Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
সুতারকান্দি এসেও ভারতে ঢুকতে না পেরে চিন্তায় পড়ে যাই, লিখেছেন হিমাংশু দে
//হিমাংশু দে //
ভাগ্নের বিয়ে উপলক্ষে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম৷ ১৩ মার্চ বিয়ে ছিল৷ ১১ তারিখে এখান থেকে রওয়ানা হই৷ শিলচর থেকে জকিগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশের কুলাউড়া —- কতটুকু আর সময় লাগে! সন্ধ্যার আগেই পৌঁছে যাই বোনের বাড়ি৷ বিয়ের সব অনুষ্ঠান সুন্দরভাবেই শেষ হয়৷ বাংলাদেশেও আমাদের মতই বিয়ের জাঁকজমক৷ একে বিদেশি অতিথি, তার ওপর অনেক আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে জীবনে প্রথম দেখা৷ ফলে আদরযত্ন, গুরুত্ব যা মিলছিল, বলতে হয় অপ্রত্যাশিত৷
কিন্তু সে তো সবে শুরু৷ বিয়ের সমস্ত অনুষ্ঠান সারার পর বাংলাদেশ ভ্রমণের মূল আনন্দ টের পাই৷ এ বাড়ি দুপুরের খাওয়া, ও বাড়ি রাতের নেমন্তন্ন৷ কত রকমের রান্না যে! বেশি ভাল লাগছিল, অধিকাংশ জিনিস নিজেদের বাড়িঘরের৷ পুকুরের মাছ, বাড়ির সবজি, ঘরের দুধ৷ বাংলাদেশের অনেক গল্প অনেকের মুখে শুনেছি৷ কেউ কেউ বলেন, এখন নাকি সব বদলে গিয়েছে৷ কিন্তু আমি দেখে এলাম, খাওয়া-দাওয়া, আদর-আপ্যায়ণে বাংলাদেশ আগের জায়গাতেই রয়েছে৷
এত আনন্দের মধ্যে করোনা ভাইরাসকে কে আর পাত্তা দেয়! এর কথা কখনওসখনও শুনেছি৷ বাংলাদেশেও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছিল৷ কিন্তু মাথায় আকাশ ভাঙে ২৪ মার্চ তারিখে৷ ‘লকডাউন’ শব্দটার সঙ্গে সে দিনই পরিচয় হয়৷ জানলাম, সীমান্ত পেরনোর তো প্রশ্নই ওঠে না, ভারতে বাড়ি থেকে বেরনো নিষেধ৷
প্রতিদিন বাড়িতে ফোনে কথা হচ্ছিল৷ অনেকে এখান থেকে হোয়াটস অ্যাপে নিয়মিত খবরাখবর দিচ্ছিলেন৷ এরপর বাংলাদেশের আত্মীয়দের আতিথেয়তা৷ তবু ভারতে ফিরে দুই দফার কোয়রান্টিন পর্ব সেরে সোমবার যখন শিলচর শহরে বের হই, সে যে কী আনন্দ, বলে বোঝানো যাবে না৷
লকডাউনে আটকে পড়লেও বাংলাদেশে আড়াই মাস বিন্দুমাত্র সমস্যা বোধ হয়নি৷ এই বাড়ি, ওই বাড়ি খুব ঘুরলাম৷ পাড়ার মধ্যে লকডাউনের প্রভাব একেবারেই ছিল না৷ এর পরও ফিরতে পারার অনিশ্চয়তা যে কী যন্ত্রণার, টের পেয়েছি প্রতিদিন প্রতিক্ষণ৷
যন্ত্রণাটা বেড়ে গিয়েছিল গত ১৮ মে৷ ওইদিককার প্রেস ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে মৌলবীবাজারের জেলাশাসকের অনুমতি আদায় করি৷ একে সম্বল করে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরোতে কোনও সমস্যা হয়নি৷ পরে ঢুকে পড়ি করিমগঞ্জের সুতারকান্দিতে৷ কিন্তু পুলিশ ভারতীয় কমিশনের অনুমতি দেখতে চায়৷ মৌলবীবাজারের জেলাশাসকের অনুমতিপত্র দেখে বললেন, সীমান্ত পেরনোর জন্য সে দেশের জেলাশাসকের অনুমতি যথেষ্ট৷ কিন্তু দেশে ঢোকার জন্য ভারতীয় হাই কমিশনের চিঠি চাই৷ করিমগঞ্জ থেকে ফিরে গেলাম৷
মহাচিন্তায় পড়ে যাই৷ ভাগ্যিস, বাংলাদেশে আবার ঢুকতে গিয়ে তাদের চেকপোস্টে কোনও আপত্তি করেনি৷ এ বার আর কুলাউড়া ফিরে যাইনি৷ সিলেটেই এক আত্মীয়বাড়িতে উঠলাম৷ কিন্তু আমাকে তো বাড়ি ফিরতে হবে!
শেষে যোগাযোগ করে জানতে পারি, বিদেশে আটকে পড়াদের ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে অসম সরকার৷ অনলাইনে আবেদন করতে হয়৷ তা-ই করলাম৷ শেষে ২৮ মে ভারতে ফিরি৷ সে থেকে কোয়রান্টিনেই কাটাই৷ প্রথমে হোটেলে, পরে বাড়িতে৷ সোমবার বাড়ি থেকে শিলচরে ঘুরতে বেরিয়ে বুঝলাম, নিজের শহর নিজেরই! আহ্ কী যে অনুভূতি!