Barak UpdatesHappeningsFeature Story

‘স্যার’ পার্থ চন্দকে শ্রদ্ধাঞ্জলি….

পরিমল শুক্লবৈদ্য: বিশ্বাস করতে বড় কষ্ট হচ্ছে, তিনি আর বেঁচে নেই৷ এই তো গত রবিবার স্যার পার্থ চন্দের বাড়ি গিয়ে দেখা করে এলাম, আশীর্বাদ নিয়ে এলাম৷ তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ৷ আমার জীবনে তিনিই ছিলেন আলোর দিশারী৷ তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি৷

সৌরীন্দ্রকুমার ভট্টাচার্য: অনুজপ্রতিম পার্থ চন্দের প্রয়াণ সংবাদে আমি মর্মাহত। আমার বড় কাছের জন ছিল সে। তাঁর প্রয়াণে এই উপত্যকা একজন কৃতবিদ্য ও সজ্জন ব্যক্তিত্বকে হারালো। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি ।

নীতীশ ভট্টাচার্য: পার্থ চন্দ বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনে একসময় সক্রিয় ছিলেন।  বিজেপিতে থাকলেও গুণগ্রাহী ছিলেন। প্রায়শই খবরাখবর নিতেন । শিক্ষক হিসেবেও ছাত্রদরদী ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে সম্পর্ক ছিল। তাঁর  প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করছি ও আত্মার চিরশান্তি কামনা করি।

ডা. এম শান্তিকুমার সিংহ:  বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক এবং রাজনীতিবিদ পার্থসারথি চন্দের মৃত্যু বরাক উপত্যকা সহ আসামের বৌদ্ধিক সমাজের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা অপূরণীয়।

গৌতমপ্রসাদ দত্ত: মঞ্চে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভয়টা কাটিয়ে দিয়েছিলেন পার্থ সারথি স্যার। সময়টা ১৯৭৮৷ গুরুচরণ কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচিত কর্মকর্তা তখন আমি। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের (যা সূচনা পর্বে কাছাড় বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন নামে পরিচিত ছিল) প্রথম স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে শিলচরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অধিবেশনে । প্রথম সম্পাদক ছিলেন পার্থ সারথি স্যার। তাঁকে ডেকে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি প্রিয়নাথ দেব ও সাধারণ সম্পাদক সুশিত কুমার দত্ত বললেন , স্মারক গ্রন্থের সহ-সম্পাদক হিসেবে তোমার পছন্দের কাউকে বেছে নাও। কয়েকদিন পর স্যার সুশিতবাবুকে জানালেন , একজন নয় , দুজন সহ- সম্পাদক নেব। প্রথমজন অবশ্যই অমলেন্দু ভট্টাচার্য আর দ্বিতীয় জন আমার ছাত্র গৌতম। সায় দিলেন সুশিতবাবু । বঙ্গ সাহিত্যে আমার হাতেখড়ি পার্থস্যারের হাত ধরে। সম্মেলনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ওই সময় থেকেই আমার পথচলা শুরু। গত দেড়দশক ধরে আমার বিরুদ্ধে স্যারের একটা গুরুতর অভিযোগ ছিল —আমি নাকি লিখতে পারি , কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি। বলতে পারি, কিন্ত নিতান্ত বাধ্য না হলে বলতেও আগ্রহ দেখাই না। মাঝে মাঝে দেখা হলেই প্রশ্ন করতেন , তুমি নিউজ ডেস্কে ম্যানেজার-সাংবাদিক হয়ে সব সময় ফুরিয়ে দেবে ? এবার একটু অন্যভাবেও ভাবো। স্যারের এইসব হৃদয়জুড়ানো কথা আজ স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে।…… চেষ্টা করবো স্যার। পার্থস্যারকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য: খুবই মর্মাহত৷ স্যার এর সাথে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেকদিনের৷ কলেজে পড়ার সময় থেকেই৷ রাস্তা-ঘাটে আমাকে ডেকে কুশল বিনিময় করতেন ৷ একসময় একটা সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেছিলেন ৷ আমি প্রায় তাঁর সঙ্গে থাকতাম ৷ আমার বিএ পরীক্ষার ফিস কম হওয়াতে পার্থ স্যার তা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন ৷ অনেকদিন পর চাকরি পেয়ে ওই টাকা পরিশোধ করি ৷ সত্যিই আমি আমার এক স্বজনকে হারালাম। স্যারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাই৷ তিনি ফুলটাইম রাজনীতিতে ছিলেন না৷ এই জন্য তাঁকে আমাদের রাজনৈতিক নেতা বলে মনে হয়নি৷ তিনি ছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের একজন কৃতি শিক্ষক এবং স্বনামধন্য ডিবেটর৷ এই পরিচয়েই পার্থ চন্দ পরিচিত থাকবেন৷

নীহারেন্দু কুমার পুরকায়স্থ: খুবই মর্মাহত হলাম। এত সোজা-সরল মানুষ ছিলেন! কোনও দিন নিজেকে আগলে রাখতেন না। সবার সঙ্গে দিল খুলে মিশতে দেখতাম। এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো৷ বাংলা, ইংরাজি দুটোতেই সমান দক্ষতা ছিল।

সন্তোষরঞ্জন চক্রবর্তী: আমার অনেক স্মৃতি ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি আমাদের ডিবেটের মেন্টর ছিলেন। তারপর তাঁর সাথে অনেক মঞ্চ ভাগ করেছি। খুব ভালোবাসতেন আমাকে।

সঞ্জীব দেবলস্কর: পার্থ চন্দ স্যার আমার সঙ্গে একেবারে বন্ধুর মতো আচরণ করতেন। তাঁর বাচনভঙ্গির আমি প্রশংসা করতাম এবং তিনি ছাত্রের মুখে এসব শুনলে খুব খুশিও হতেন। লন্ডন ঘুরে আসার পর স্যার যেন বদলে গেলেন। আমার সঙ্গে খেলাধূলা, ক্রিকেট, সাহিত্য বাদ দিয়ে কেবল রাজনীতি প্রসঙ্গে তর্ক জুড়ে দিতেন। তাঁকে অবশ্য বলিনি যে তাঁর নতুন চিন্তাভাবনার শরিক হতে পারছি না। তাঁর সঙ্গে যুক্তি তর্কে কেই-বা পারবে? এক আলোচনা চক্রে মঞ্চে মাইকেই বলেছিলাম, পার্থ স্যার বিধানসভায় গেলে কদাপিও চুপ করে থাকবেন না, কিন্ত তাঁকে প্রতিনিধি হিসেবে পাবার সৌভাগ্য আমাদের কদাপিও হবে না। ডায়াস থেকে নেমে বললেন, তুই তো আমাকে চুপ করিয়ে দিলি। এরপর আমার আর কি কিছু বলার থাকতে পারে, বা বলা সঙ্গত? তবে আজও বলি, সংসদে তিনি গেলে আমাদের ভালো হত। আমাদের কথা এত সুন্দর করে আর কেই-বা বলতে পারেন? পার্থ স্যার একটি প্রজন্মের মুখে ভাষা ( ইংরেজি এবং বাংলা) জুগিয়ে দিয়েছেন। আর কী করে কঠিন বিষয়ের নিবন্ধকে আয়ত্বে আনা যায়, এটা তাঁর ইংরেজি অনার্স ক্লাসে বসে বুঝেছি। অনেকটা সেই ব্যাডমিন্টন কোর্টে খেলাকে নিজের কন্ট্রোলে আনার মতো (তিনি ব্যাডমিন্টনে খুব এক্সপার্ট ছিলেন) ৷

অরিন্দম গুপ্ত: স্যার আমাদের সাহস ছিলেন। আমি অনেক ছোট থেকে অনেক কাছে থেকে দেখেছি৷ একই পাড়ায় থাকার সুবাদে অনেক মূল্যবান কথা শুনে বড় হয়েছি। পরবর্তী সময়ে তিনি আমাদের পড়িয়েছেন। বলতে পারছি না কী যে অনুভূতি হচ্ছে ! একে একে সবাই ছেড়ে যাচ্ছেন নিষ্ঠুর নিয়তির করাল গ্রাসে। স্যার, আপনাকে অনেক মিস করবো।

তমোজিৎ সাহা: এত ভালো মানুষ ছিলেন। এই তো একমাস আগেও ইটখলায় দেখা হয়েছিল। কথাও বলেছিলেন। দেখা হলেই সবসময় ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতেন। এমন মানুষ এখন আর পাওয়া দুর্লভ। স্যারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

Also Read: Mr Speaker Sir: We’ll miss those words of Partha Chanda Sir, writes Dr Rajdeep Roy

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker