Barak UpdatesBreaking News

দুটো কিডনিই অকেজো, তবু মালতীবালা হাজিরা দিতে আসেন ট্রাইব্যুনালে
Both her kidneys are damaged, yet Malatibala has to appear before Foreigners’ Tribunal regularly

১৭ অক্টোবরঃ সরকারি তরফে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়ে ৪৫ বছর পর বিদেশি বলে সন্দেহ! এ কেমন কথা! এও বুঝি আইন হয়! নথিপত্র হাতে এ প্রশ্নই করে চলেছেন কাটিগড়া কাতিরাইলের মালতীবালা দাস। জানান, ১৯৬৭ সালে মা-বাবা এ দেশের উদ্বাস্তু শিবিরে রেশন পেতেন। সে সব নথি হাতে আছে। ১৯৭৫ সালে সরকার জমি দেয়। সে কাগজও রয়েছে। এর পরও বুঝি বিদেশি!

দুটো কিডনিই প্রায় অকেজো তাঁর। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। দিনমজুর ছেলেরা গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। চিকিতসকরা বলে দিয়েছেন, কিডনি প্রতিস্থাপন নইলে নিয়মিত ডায়ালিসিস। ওইটুকুই চিকিতসা তাঁর। শুনেই পরদিনের ট্রেন ধরে ফিরে আসেন তাঁরা।

৫২ বছরের মালতীবালা দাস এখন বলতে গেলে মৃত্যুশয্যায়। দিনরাত তাঁর একটাই প্রার্থনা, ভারতীয় হিসেবে যেন মারা যেতে পারেন। তাই হাজিরার দিনে স্বামী-ছেলের কাঁধে ভর করেই চলে যান ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। হাঁটতে-চলতে কষ্ট হয়। তবু বলেন, ‘সে সব মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বিদেশি বলে সন্দেহের যন্ত্রণাটা কিছুতেই সইতে পারি না।’

এ টুকু বলেই হাঁপাচ্ছিলেন মালতীদেবী। শত্রুঘ্ন জলের বোতল এগিয়ে দিয়ে মাকে কথা বলতে বারণ করেন। পরে নিজেই বলেন, বাবা পরের জমিতে কৃষিকাজ করতেন। এখন আর শরীর দেয় না। কষ্ট করেই সংসার চলছিল। কিন্তু সুখ-শান্তির অভাব ছিল না। বিপত্তি ডেকে এনেছে ওই এনআরসি। খসড়ায় মায়ের নাম নেই দেখে খোঁজখবর করেন। জানতে পারেন, মায়ের নামে বিদেশি সন্দেহে নোটিশ রয়েছে। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে গিয়ে কাগজপত্র দেখাতে হবে।

পুলিশের সীমান্ত শাখায় ঘাঁটাঘাটি করে দেখেন, শুধু মালতীবালাই নন, নোটিশ ইস্যু হয়েছে স্বামী গৌরাঙ্গ দাসের নামেও। শত্রুঘ্নর কথায়, ১৯৬৫ সালের রিউিউজি রেজিস্ট্রেশন কার্ড আছে ঠাকুর্দা ভরত দাসের নামে। ওই নথি দেখিয়ে এনআরসি-র খসড়ায় নামও উঠেছে তাঁদের। এর পর আবার কীসের নোটিশ! পুলিশ জানিয়েছে, নোটিশ যখন এসেছে, ট্রাইব্যুনালে যেতেই হবে। সবকথা উকিল ধরে সেখানেই বলতে হবে।

কী আর করা! ২০১৭ সাল থেকে ওইভাবেই ট্রাইব্যুনালে আসা-যাওয়া চলছে স্বামী-স্ত্রীর। মাস দেড়েক আগে মালতীদেবীর কিডনির রোগ ধরা পড়ায় সমস্যাটা বেড়ে গিয়েছে।

হোমিওপ্যাথির এক দাগ ওষুধ গিলে নিয়ে সাত সন্তানের জননী বললেন, ‘আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। অন্তত রায়ের দিনটা পর্যন্ত। মৃত্যুর আগে জেনে যেতে চাই, আমি ভারতীয়ই।’

মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি সুস্মিতা দেব বলেন, আমি ট্রাইব্যুনালে গিয়ে মালতীদেবীর সঙ্গে কথা বলে এসেছি। জেনে আশ্চর্য হই, তাঁর নামে বিদেশি সন্দেহে চার-চারটি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালে। এর ওপর ট্রাইব্যুনালগুলিতে কোথাও সরকারি আইনজীবী নেই, কোথাও নেই কপিস্ট-টাইপিস্ট। এনআরসি-ছুট ১৯ লক্ষের মামলা আসার আগেই এই অবস্থা!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker