India & World UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৩-২৪ ও তার পর্যালোচনা, লিখেছেন ড. নবেন্দু বণিক
// ড. নবেন্দু বণিক//
বাজেট নিয়ে আলোচনা করার আগে তার প্রাথমিক ধারণাগুলো জানা আবশ্যক । সাধারণত বাজেট হচ্ছে একটি দেশের আয়- ব্যয়ের হিসাব, একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য সরকারের ব্যয় ও রাজস্ব সমূহের একটি পূর্বাভাস । আমরা জানি, সরকারের হয়ে যারা কাজ করেন তাদের বেতনের ব্যবস্থা , নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামো তৈরি করা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে নানাভাবে উদ্যোগ নিতে হয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত টাকা ব্যয় হবে, সেই পরিকল্পনার নাম বাজেট । রাষ্ট্র আগে ব্যয়ের খাতগুলো নির্ধারণ করে তারপর কোন উৎসগুলো থেকে অর্থ আসবে তা নির্ধারণ করে, অর্থাৎ সরকার আয় করে খরচ বুঝে।
তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না হলে রাষ্ট্র দেশ- বিদেশ থেকে অর্থ ধার করতে পারে, তবে ধার করলে ঋণ পরিশোধ করতে হয়, তা করতে না পারলে দেশ বা রাষ্ট্র দেউলিয়া হতে বাধ্য । সাধারণত সরকার বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেয় । এই উৎসগুলো থেকে ঋণ নিয়ে থাকলে ও ঘাটতি পূরণ করতে পারলে তা অর্থনীতির জন্য বেশ সহনীয়, অর্থাৎ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কিছুটা ঘাটতি থাকা ভালো । এতে অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার বাড়ে, ঘাটতি পূরণের চাপ থাকে, তাতে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। তবে ঘাটতি বেশি থাকাটা আবার ভালো নয় । সাধারণত বাজেটে নির্ধারিত মোট দেশজ উৎপাদনের ( জিডিপি ) ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতিকে মেনে নেওয়া হয় ।
ভারতবর্ষ যেহেতু কল্যাণময়ী রাষ্ট্র, তাই বাজেটে একটি মানবিক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা থাকে৷ এ জন্য নানা ধরনের সামাজিক কার্যসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। তাই রাষ্ট্রের কতগুলো আয়ের উৎস থাকে৷ যেমন প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর ও কর বহির্ভূত আয়৷ এছাড়াও আরও উৎস হলো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভ, সুদ, পরিবহন , থেকে আয়, টোল ও লেভি থেকে আয়,
ইত্যাদি । রাষ্ট্র পরিচালনায় যত ধরনের ব্যয় আছে তা পূরণ করে আয়ের বাকি অর্থ দিয়ে সরকার উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে । এ জন্য বরাদ্দ রাখা অর্থই উন্নয়নের বাজেট।
এবার দেখে নেওয়া যাক এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী ভারতবাসীকে কী কী উপহার দিয়েছেন–
* প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দ বাড়ল ৭৯০০০ কোটি টাকা অর্থাৎ ৬৬%।
*পরিকাঠামো যোজনায় বরাদ্দ ১০০০০ কোটি।
*কৃষি স্টার্ট আপের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন।
*যুব সমাজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নতুন কৌশল যোজনা।
*দেশে ১৫৭ টি নতুন নার্সিং কলেজ হবে।
*মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেট চালু ।
*সিনিয়র সিটিজেনশিপ সেভিংস স্কিমে বিশেষ সুবিধা ।
*সহজতর হবে কেওয়াইসি৷
* প্যান কার্ ই প্রধান পরিচয় পত্র বলে বিবেচিত হবে ।
*মধ্যবিত্তদের জন্য আয়করে সুখবর, তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা।
*বাজেটে আয়করে বিপুল ছাড় ঘোষণা।
*জিনিসের দাম বাড়ল সোনা, পিতল, সিগেরেটের ও দাম কমল মোবাইল ফোন, এলইডি টিভির ।
অন্যদিকে বাজেটে দেখা যায় যে, ভারতীয় মুদ্রার অবনময়ন হয়েছে বিশ্ববাজারে৷ দেশে আমদানি বাড়ছে ও রফতানি কমছে ,খাদ্যে ভর্তুকি কমানো হয়েছে, সারে ভর্তুকি কমানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য যোজনা আশাপ্রদ নয়, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ৬০০০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি ৮.৫ % ধরা হয়েছে, রেলওয়েতে খাদ্য পরিবহন ও টিকিট বিক্রিতে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারিকরণ হওয়ার ফলে খারাপ প্রতিক্রিয়া হবে৷ কেননা পৃথিবী জুড়ে কর্মহীনতা বাড়ছে ও অর্থনৈতিক অভাব দেখা দিয়েছে, বেসরকারি উদ্যোগ থেকে বিনিয়োগ কমছে, তাই বেকারত্ব বাড়ছে।
পরিশেষে এটা বলা যায় যে বর্তমান পরিস্থিতিতে বেকারত্ব কমাতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে, পরিবেশ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে, অসংগঠিত ক্ষেত্র নিয়ে ভাবতে হবে, কৃষি, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প নিয়ে ভাবতে হবে, তবেই বাজেটের ফল ভালো কিছু আশা করা সম্ভব।
((ড. নবেন্দু বণিক সোনাইর মাধব চন্দ্র দাস কলেজের বাণিজ্য শাখার বিভাগীয় প্রধান)