AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/৩৭ঃ উদ্বাস্তুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জনবিন্যাসগত পরিবর্তন করে ফেলেছে, এমন রিপোর্ট নেই
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ৩৭-তম কিস্তি।)
২২ মার্চঃ ৫.১১ যৌথ সংসদীয় কমিটি বুঝতে পেরেছে, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিজ্ঞপ্তি জারি করে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা বিদেশিদের ভারতে বসবাসকে নিয়মিত করতে চেয়েছে। কিন্তু অসম চুক্তি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে আসা বিদেশিদের শনাক্ত করে তাদের বহিষ্কার করতে চেয়েছে। এই অবস্থায় কমিটি বিজ্ঞপ্তি এবং অসম চুক্তির মধ্যে বিরোধ মেটানোর উপায় বের করতে পরামর্শ দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে পরিষদীয় বিভাগ জানায়, অসম চুক্তির সঙ্গে বিলের সম্ভাব্য জটিলতা এড়াতে একটি সংশোধনী যোগ করা যেতে পারে যে, যদি তাঁদের কারও বিরুদ্ধে ২(১)(বি) ধারায় মামলা ঝুলে থাকে, তবে তারা রেহাই পাবেন এবং নাগরিকত্ব আইনের ৬ ধারায় ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ২(১)(বি) ধারার প্রস্তাবিত সংশোধনীর খসড়াও জুড়ে দেওয়া হল।
৫.১২ মূল আইনের ২(১)(বি) ধারার প্রস্তাবিত সংশোধনীর খসড়াটি, ‘২০১৬ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন চালু হওয়ার দিনে এর আওতাধীন যাদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলা ঝুলে থাকবে, তাদের সেই মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হবে এবং তারা ৬ নং ধারা অনুসারে ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পরিষদীয় বিভাগের এই প্রস্তাবে সায় জানায়।
৫.১৩ বহু ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বিলটি আইনে পরিণত হলে উত্তর-পূর্বের জনবিন্যাস এবং আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব ফেলবে। এই আশঙ্কার প্রেক্ষিতে কমিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মতামত জানতে চেয়েছিল। তারা জানায়, এই ধরনের স্পষ্ট কোনও রিপোর্ট নেই যে, বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোনও এলাকার জনবিন্যাসগত অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন করে ফেলেছেন। সংশোধনীটি কিছু বিশেষ শ্রেণির জন্য কার্যকর হবে এবং তারা অনেকদিন ধরে ওইসব অঞ্চলে বসবাস করছেন। এ ছাড়া, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো যেন একে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ভারতে বেশি করে অনুপ্রবেশ না ঘটাতে পারে, সে জন্য ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
৫.১৪ প্রতিবেশী রাষ্ট্র, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষ আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত করতে পারে, এই আশঙ্কার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলে, এই বিলের দরুন অসমিয়া সংগঠন, সংস্থাগুলো এই যুক্তিতে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে যে, বিদেশিদের বোঝা রাজ্যের ওপর চাপানো হবে। তাতে ১৯৭১ সালের পরে আসা বিশাল সংখ্যক বিদেশিও আদি বাসিন্দাদের ছাপিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনেতিক অধিকার ভোগ করবেন। অতীতে রাজ্য সরকারকে পুনর্বন্দোবস্ত প্যাকেজ এবং ক্ষতিপূরণের কথা বলে রাজ্যের জনসংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বারও একই ভাবে বিদেশি পুনর্বাসনের মাধ্যমে হালকা জনবসতি এলাকাগুলোকে ভরে দেওয়া হবে।
৫.১৫ কমিটিকে জানানো হয়, ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভারত সরকার এক চিঠি ইস্যু করে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের (এসওপি) কথা জানিয়ে দেয়। কোন বিদেশিরা নিজেদের শরণার্থী বলে দাবি করতে পারেন, তাতে তারই ব্যাখ্যা রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রক ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো সহ নানা এজেন্সির পরামর্শক্রমে দীর্ঘকালীন ভিসার ব্যাপারেও এসওপি তৈরি করা হচ্ছে।
৫.১৬ এই প্রেক্ষিতে কমিটি এসওপি-র মূল শর্তগুলি জানতে চায় এবং তাতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তাও জানতে চায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানায়, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বরের বিজ্ঞপ্তিতে যারা পড়েন, তাদের https://indianfrro.gov.in-এ গিয়ে দীর্ঘকালীন ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন জানাতে হবে। এই আবেদন পত্রের কাজ দুই দিক ধরে এগোবে। যারা প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিজে অ্যাটাস্টেড করে আবেদন পত্রের সঙ্গে জমা দেবেন, তাদের আবেদন ফরেনার্স রিজিয়নাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসার বিস্তৃত তদন্ত করে দেখবেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলি পরীক্ষা করে দেখবে এবং রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সুপারিশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দীর্ঘকালীন ভিসা মঞ্জুর করবে। অসম্পূর্ণ নথি বা একেবারে নথিহীনদের আবেদন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে তাদের মতামতের জন্য পাঠানো হবে। তাদের দীর্ঘকালীন ভিসা মঞ্জুর হবে ফরেনার্স রিজিয়নাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ফরেনার্স রেজিস্ট্রেশন অফিসারের ফিল্ড ভেরিকেশন, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মতামত, রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সুপারিশের ভিত্তিতে। ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এসওপি পাঠিয়ে বলা হয়েছে, এমনভাবে ভেরিফিকেশন হওয়া চাই যেন, এর সুযোগ নিয়ে কোনও অবাঞ্ছিত ব্যক্তি যেন দীর্ঘকালীন ভিসা পেয়ে না যায়।
চোখ রাখুন—–নাগরিকত্ব/৩৮ঃ এনআরসি-তে নাম না উঠলে ৬ মাসের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে আপিল জানাতে হবে