Barak UpdatesHappeningsBreaking News
সিভিল হাসপাতাল আধুনিকীকরণের দাবিতে মঞ্চ গঠিত, কমল চক্রবর্তী মুখ্য আহ্বায়ক
ওয়েটুবরাক, ৪ অক্টোবর : বিজ্ঞান ভিত্তিক সংস্থাগুলোর সম্মিলিত মঞ্চ ‘মার্চ ফর সায়েন্স, শিলচর চ্যাপ্টার’ এর উদ্যোগে শিলচরে সঙ্গীত বিদ্যালয়ে সিভিল হাসপাতালের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এক নাগরিক সভা আয়োজিত হয়। রবিবার সভার শুরুতে মঞ্চের পক্ষ থেকে কৃষাণু ভট্টাচার্য সিভিল হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে মধুমিতা দেব সিভিল হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে মঞ্চের মূল প্রস্তাব পাঠ করেন।
প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সিভিল হাসপাতালের শতবর্ষ পালন উপলক্ষে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একটি ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ আজ অবধি তা বাস্তবায়ন হয়নি। এসএস কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ পরিতোষ চন্দ্র দত্ত বলেন, শহরজুড়ে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হাসপাতালের সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও খরচের বহর সেখানে এতই বেশি যে এতে সাধারণ মানুষ সেগুলোতে চিকিৎসা করাতে পারে না। সিভিল হাসপাতালও সরকারি অবহেলায় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। শিলচরের জনগণ এগিয়ে না এলে হাসপাতালটি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন-এর সভাপতি সিহাব উদ্দিন আহমেদ সিভিল হাসপাতালের সমস্যাগুলো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করানোর প্রস্তাব দেন। তিনি করিমগঞ্জ জেলায় মেডিক্যাল কলেজ চালুর ব্যাপারেও এগিয়ে আসতে সবাইকে অনুরোধ করেন৷ বলেন, এতে শিলচরের স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর চাপ কমবে। নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত সিভিল হাসপাতালে থাকা বিভাগগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, কর্মচারী, পরিকাঠামোর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করে সরকারের কাছে দাবি তুলে ধরতে প্রস্তাব দেন।
ড. এ পি জে আব্দুল কালাম আজাদ মেমোরিয়াল ফোরামের প্রধান হারাণ দে বলেন, শিলচরের সিভিল হাসপাতালের অবস্থা করিমগঞ্জ বা হাইলাকান্দির সিভিল হাসপাতাল থেকেও খারাপ। এ অবস্থায় সর্বশ্রেণীর মানুষকে পাশে নিয়ে সিভিলের অবস্থা পাল্টাতে আন্দোলনমুখী হওয়ার প্রস্তাব দেন। বরাক ভ্যালি ভলান্টারি ব্লাড ডনেশন ফোরাম-এর পক্ষে মধুসুদন কর সিভিলের ব্ল্যাড ব্যাংকে রক্তের অনুদান পৃথকীকরণের যন্ত্র দ্রুত সরকারকে প্রদান করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ করে তা ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার দাবি তোলেন।
কাছাড় স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা, আইনজীবি আব্দুল হাই লস্কর সিভিল হাসপাতালের সমস্যা সমাধানে একটি মঞ্চ গড়ে দাবি আদায়ে আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন এবং প্রয়োজনে আইনি পথে যেতে বলেন। বরাক ভ্যালি হিউম্যান রাইটস প্রোটেকশন কমিটির পক্ষে নির্মল কুমার দাস উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন জানিয়ে সিভিল হাসপাতাল নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন৷ তিনি সবাইকে একত্রিত হয়ে অবস্থা পরিবর্তনে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি গ্রামীণ হাসপাতালগুলোর সমস্যা সমাধানে আন্দোলন গড়ে তোলারও প্রস্তাব দেন।
‘পাব্লিক ভিউ’ এনজিও’র পক্ষ থেকে কনক পাল দাবি আদায়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন। মৌলিক অধিকার রক্ষা মঞ্চের পক্ষে অসিত রায় সিভিল হাসপাতালের সমস্যাগুলো নিয়ে দাবিসনদ তৈরি করে জনগণের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে সরকারের নিকট পেশ করার প্রস্তাব রাখেন। ‘রূপম’ সাংস্কৃতিক সংস্থার নাটক প্রতিযোগিতা সম্পাদক সত্যজিৎ দে একটি স্বতন্ত্র কমিটি গঠন করে দাবিসনদ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যানার, প্রচারপত্র তৈরি ও বিলির প্রস্তাব দেন৷ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করার প্রস্তাবেও সায় জানান।
‘স্বজন’ এনজিও’র পক্ষ থেকে মিঠুন বিশ্বাস হাসপাতালের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রস্তাব রাখেন। থাউজেন্ড সায়ন্তনের পক্ষে সৌমিত্র শংকর চৌধুরী সিভিল হাসপাতালকে একটি জাতীয় স্তরের হাসপাতাল হিসাবে গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কমল চক্রবর্তী, হানিফ বড়ভূঁইয়া, খাদেজা বেগম লস্কর প্রমুখ। নাগরিক সভায় উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোকে সংযোজিত করে পিপলস সায়েন্স সোসাইটির সহ-সভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য তা অনুমোদনের জন্য সভায় উত্থাপন করেন। নাগরিক সভার সভাপতিমন্ডলীর পরিচালনায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং ‘শিলচর সিভিল হাসপাতাল আধুনিকীকরণ দাবি কমিটি’ কাছাড়, নামে একটি মঞ্চ গঠিত হয়। মঞ্চের মুখ্য আহবায়ক হিসাবে মনোনীত হয়েছেন কমল চক্রবর্তী৷ যুগ্ম সম্পাদক সুরজিত সোম ও হানিফ বড়ভূঁইয়া। সভার সভাপতিমন্ডলীর সদস্য গুণাকর দাস সভায় উপস্থিত সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।