Barak UpdatesHappeningsAnalyticsFeature Story
সাংবাদিকদের নিয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা, লিখেছেন গুণাকর দাস
বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য একবার আলাপচারিতায় বলছিলেন, ক্রীড়া সাংবাদিকতা বর্তমান যুগে অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিভিতে খেলার সরাসরি সম্প্রচার চলছে, ধারাবিবরণী দিয়ে চলছেন সুনীল গাভাস্কার, রবি শাস্ত্রী, কপিল দেবের মত আরো ক্রিকেট জগতের বিশেষজ্ঞরা। আজকাল পাড়ার কোচিং, টিভি সম্প্রচারের জন্য বাচ্চারাও জানে কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট শব্দগুলো৷ জানে সেগুলো মারার ধরনও। তাই ক্রীড়া সাংবাদিকরা কী রিপোর্ট করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। শুধু খবরের কাগজে স্কোর বোর্ড ঝুলিয়ে দিলে তো চলবে না। পাঠককে খবর ‘খাওয়াতে’ হবে। না হলে পত্রিকা চলবে না। এবং চাকরিটাও ‘খবর’ হয়ে যাবে।
তাই ক্রীড়া সাংবাদিকরা অন্য পথ ধরলেন। নিজেদের নিউজ ডেস্ক ছেড়ে, চলে যান ‘স্কুপ’ নিউজ ধরতে। লক্ষ্য পাঠকদের খাওয়ানো। খবরে অন্য রকম ‘মশলা’ থাকা দরকার, যা টিভি সম্প্রচার করবে না, বিশেষজ্ঞরা বলবেন না। কিন্তু বাজারের জোগান অনুযায়ী চাহিদা থাকবে। নামী কাগজের নামী সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে কিছু ‘এডভানটেজ’ পেয়ে যান। কিন্তু যারা প্রতিষ্ঠিত হননি বা নতুন সাংবাদিকতায় এসেছেন ‘ স্কুপ’ নিউজ কোথায় পাবেন? কী করবেন? পত্রিকার মালিকপক্ষের এতে কোনও দায় নেই। চাকরি দিয়েছি, খবর দাও। পাঠক ‘খাওয়ায়’ । না হলে কেটে পড়।
কি সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা! অনেক দিন ধরেই কথাগুলো মাথায় ঘুরছে। ১৯ অক্টোবর ‘বরাক ভ্যালি মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’-এর এক সভায় উপস্থিত থেকে, বিভিন্ন সাংবাদিকদের দেখে কথাগুলো মাথায় ঘুরছে। আমি পুরো দেশের কথা লিখতে বসিনি। যে জল, বায়ুর মধ্যে আমি জীবন নির্বাহ করি, আমি সেই উপত্যকার সাংবাদিক ভাই-বন্ধুদের নিয়ে ভাবছি। করোনাকালে এবং বর্তমান অর্থব্যবস্থায় এই সাংবাদিক ভাই-বন্ধুরা কেমন আছেন? করোনা মহামারীর সময়ে ‘লকডাউনে’ নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওঁরা নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে গেছেন, বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে। ক’জন সাংবাদিক শারীরিক দিক দিয়ে ভালো আছেন, কিভাবে ওদের সংসার চলছে, কতটুকু খবর রেখেছি? বিশ্বের খবর আমরা পেয়ে যেতাম ঘরে বসেই। কিন্তু বরাকের প্রতিদিনের খবর ওরা পৌঁছে দিতেন ঘরে ঘরে পত্রিকা মারফত। ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ওরা ভালো ছিলেন না।
এমনিতেই করোনা আবহে পত্রিকার বিক্রি কমের দিকে। তাই মালিক পক্ষের মুনাফা কমতে লাগলো। দায় পড়লো সাংবাদিকদের। এখনো মনে হয় সংকটের উত্তরণ হয়নি। এটা বলতে পারি, বরাক উপত্যকার সাংবাদিকরা যথার্থ সম্মান ও সাম্মানিক না পেলে, বরাক উপত্যকার সকালের চায়ের কাপের সাথে সকালের খবর মিলবে না। ওদের পাশে দাঁড়ানো সময়ের আহ্বান।