CultureBreaking News

মেধার কবিতা ও তিথির গানে কথা’র আয়োজন

২৬ সেপ্টেম্বর : শিলচরের আবৃত্তি চর্চাকেন্দ্র ‘কথা’ গত শনিবার স্থানীয় বঙ্গভবনে দ্বিতীয়বারের মতো আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে বড়মাপের অনুষ্ঠানের আয়োজন করল। তিনটি পর্বে ভাগ করা ছিল তাদের এই সন্ধ্যা।

প্রথম পর্বে ছিল কথার শিল্পীদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। এতে কথার বিভিন্ন বয়সের শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা একটি কবিতামালা উপহার দেন। এটি ছিল “দেশ হাত রাখো মোর সর্বাঙ্গ কুশলে” শীর্ষক শিশু ও বড়দের একটি যৌথ উপস্থাপনা। আবহে ছিলেন সিন্থেসাইজারে কানাইলাল দাস এবং তবলায় বিশ্বজিত দেব। এই কবিতামালায় মূলত এ অঞ্চলের কবি ও কবিতাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এরপর ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীতের অনুষ্ঠান। শুরুর আগে আগরতলার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী তিথি দেববর্মণকে স্মারক সম্মান, উত্তরীয় ও পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করেন কথা’র উপদেষ্টা সুপ্রতীক দত্তরায় ও সম্পাদক শম্পা পালচৌধুরী।

রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছেন তিথি দেববর্মণ। ছবি : জটায়ু

শিল্পী তাঁর অনুষ্ঠান শুরু করেন জীবনমুখী গান দিয়ে। পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত, আধুনিক এবং ত্রিপুরার আঞ্চলিক ভাষা ককবরকেও রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে শোনান। ককবরকে গান অনেকেই বোঝেননি, তবে শিল্পীর সুর মাধুর্যে মুগ্ধ হন অনেকেই। আসামে এসে তিনি প্রবাদপ্রতীম কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজরিকার একটি গান “মানুষ মানুষের জন্য’’ গেয়ে শোনান। এই অনুষ্ঠানে শিল্পী তাঁর একটি গানের সংকলন ও বই তুলে দেন কথার প্রাণপুরুষ মনোজ দেবের হাতে।

কথা মূলত একটি আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। ফলে কবিতার দুনিয়ায়ই কথার বিচরণ। এ দিনের অনুষ্ঠানেও কথা তাঁদের মূল আকর্ষণ হিসেবে রেখেছে কলকাতার বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মেধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তির অনুষ্ঠান। তাঁকে বরণ করেন অলোক পালচৌধুরী ও তপতী চক্রবর্তী।

জীবনানন্দ দাশের ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’, ‘আবার আসিব ফিরে’ এবং পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলায় গান গাই’ দিয়ে শিল্পী তাঁর অনুষ্ঠান শুরু করেন। শিল্পীর পরের কবিতা ছিল রবি ঠাকুরের ‘কুয়ার ধারে’। এছাড়াও তিনি শোনান শুভ দাশগুপ্তের ‘শারদীয়া’, সলিল চৌধুরীর ‘শৃঙ্খলা বিশৃঙ্খলা’ ইত্যাদি কিছু কবিতা।

আবৃত্তিতে মেধা চট্টোপাধ্যায়। ছবি : জটায়ু

এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যে কবিতার একটি মহল তৈরি করে দেন শিল্পী। শোনান জয় গোস্বামীর ‘নন্দর মা’, স্বাদ বদল করে শোনান ভবানী প্রসাদ মজুমদারের ‘আজব পাখি’। এরপরেই অবশ্য ফিরে আসেন আগের ছন্দে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘না পাঠানো চিঠি’ আবৃত্তি করেন। পরের উপস্থাপনা দেবব্রত দত্তের ‘তেজ’।

এই পর্যন্ত অবশ্য ভালই ছিল, কিন্তু তার পরেই দর্শকাসন খালি হতে শুরু হয়। তখন রাত ৯টা। কিন্তু শিল্পী তাতে থেমে থাকেননি। তিনি শুরু করেন দেবব্রত সিংয়ের একটি কবিতা ‘কর্মখালী’। প্রায় ফাঁকা প্রেক্ষাগৃহেই অলোক পালচৌধুরীর অনুরোধে শোনান মল্লিকা সেনগুপ্তের ‘ধ্রপদী সংবাদ’। এরপরেই অবশ্য দেবব্রত সিংয়ের ‘বানভাসী’ কবিতা দিয়ে তিনি অনুষ্ঠানের ইতি টানেন।

মেধার কবিতা সবগুলোই ছিল পশ্চিম বাংলা কেন্দ্রীক। তা যেন কথার বার্তার সঙ্গে কোনওভাবেই সম্পৃক্ত হচ্ছিল না। যদি দু-একটা এখানকার কবিতাও রাখতেন, তাহলে অনেকটাই শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যেত। কারণ এইদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে কথা নিজের পরিবেশনায় আঞ্চলিক কবিতা বা এখানকার কবিদেরই প্রাধান্য দিয়েছে। ফলে মেধার অনুষ্ঠান ঠিক যেন সুরে গাথা পড়ল না।

এ দিন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন শিলচরের বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী প্রদীপ দাস। এখানে একটি কথা বলতেই হয়, শিলচরের বিশিষ্ট আবৃত্তিকার মনোজ দেব গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর ১ ঘণ্টার একটি একক অনুষ্ঠান করেছিলেন। মেধার এই অনুষ্ঠানটি কিন্তু সেই রেকর্ডও ভাঙতে পারেনি। সেদিন মনোজ দেব কোনও বই ছাড়াই অনর্গল কবিতা বলে গিয়েছিলেন। ফলে এ কথা হলফ করে বলাই যায়, কলকাতাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রয়োজন পড়লে তাতে মোটেই পিছিয়ে পড়বে না বরাক উপত্যকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker