Barak Updates
এনআরসি রাষ্ট্রসঙ্ঘে, বরাকেও পাকিস্তানের সমালোচনা
এনআরসি ইস্যুতে পাকিস্তানের বক্তব্যের সমালোচনায় মুখর বরাক উপত্যকার বাঙালিরা। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভারতকে দোষারোপ করে সে দেশের বিদেশ মন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, অসমে নাগরিক পঞ্জিকরণের নামে বাঙালিদের দেশছাড়া করার প্রক্রিয়া চলছে। অসমের বিভিন্ন বাঙালি সংগঠন একযোগে আপত্তি জানিয়ে বলেন, এনআরসি ভারতের নিজস্ব সমস্যা। ভারতেই এর সমাধান হবে। এ জন্য পাকিস্তানের মায়াকান্নার প্রয়োজন নেই। নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটি (সিআরপিসি)-র সচিবপ্রধান সাধন পুরকায়স্থ বলেন, পাকিস্তানের ভূমিকাকে মেনে নেওয়া যায় না। পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, এনআরসি ইস্যুতে ভারতের ভুল নীতির জন্যই ভিনরাষ্ট্র সমালোচনার সুযোগ পেয়েছে। তাই ভারতের উচিত, এই ইস্যুতে এমন নীতি মেনে চলা হোক, যাতে কেউ আঙুল তুলতে না পারে।
বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সব্যসাচী রায় বলেন, এনআরসি-র নামে বাঙালিদের দেশছাড়া করার চক্রান্ত চলছে বটে, কিন্তু রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধিবেশনে পাকিস্তানের সে প্রসঙ্গ উত্থাপন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অসমের ৪০ লক্ষ এনআরসি-ছুটের পাশে দাঁড়ানো মোটেও তাদের লক্ষ্য নয়। তাই ভারতকে হেয় করার পাকিস্তানের যে মানসিকতা, বরাক বঙ্গ এর তীব্র নিন্দা জানায়।
বিজেপির প্রদেশ মুখপাত্র, রাজদীপ রায়ের অনুমান, পাকিস্তান এই ইস্যুকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে টেনে নিয়ে আসলে এ দিকে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় তিনি বাঙালি বা অসমিয়া জাতীয়তাবোধ থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবনায় বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন। তাঁর কথায়, উল্লাসকর দত্ত, বিপিন পাল, সূর্য সেনের বংশধররা বিদেশি হতে পারেন না। এ কথা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী অধিবেশনেই এই বিল ফের সংসদে পেশ করা হবে। তিনি আশাবাদী, তা পাশও হবে। সে ক্ষেত্রে বাঙালি উদ্বাস্তুদের কেউ আর বিদেশি বলতে পারবেন না।
এ দিকে, নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করে শরিক দল অগপ সরকার থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। নীতীশ কুমারের সঙ্গে দেখা করে বিল-বিরোধিতায় জোট বাঁধছে। বিজেপির প্রদেশ কোর কমিটির সদস্য রাজদীপবাবুর বক্তব্য, দল তাদের ছাড়া সরকার চালানোর কথা ভাবতে শুরু করেছে। রাজদীপবাবু আজ আগাগোড়া অগপর উদ্দেশে ক্ষোভ ঝাড়েন। তিনি বলেন, যে দল দুই দফায় দশ বছর ক্ষমতায় থেকে বিদেশি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, তারা এখন মেকি দরদ দেখাতে লেগেছে। তাদের অসম চুক্তি বা বিদেশি ইস্যুতে কথা বলার অধিকার নেই এখন। তাঁর কথায়, বাঙালি-অসমিয়া নয়, এই সময়ে আশঙ্কার কথা হিন্দু-মুসলমান প্রসঙ্গ। সর্বানন্দ সোনোয়াল বনাম ভারত সরকার মামলায় সরকারই তথ্য দিয়েছিল, ১৯৭১ থেকে ৯৮ সালের মধ্যে হিন্দুদের জনসংখ্যা বেড়েছে ৪১.৮৯ শতাংশ। মুসলমান ৭৭.৪২ শতাংশ। রাজদীপবাবুর আশঙ্কা, আগামী ২০ বছরে বর্ণ-অসমিয়া হিন্দুরা শিবসাগর-যোরহাটে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বেন।
এনআরসির খসড়াছুটদের পাঁচ নথি বাতিলের ব্যাপারে কেন্দ্র-রাজ্যের হলফনামার প্রতিলিপি পড়ে শোনান তিনি। ভারত সরকারের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, ৫ নথি বাতিল করা ঠিক হবে না। রাজ্য সরকারের হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, অসম সরকার ৫ নথি বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারে না। এখন এগুলিকে দুর্বল নথি বলা হচ্ছে। অথচ আগে এই ধরনের নথি দিয়েই অনেকের উঠেছে। ফলে এক যাত্রায় পৃথক ফল হতে পারে না।