Barak UpdatesBreaking News

আচমকা কমে গেল বরাকের জল, নিরঞ্জন শেষ হতে ভোর ৫টা
Water level of Barak falls suddenly, immersion halted, ends at 5 AM

১৯ অক্টোবরঃ সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। নির্বিঘ্নে একের পর এক প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছিল। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ২০৩টি প্রতিমার নিরঞ্জন হয়। এর পরেই নদীর জল কমতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে অনেকটা কমে যায়। মূর্তি বিসর্জনেই সমস্যা দেখা দেয়। আশঙ্কা দেখা দেয়, জল যদি প্রতিমাকে অন্তত কিছুটা টেনে নিয়ে না যায়, তবে বড় মুশকিল। পরবর্তী প্রতিমা বিসর্জনই করা যাবে না। শেষে নিরঞ্জন কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রেখে ঘাট আরও নীচে নিয়ে যাওয়া হয়।  প্রায় আধ ঘণ্টা পর ফের শুরু হয় মূর্তি নামানো। তবু আরও জল কমার আশঙ্কা মাথায় রেখে ধীরগতিতে চলে মাকে বিদায় জানানোর শেষতম পর্বটি। ফলে শোভাযাত্রা করে ঘাটে পৌঁছানো শেষ মূর্তির বিসর্জন যখন হয়, তখন ঘড়িতে ভোর পৌনে ৫টা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ২৫১টি প্রতিমার বিসর্জন হয় দশমীতে।

নদীর জল কমাকে প্রাকৃতিক বিমুখতা বলা গেলেও পূজোয় প্রকৃতি পুরো সন্তুষ্টই ছিল। পঞ্চমীতেও ভয় ছিল, বৃষ্টি না পুজোর সব আয়োজন পণ্ড করে দেয়। ঘটল এর উল্টো। মহাষষ্ঠীতে সেই যে সোনালি রোদের দেখা মিলল, তা অব্যাহত থাকল দশমীতেও। রাতে আকাশে মেঘ না জমায় দর্শনার্থীরা নিশ্চিন্তে ঘুরেছেন। সন্ধ্যায় যেমন ভিড়, শেষরাতেও ওই একই দৃশ্য। আবার সপ্তমীতে যেমন জনস্রোত, নবমীতেও একই অবস্থা। বরং বলা যায়, প্রতিদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। উধারবন্দের একটি দুর্ঘটনা ছাড়া পুজোয় তেমন কোনও অঘটনের খবর নেই। দশমীর রাতে প্রতিমা নিরঞ্জন ঘিরে দুই ক্লাবের সভ্যদের মধ্যে সামান্য উত্তেজনার ঘটনা বাদ দিলে প্রতিমা নিরঞ্জনেও কোনও অশান্তি হয়নি।

নাচ-গান আর বিপুল জনতার উপস্থিতিতেই শিলচর সদরঘাটে প্রতিমা নিরঞ্জন চলে। শুক্রবার সকালে প্রথম আসে সদরঘাটের কালোয়ার বাড়ির প্রতিমা। পরে একে একে আসছে শহরের বিভিন্ন বাড়ির দেবীমূর্তি। বেলা গড়াতেই আসতে থাকে সর্বজনীন ও ক্লাবের প্রতিমা। রাত সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ১৩০টি প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে। সাড়ে ১২টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৩-এ। শেষ হয় শনিবার ভোর পৌনে ৫টায়। শিলচর পুর এলাকায় এই বছর ৩৬৭টি পুজো হয়েছে। তবে শিলচর রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রম সহ প্রচুর পূজিত মূর্তি অন্যত্র বিসর্জন হয়।

রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিমা অন্যান্য বছরের মত এ বারও বিকেল ঠিক ৪টায় নিজস্ব পুকুরে বিসর্জন করা হয়। এর পরই সন্ন্যাসীরা ভক্তদের অপরাজিতা পরিয়ে দেন। সেখানেও অগণিত ভক্ত উপস্থিত ছিলেন। এই বছর মিশনে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। মহাষ্টমীতে বেলা সাড়ে ১২টাতেও অঞ্জলির লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছিল। মায়ের উদ্দেশে অঞ্জলি নিবেদন করা হয় সন্ধিপূজার পরেও। তবে রোদের মধ্যে বহু সময় লাইনে দাঁড়িয়েই ভক্তরা মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেছেন।

সব প্রতিমা অবশ্য শুক্রবারই বিসর্জন হয়নি। কিছু বারোয়ারি পূজার প্রতিমা শনিবার বিশেষ শোভাযাত্রা সহ বিসর্জনঘাটে নিয়ে যাওয়া হবে। তাঁদের উদ্দেশে জেলাশাসক ড. এস লক্ষ্মণনের অনুরোধ, তাঁরা যেন বিকেল ৩টার পর নিরঞ্জনের উদ্দেশ্যে বের হন। কারণ রাত জেগে কাজ করার পর বিসর্জনে নিয়োজিত বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের সকালে বিশ্রামের প্রয়োজন। তবে যখনই প্রতিমা আসুক, তাঁর আশা, শনিবার প্রতিমা নিরঞ্জনে গভীর রাত হবে না।

Pic Credit:Eagle

শুক্রবার সকাল থেকেই স্পিডবোট নিয়ে নদীতে হাজির থাকে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ জওয়ানরা। নিরাপত্তা রক্ষীও ব্যাপক হারে মোতায়েন হয়। ছিলেন স্কাউট অ্যান্ড গাইডসের স্বেচ্ছাসেবীরা। পুরসভা নিযুক্ত কর্মীরা বাঁশের সাহায্যে প্রতিমা সহজে গেট থেকে ঘাটে পৌঁছে দেন। কিছু আয়োজকের আবার তাতে আপত্তি। তাঁরা নিজেরাই নদীঘাটে প্রতিমা পৌঁছাতে চান। তাতে বেশ চাপেই পড়তে হয় তাঁদের।

Sidur Khela at Taraknath Mandir Durga Puja, Rangirkhari Silchar

 

Idols on the way to immersion at Silchar

এ বারও মণিপুরি ও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি অধ্যুষিত এলাকার পূজায় পরম্পরাগত পোশাক পরে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রায় সামিল হয়েছেন আয়োজকরা। সঙ্গে নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র। নাচের তালে তালে তাঁরা শোভাযাত্রা করে এগিয়ে গিয়েছেন বিসর্জনঘাটে। পুরুষদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন প্রচুর মহিলাও। দর্শনার্থীদের মধ্যেও এ বার প্রচুর মহিলা দেখা যায়। বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষ সামিল হয়েছেন দশমীতে। কেউ বিসর্জনঘাটে দাঁড়িয়ে, কেউ শহরের মোড়ে বা রাস্তায়। পথে পথে প্রচুর মানুষ শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া প্রতিমা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন। এ বার মাকে বিদায় জানানোর ঠিক আগে বিসর্জনঘাটে সেলফি তোলার ধুম দেখা গিয়েছে।

এ দিকে, সকালে মণ্ডপে মণ্ডপে চলে মহিলাদের সিঁদুর খেলা। মায়ের চরণে সিঁদুর মাখিয়ে সেই সিঁদুর বিনিময় হয় ঘনিষ্টজন ও পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে। পারস্পরিক মঙ্গল কামনা করেন সকলে।

Mother & children seeking blessings of Ma Durga

এ বারও আকাশবাণী শিলচর বিকেল ৫টা থেকে সরাসরি ধারাভাষ্যের আয়োজন করেছে। মনোজ দেব ও হিতব্রত ভট্টাচার্য বিসর্জনঘাটের পরিস্থিতি লাগাতার তাতক্ষণিক জানিয়ে যান। বিসর্জনের ওপর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিলচর দূরদর্শনও। সরাসরি সম্প্রচার করেছে বিটিএন সহ স্থানীয় বেসরকারি ইলেকট্রনিক চ্যানেলগুলি। মাহেশ্বরী সভার পক্ষ থেকে ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে জল বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। তাঁরা নিজেরা এগিয়ে গিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের জল খাইয়েছেন।

The moment of immersion at River Barak. Pic Credit:Eagle

শিলচর সদরঘাটের সঙ্গে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন নদীঘাটে বিসর্জন চলে। করিমগঞ্জের প্রতিমা নিরঞ্জনের বিশেষত্ব হল, দুই দেশের প্রতিমা প্রায় একই জায়গায় এসে বিসর্জন হয়। কুশিয়ারা নদীর দুই তীরে সামিল হন দুই দেশের দর্শনার্থী। প্রতিমা নিরঞ্জন শান্তিতে শেষ হয়েছে হাইলাকান্দি জেলাতেও।

Idol Immersion at Sadarghat today. Pic Credit:Eagle
English text here

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker