Barak UpdatesBreaking News
মানবিকতার লেশমাত্র ছিল না প্রশাসনের, অভিযোগ গণনাকর্মীদের
১৮ ডিসেম্বর : জেলার মানুষ যখন শীতের রাতে কম্বল গায়ে জড়িয়ে বাড়িতে বসে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের অপেক্ষায়, তখনও কিন্তু ওরা রাত জেগে গুণে যাচ্ছিলেন একের পর এক ব্যালট। সাধারণ মানুষের এই সরকারি কর্মীদের কথা ভাববার সময় নেই, আর ভাবার কথাও নয়। আপাতদৃষ্টিতে দেখতে গেলে সরকারি কর্মীরা অর্থের বিনিময়ে সরকারের কাজই করেছেন। কিন্তু মানবিক দিক দিয়ে ভাবলে অন্তত একবার আমাদের মনে আসবেই, এই যারা শীতের রাতে ঠাণ্ডার মধ্যেও ভোটের বাক্সগুলো গুণে চলেছেন, তাঁরা কি ঠিকমতো খাবার পেয়েছেন ? কাজ করতে করতে একঘেয়েমি ও আলস্য কাটাতে তাঁদের কি কেউ চা-বিস্কুট দিয়ে গেছে ? বা কাজের শেষে বরাদ্দ পারিশ্রমিকটাই কি তাঁরা ঠিকঠাক পেয়েছেন ?
কাছাড় জেলার ২৭টি জেলা পরিষদ, ১৬২টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত সভাপতি ও আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য এবং ১৬২০টি গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যের ভোটগণনা শেষে এ সব এখন লক্ষ টাকার প্রশ্ন। কারণ ভোট গণনা কেন্দ্রের অন্দরে কান পাতলেই শোনা গিয়েছে গণনা কর্মীদের বিরক্তি, অসন্তোষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তা যে একেবারেই জানে না জেলা প্রশাসন, তাও কিন্তু নয়। অনেকে বার বার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের কাছে গিয়েছিলেন অভিযোগ নিয়ে। লাভ হয়নি। কেউ নিজের গা বাঁচিয়ে সরে পড়েছেন, আবার কেউ এই দায়িত্ব তাঁর নয় বলে অন্য রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছেন। ফলে ১৪টি গণনা হলের প্রায় প্রতিটিতেই কর্মীরা উষ্মা নিয়ে কাজ করেছেন। কোনও কোনও হলে অভিযোগ জানাতে গিয়ে অফিসারদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও অবস্থার একচুলও পরিবর্তন হয়নি।
প্রথম দিন সকালে প্রাথমিক কিছু কাজের জন্য গণনা শুরু হতে দেরি হয়। কোনও কোনও হলে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টায় বেজে যায়। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সূচি অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত গণনার দায়িত্বে মহিলারা। আর রাত ৮টা থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত পুরুষ কর্মীরা। রাতের গণনা কর্মীদের রিপোর্টিং টাইম ছিল সাড়ে সাতটা। সে অনুযায়ী তাঁরা এসেও গিয়েছিলেন। কিন্তু হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রতিটি টেবিলের দায়িত্বে থাকা অফিসার পদমর্যাদার কর্মীরা মহিলাদের বাধ্য করলেন ৮টার অনেক পরেও কাজ চালিয়ে যেতে।
এক মহিলা কর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী, “আমাদের আগের বাক্সটি শেষ হয়েছে সাড়ে সাতটা বা ৭টা ৩৫ মিনিটে। ততক্ষণে রিলিভার এসেও গেছেন। কিন্তু আমাদের ২০ মিনিট বাকি আছে বলে আরেকটি বাক্স খুলতে বাধ্য করা হল। একটি বাক্স গুণে শেষ করতে প্রায় দু’তিন ঘণ্টা লাগে। সেই হিসেব অফিসারদের আছে। তারপরও নতুন বাক্স গুণতে বসে যেই ৮টা বাজলো, তখন আমরা (মহিলারা) উঠতে গেলে আধিকারিক বললেন, ‘আপনারা বাক্স খুলেছেন, তা শেষ করে যেতে হবে।‘ তখন আমরা বলেছি, যতটুকু করেছি, তার পর থেকে অন্যরা শুরু করুক, কিন্তু কিছুতেই ওই আধিকারিক মানলেন না। ফলে বাক্সটি শেষ করতে প্রায় ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা বেজে গেল।“
অন্য এক মহিলা কর্মী ক্ষোভ ব্যক্ত করে বললেন, ‘আমরা যখন সাড়ে দশটার পর আইএসবিটি চত্বর থেকে বেরিয়েছি, তখন শহরে যাওয়ার জন্য সেখানে কোনও বাস ছিল না। তাছাড়া বাইরের অপেক্ষমান জনসমুদ্র ডিঙিয়ে রাস্তায় পৌছতেই ১১টা বেজে গিয়েছিল। এরপর প্রায় ৬০০টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করে প্রত্যেককে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। এ রকম অব্যবস্থা এর আগে কখনও দেখিনি। তাছাড়া আগে জানলে অন্য ব্যবস্থাও করা যেত।“
এক পুরুষ গণনা কর্মী অভিযোগ করেন, রাত সাড়ে ১১টায় যখন খাবারের প্যাকেট সবাইকে দেওয়া হল, তখন তা খুলতেই সবার চোখ কপালে উঠল। খাবারের মান যতই নিম্নমানের হোক, শীতের রাতে অন্তত গরম ডাল ভাত হবে, এই বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ঠাণ্ডা খাবার পরিবেশন করায় ক্ষুধার পেটেও বেশিরভাগই তা মুখে তুলতে পারেননি। এরপর শেষরাতে ওয়ান টাইম কাপে যে লাল চা এল, তাও ঠাণ্ডা। সঙ্গে একটা বিস্কুট পর্যন্ত নেই।
দ্বিতীয় দিন ভোরের দিকে অনেক টেবিলেই গণনা শেষ হয়ে গেছিল। কিন্তু প্রথম দিনের মতো পারিতোষিক অনেকের কপালেই জোটেনি। হলের ম্যাজিস্ট্রেট বা ট্যাবুলেটরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তাঁরা পার্সোন্যাল সেলের রাস্তা দেখিয়ে দেন। পার্সোন্যাল সেলে গিয়ে দেখা যায়, তালাবন্ধ। ফলে অনেকেই খালি হাতে ফিরে যান।
অন্যদিকে দ্বিতীয় দিন সকালে কয়েকটি টেবিলে গণনা চলছিল। সোয়া সাতটা নাগাদ একটি বাক্স শেষ হওয়ার পরও ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে নতুন বাক্স খুলতে বাধ্য হন গণনা কর্মীরা। আর স্বভাবতই তা শেষ হতে হতে বেলা ১০টা। কিন্তু সকাল থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত এই কর্মীদের ব্রেকফাস্ট এলেও দেওয়া হল না। বরং নিয়ম দেখিয়ে তাঁদের বলা হল, ব্রেকফাস্ট শুধুমাত্র দিনের কর্মীদের জন্য, রাতের কর্মীদের তা দেওয়া যাবে না। ফলে খালি পেটেই বেলা ১০টা পর্যন্ত গণনা করতে হয়েছে রাতের কর্মীদের। অনেকেই টাকা খরচ করে খেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সে সুযোগও রাখেনি প্রশাসন।
এছাড়া শৌচাগারের অভাব, একই বাসে গাদাগাদি করে যাওয়া-আসা ইত্যাদিতে এ বারের গণনা পর্ব মোটেই সুখকর ছিল না। আর এসব কারণে রাজ্যের অন্য জেলাগুলোতে গণনা শেষ হয়ে গেলেও কাছাড় জেলায় তা সম্পূর্ণ হতে অনেক দেরি হয়েছে। কেউ কেউ তো প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, কেন জেলার কর্মীদের এমন শাস্তি দিল প্রশাসন ? মানবিকতা বলে কি কিছু নেই প্রশাসনের আধিকারিকদের
|
|
|