয়ে দুর্গাদেবীকে প্রণাম করেন, এ পারে এসে প্রসাদ নেন৷