NE UpdatesBarak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story

হিমন্তদা বলে দেওয়ার পরদিনই বৃত্তির চেক পেয়ে গিয়েছিলাম, লিখেছেন ড. অপ্রতিম নাগ

ড. অপ্রতিম নাগ

১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ ইংরেজি পর্যন্ত গুয়াহাটির ঐতিহ্যবাহী কটন কলেজে যখন আমি ছাত্র, সেই সময় ড: হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল| ১৯৯০ ইংরেজিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করে কটন কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম| তখন অধ্যক্ষ ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিদ ড: কমলেন্দু দেব ক্রোড়ী | মনে পড়ছে কটন কলেজে ভর্তির প্রথম দিনটির কথা| কলাগুরু বিষ্ণু রাভা প্রেক্ষাগৃহে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হবার পর কয়েকশ নবাগত কটনিয়ানদের উদ্দেশ্যে ক্রোড়ী স্যার ভাষণ দিলেন| এর পরই বক্তব্য রাখতে এলেন কটন কলেজ ছাত্র একতা সভার তদানীন্তন সাধারণ সম্পাদক হিমন্ত বিশ্ব শর্মা| তখন বি. এ. তৃতীয় বর্ষের ছাত্র হিমন্ত | মিনিট পাঁচেকের উদাত্ত ভাষণে আমার মত প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর মনে দাগ কাটলেন| সেই প্রথম আমার হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে স্বচক্ষে দেখা|

Himanta in inter college debate competition at Cotton College. Pic Credit: Nabajyoti Bora

পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৯১ ইংরেজিতে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (যাকে আমরা সেই সময় হিমন্তদা বলে সম্বোধন করতাম) স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে ছাত্র একতা সভার নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হলেন| মনে পড়ে, তাঁর বক্তৃতা শোনার জন্য আমরা নিজেদের ক্লাস বাদ দিয়েও অন্য ক্লাসের প্ল্যাটফর্ম লেকচার শুনতে যেতাম| সেই সময় থেকেই তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও বাচনভঙ্গি আমায় আকর্ষিত করে | জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা হিমন্তদা নির্বাচনে জয়ী হলেন|

Pic Credit: Nabajyoti Bora who contested election against HBS in Cotton

তাঁর প্রথমবারের কার্যকালে কটন কলেজের ইন্ডোর স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেওয়া হয়েছিল | কটন কলেজের প্রায় সব ছাত্রাবাসেই আমার বন্ধু-বান্ধব ছিল| সেই সুবাদে ছাত্রাবাসগুলোতে আমার যাতায়াত ছিল অবাধ | কথা প্রসঙ্গে একদিন কসমো হোস্টেলের আবাসিক আমার বন্ধু ড: সুশান্ত কুমার কাশ্যপের (বর্তমানে কুমার ভাস্কর বর্মা সংস্কৃত ও পুরাতন অধ্যয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক) কাছ থেকে জানতে পারলাম, হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উদ্যোগে প্রত্যেক ছাত্রাবাসে রক্তদান গোষ্ঠী গঠন করা হয়েছে, যাতে রক্তের অভাবে কোনও রোগী প্রাণ না হারায় |

At Cotton College. Pic Credit: Nabajyoti Bora

সেই সময়েই তাঁর সেই ব্যতিক্রমী চিন্তাধারা আমার মনে বিরাট প্রভাব ফেলে| তাঁর সেই কার্যকালের শেষ দিকে কটন কলেজে পদার্পন করে ভারতের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি ড: শঙ্কর দয়াল শর্মা কটন কলেজকে “Centre of excellence ” হিসেবে ঘোষণা করেন| শোনা যায়, সেই সময় থেকেই অসমের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়ার সঙ্গে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ঘনিষ্ঠতা হয়| কিন্তু তা কলেজের বেশিরভাগ পড়ুয়া মেনে নিতে পারেনি| ফলস্বরূপ ১৯৯৩ ইংরেজিতে ছাত্র একতা সভার নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির বর্তমান বিধায়ক ভুবন পেগুর কাছে তিনি পরাজয় বরণ করেন এবং সেখানেই তাঁর ছাত্র রাজনীতির ইতি ঘটে|

ক্রোড়ী স্যারের সঙ্গে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সুমধুর সম্পর্ক ছিল | স্যার তাঁকে খুব স্নেহ করতেন| সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে হিমন্তদা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে বিভিন্ন দাবি আদায় করে নিতেন| সেই সময়ই ক্রোড়ী স্যার বলেছিলেন, একদিন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হবেন| আজ তাঁর সেই ভবিষ্যৎবাণী বাস্তবে রূপায়িত হল| প্রায় নব্বই ছুঁই ছুঁই স্যার আজ নিশ্চয়ই তাঁর প্রিয় ছাত্রের এই উত্তরণে খুবই খুশি হবেন|

আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে এই প্রতিবেদনের ইতি টানব| সেটা ছিল ১৯৯২ ইংরেজি| শুনতে পেলাম, মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আমাদের কয়েকজনের বৃত্তির টাকা কলেজে এসেছে | বহুদিন কলেজের কার্যালয়ে যাতায়াত করেও আমার বৃত্তির ব্যাপারে কোনও সদুত্তর পাচ্ছিলাম না| সেরকমই একদিন বিমর্ষ মনে কলেজের কার্যালয়ের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছিলাম | আমাকে দেখে হঠাৎ হিমন্তদা হাত নেড়ে ডাকলেন| কাছে গেলে জানতে চাইলেন, কী হয়েছে, কয়দিন ধরে কেন আমি কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করছি| আমার মনটাই-বা এত খারাপ কেন| সমস্ত ঘটনা বিস্তারিত জানানোর পর তিনি আমাকে নিয়ে কার্যালয়ে গেলেন এবং সংশ্লিষ্ট করণিককে আমার বৃত্তির ব্যাপারটি ত্বরান্বিত করার জন্য অনুরোধ করলেন| আশ্চর্যজনক ভাবে তার পর দিনই আমি আমার বৃত্তির টাকার চেকটি পেয়ে যাই| এত ছাত্রের ভিড়ে আমার মত একজন নবাগত ছাত্রের প্রতিও তাঁর সজাগ দৃষ্টি আমাকে অবাক করেছিল| আজ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম চূড়ান্ত হতেই আমার ১৯৯২ সালের হিমন্তদার ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে| আমিও যে সে দিন মনে মনে বলেছিলাম, হিমন্তদা, তুমি একদিন অনেক বড় নেতা হবে|

আসলে তাঁর কর্মতৎপরতা এবং সর্বোপরি বহুমুখী প্রতিভাই তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক জীবনের সফলতার চাবিকাঠি |

(লেখক ড. অপ্রতিম নাগ গুরুচরণ কলেজের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker