Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story

পরীক্ষা ! ধসের দরুন গুয়াহাটিতে যেতেই পারলাম না, লিখেছেন দেবস্মিতা পুরকায়স্থ

ঘোষণা ছাড়াই নেটের সেন্টার শিলচর থেকে প্রত্যাহৃত

//দেবস্মিতা পুরকায়স্থ//

নেট পরীক্ষায় বসার জন্য গত মাসেই ফর্ম পূরণ করি। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি গ্রহণের পর এই বছরের মার্চে নেট পরীক্ষায় প্রথম বসেছিলাম। তখনও অনলাইন আবেদনের সময় শিলচরের নাম স্পষ্ট ভেসে উঠেছিল। এই অঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা খুব স্বাভাবিক কারণে শিলচরকে পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেয়। এ বার পরীক্ষা কেন্দ্র পছন্দ করে নেওয়ার সময়ও শিলচরের নাম উল্লেখ করা হয়। অন্যদের মতো আমিও নিজের শহরের পরীক্ষা কেন্দ্রটিতেই টিক মার্ক করি। প্রস্তুতি চলছিল, ১৫ জুন পরীক্ষার দিনে সকালে উঠে নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই শিলচর এনআইটিতে চলে যাব। তাড়াহুড়োর ব্যাপার নেই।  ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষাটা দেব। কিন্তু ১০ তারিখে অ্যাডমিট কার্ড ইস্যু হয়। তাতে আমার পরীক্ষার কেন্দ্র লেখা রয়েছে গুয়াহাটি। ভাবলাম, শিলচর লিখতে গিয়ে হয়তো ভুল করে  ফেলেছে।  চিঠি লিখলাম ইউজিসি-কে।  জবাব নেই।  উৎকণ্ঠা বাড়তে  লাগল।  বন্ধুদের মধ্যে যারা নেটে বসছে, তাদের  সঙ্গে যোগাযোগ করি।  সকলেরই এক অবস্থা। বোঝা গেল, শিলচর থেকে নেট পরীক্ষার কেন্দ্র প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

কেন আচমকা কেন্দ্রটি তুলে নেওয়া হল? তুললেই যখন তবে আর ফর্ম পূরণের সময় পরীক্ষাকেন্দ্র হিসেবে শিলচরের নাম কেন রাখলে?  কাকে যে এইসব প্রশ্ন করা! মেল করলে জবাব মেলে না। হেল্পলাইন দেওয়া থাকলেও  ফোন করলে কেউ ধরে না। শেষে গুয়াহাটি যাওয়ার জন্যই প্রস্তুত হতে থাকি। প্রথমে ট্রেনের টিকিট কাটতে চেষ্টা করলাম।  চার-পাঁচদিনের মধ্যে শিলচর-গুয়াহাটি কোনও ট্রেনের টিকিট নেই।  এমনকী, বদরপুর-গুয়াহাটিও নয়।  অগত্যা ১৪ জুনের বাসটিকিট কাটলাম। রাতারাতি চলে গিয়ে পরদিন বিকেলে পরীক্ষায় বসব।

বাস যথারীতি এগোতে থাকল। কিন্তু সোনাপুরের আগেই দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন রাত একটা। ঘুমঘুম চোখে গাড়িতে বসেই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করি। শুনতে পাই ধসপতনের কথা।  সোনাপুরের ধস এবং সেখানে মানুষের আটকে থাকার নানা গল্প প্রতিবছর শুনি। আমারও কি ওই অবস্থাই হতে চলেছে ! তাহলে পরীক্ষার কী হবে! এমন কথা মনে আসতেই অস্থিরতা বোধ করতে থাকি। সারাটা রাত এ ভাবেই কাটে। আশা করছিলাম, সকালে একটা ব্যবস্থা হবে। দ্বিতীয় বেলায় পরীক্ষা। ফলে ১২টা-১টায় পৌঁছাতে পারলেও তেমন মুশকিল হবে না। বাস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নড়লই না।  নেট পরীক্ষার্থীদের অনেকে পরীক্ষা দিয়ে যখন বাড়ি ফিরে গিয়েছে, তখন আমি পরীক্ষা না দিয়ে বাড়ি ফেরার চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে উঠি।

দুপুর থেকেই চেষ্টায় ছিলাম, শিলচরে ফেরার কোনও গাড়ি যদি মেলে। কিন্তু সামনে বা পেছনে কোনওদিকে যে গাড়িগুলির নড়াচড়ার সুযোগ নেই। বহু ছোট গাড়ি ফিরে আসার কথা ভাবছে। মুশকিল হল, ঘোরাবে কী করে! ওই করেই সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গেল। প্রবল তৃষ্ণা। একটু জলের জন্য হাপিত্যেশ করছি। সারাদিনে পেটে কিছু পড়েনি। মনের কথা তো বলে লাভ নেই। শরীরও  চলছিল না। তবু শিলচরের দিকে একটু একটু এগোতে থাকি।  লাইন শেষের দিকে যদি কোনও গাড়িকে ফিরে যেতে দেখি। কিন্তু লাইন যে শেষ আর হয় না। হাঁটছি কেবল হাঁটছি। মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি নামছিল।  কখনও ঝিরঝিরে, কখনও বড় বড় ফোঁটা।  তবু হাঁটছি। অন্ধকার চারদিক গ্রাস করার আগে কিছু একটা করতেই হবে। অনেকক্ষণ পরে কিছু গাড়িকে দেখলাম ঘুরে আসছে। কিন্তু এরা কেউ কালাইনের বেশি যাবে না। কী আর করা ! অনেকটা পথ হেঁটে এসেও কালাইন পর্যন্ত সাতশো টাকা দিতে হল।  তবু তো ধসস্থল থেকে আসতে পারলাম। এবার কী হবে ! একটা অটোকে রাজি করানো গেল। ফিরলাম শিলচরে, ফিরলাম পরীক্ষা না দিয়েই। আমি যে বরাক কন্যা! প্রাণে বেঁচেছি, এটাই  শান্ত্বনা।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker