AnalyticsBreaking News
নাগরিকত্ব/২৯ঃ বিদেশি মামলা ঝুলে থাকলেও আবেদনের সুযোগ মিলতCitizenship/29: Opportunity would have been given for applying for citizenship even if case was pending in Foreigners’ Tribunal
(যৌথ সংসদীয় কমিটির অনুমোদন লাভের পর নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল ২০১৬ গত ৭ জানুয়ারি লোকসভায় পেশ হয়। ধ্বনিভোটে পাশও হয়ে গিয়েছে এটি। এ বার রাজ্যসভায় ওঠার কথা ছিল। শেষপর্যন্ত তা আনাই হয়নি। তবে সংসদে সুযোগ না থাকলেও বাইরে এ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকবে। এই প্রেক্ষিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি যে ৪৪০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দিয়েছে, ওয়েটুবরাক পুরো রিপোর্ট ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে চলেছে। আজ এর ২৯-তম কিস্তি।)
১৪ মার্চঃ ২.৪২ অনেকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, হিন্দু, শিখ, পার্সি প্রভৃতি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ না করে নির্যাতিত সংখ্যালঘু বলা ভালো। কারণ সংখ্যালঘু মাত্রই ধর্মীয় সংখ্যালঘু নন। পরিষদীয় বিভাগ জানায়, তাতে বিল আনার উদ্দেশ্যটাই অর্থহীন হয়ে পড়বে। কারণ নির্যাতিত সংখ্যালঘু বললে ধর্মীয় নির্যাতনের ব্যাপারটাই এড়িয়ে যাবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, জাতীয়তা, আদি বাসিন্দা, বিশেষ গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক মতবাদের জন্য নির্যাতিত হয়ে যারা ভারতে প্রবেশ করেছেন, তাদের কথা ভেবে ২০১১ সালে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে কমিটি ছয় জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখেরই পক্ষপাতী।
২.৪৩ অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, ছয় ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখের দরুন সংবিধানের ১৪ ও ২৫ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হবে। তাতে বিলটি আইনি পরীক্ষায় বাতিল হয়ে যাবে। এই প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা ক্যাবিনেট সচিবালয় (র) এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ছাড়াও এ নিয়ে আইন ও বিচার মন্ত্রক, বিদেশ ও প্রবাসী ভারতীয় বিষয়ক মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সবাই সংশোধনী প্রস্তাবের ক্যাবিনেট নোটে সায় জানিয়েছে। পরিষদীয় বিভাগের স্পষ্টীকরণ, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বনাম আনোয়ার আলি সরকার মামলায় (এআইআর ১৯৫২ এসসি-৭৫) সু্প্রিম কোর্টের সাত সদস্যের বেঞ্চ যুক্তিপূর্ণ শ্রেণিবিভাজনের কথা বলেছে। তাই এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের কথা বলা যায় না।
পরিষদীয় বিভাগ এ কথাও জানায় যে, প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সংবিধানের ২৫ নং অনুচ্ছেদও লঙ্ঘিত হবে না। কারণ এই বিল পাস হলে দেশে কোনও ব্যক্তির অবাধে উপাসনা, ধর্মাচরণ বা ধর্ম প্রচারের অধিকারে প্রভাব পড়বে না। আইন বিষয়ক বিভাগেরও অভিমত, ভিন্ন ব্যবস্থা মানেই সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন নয়। বৈষম্য বা ১৪ নং অনু্চ্ছেদ লঙ্ঘনের জন্য কোনও আইন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তেই পারে। আইনটি যদি কিছু মানুষকে এক গোষ্ঠীভুক্ত করে বা কিছু মানুষকে পৃথক করে, তখন আইন তৈরির উদ্দেশ্যটা দেখতে হবে। বিভাগ আরও জানায়, সকলের জন্য সমান অধিকারের মানে এই নয় যে, কোনও পার্থক্য না রেখে সব মানুষের জন্য একই ব্যবস্থা হবে। আসলে এর অর্থ হল, এক অবস্থায় থাকা প্রতিটি মানুষ যেন একই ধরনের সুবিধে ভোগ করে।
এই বিলেও কোনও বৈষম্য না রেখে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষদের একই সুবিধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আইন বিষয়ক বিভাগ ২৫ নং অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের কথায়, এক বিশেষ শ্রেণির মানুষদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হলেও সকল ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার কথা বলা এই অনু্চ্ছেদ লঙ্ঘিত হবে না। বিভিন্ন মামলার রায় উদ্ধৃত করে তারা বলে, যুক্তিপূর্ণ বিভাজন বা গোষ্ঠী তৈরির অধিকার আইনসভার রয়েছে। আইন বিষয়ক বিভাগ সহ বিভিন্ন সরকারি বিভাগের মতামত ও প্রতিশ্রুতিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি মনে করে, ছয় ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখের দরুন সংবিধানের ১৪ বা ২৫ নং ধারা লঙ্ঘিত হয় না। ফলে বিলটি বিচার বিভাগীয় পরীক্ষায় উতরে যাবে। কমিটি তাই মূল আইনের ২(১)(বি) ধারা সংশোধনের প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করছে। তবে সম্ভাব্য সমস্ত জটিলতা এড়াতে এবং আসাম চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে কমিটির সুপারিশ হল, ২(১)(বি) ধারা সংশোধনীতে এই কথারও উল্লেখ থাক যে, ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন চালু হওয়ার দিনে কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত মামলা ঝুলে থাকলে, তা থেকে তাকে রেহাই দেওয়া হোক এবং তাকে ৬নং ধারায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের সুযোগ দেওয়া হোক।
চোখ রাখুন——-নাগরিকত্ব/৩০ঃ ভারতীয় মূলের বিদেশিদের নিয়েও সংশোধনী ছিল বিলে