Barak UpdatesIndia & World UpdatesHappeningsCultureBreaking NewsFeature Story

শিলচর থেকে গিয়ে দিদি নম্বর ওয়ান ! লিখেছেন তনুশ্রী দাস

তনুশ্রী দাস

২৫ সেপ্টেম্বরঃ কবে থেকে যে আমাদের বাড়িতে নিয়মিত দিদি নম্বর ওয়ান দেখা হয়, তা হিসেব করে বলা মুশকিল। আমি স্কুলে পড়ার সময়েই মাকে দেখতাম, ওই একটা সময়ে তাঁর টিভি-র সামনে বসা চাই-ই৷ কলেজে যখন পড়ি, তখন একটা জিনিস লক্ষ্য করি, আমাকে ঘিরে মা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন, মেয়ে একদিন দিদি নম্বর ওয়ান হবে। প্রায়ই বলতেন, তুই যা-না দিদি নম্বরে। তুই পারবি। তখন সে সব কথায় গুরুত্ব দিইনি। একবার খোঁজখবর করে দেখার কথা ভাবিওনি। কিন্তু মায়ের সেই স্বপ্নের কথাই বিয়ের পরে শুনতে পাই আমার শাশুড়ি মায়ের মুখে। তিনিও নিয়মিত দিদি নম্বর ওয়ান দেখেন। মায়ের মতোই বলতে থাকেন, তুমিও চেষ্টা করো। তুমি পারবে।

এমন শুনতে শুনতে মানসিক শক্তি বেড়ে গেল। একদিন মেল করে বসলাম। আশ্চর্য, কিছুদিন পরেই তাঁরা আমাকে অডিশনে ডাকে। তখনই বলা চলে, আমি অনেকটা পেয়ে যাই। মনে মনে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছিলাম, দিদি নম্বর ওয়ান-এ অডিশন দিতে যাচ্ছি। মা-শাশুড়ির স্বপ্নের একটা ধাপ তো পূরণ করতে পারছি। 1 আগস্ট রাজারহাটে স্টুডিওতে গিয়ে দেখি, শ-তিনেক প্রার্থী। সেখান থেকে মাত্র চারজনকে বাছাই করা হবে। চাপটা বাড়তে থাকে। আনন্দ টেনশনে পরিণত হতে শুরু করে। অডিশনে বেশ কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তবে মূলত বিচার হয় নিজেকে কে কত সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে পারেন, সেই হিসাবে। আমার কোনও রাখঢাক ছিল না। আমি বলেছি, অসমের শিলচরের মতো জায়গা থেকে কলকাতায় গিয়ে লড়াই করছি। এক বেসরকারি সংস্থায় এডুকেশন কাউন্সেলরের চাকরি করছি। তাও বৈবাহিক সূত্রে কলকাতায় যাওয়া। তবে আজ আমার যেটা মনে হচ্ছে, শিলচর থেকে গিয়ে দিদি নম্বর ওয়ান হওয়ার চেষ্টা করা, এই জায়গাটাই তাদের মনে ধরেছে।

পরদিন রাত সাড়ে আটটায় ফোন, কাল সকাল সাতটার মধ্যে স্টুডিওতে পৌঁছাতে হবে, শুটিং হবে। সে যে কী আনন্দ হচ্ছিল, বোঝানো যাবে না। দিদি নম্বর ওয়ান হওয়ার চেয়ে তা কম ছিল না। কিছুক্ষণ পর মাথায় একের পর এক চিন্তা ভিড় করতে থাকে৷ আমার দেড় বছরের মেয়েকে তো অডিশনের দিনে নিয়ে গিয়েছিলাম। পরদিন তাকে নেওয়া চলবে না, বলে দিয়েছেন তাঁরা৷ কত সময় লাগবে, কে জানে! ৩২-৩৩ কিমি দূরের স্টুডিওতে সকাল সাতটায় পৌঁছাতে হলে আমাকে ভোর ছয়টায় রওয়ানা হতে হবে। কী কী নিতে দেবে, কী কী নেওয়া উচিত, কিছুই জানা হল না। ওইসব ভাবতে ভাবতে রাতে আর ঘুম হল না। বারবার মনে হতে লাগল, নাই-বা জিতলাম, এটুকুই-বা কম কীসে! আবার মনে হচ্ছিল, হয়েও তো যেতে পারি দিদি নম্বর ওয়ান।

এই করে করে ৩ আগস্ট সকালে স্টুডিওতে ঢুকি। নানা প্রক্রিয়া সেরে যখন ফাইনাল শুটিং শুরু হবে, তখনই দেখি, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় এলেন। সকলের দিদি৷ ওই মুহূর্তটিকে ঠিক বিশ্লেষণ করা কঠিন। একে দিদি-র সামনে বিশাল সেটে দাঁড়িয়ে কথা বলার আনন্দ, অন্যদিকে ততোধিক উদ্বেগ, আমার সবকিছু যেন কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমি আমার মধ্যে নেই। তবে ভাগ্য ভালো, শুরু থেকেই আমি টপে ছিলাম। শেষপর্যন্ত জয়ী হই। প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার দিয়েই দিদি বেরিয়ে পড়লেন। আমাকে দিদি নম্বর ওয়ান হওয়ার জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হল, নিয়মনীতি মেনে বিভিন্ন কাগজে সই করতে হল। সবশেষে যখন স্টুডিও থেকে বেরোই, তখন সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা।

এ দিন মেয়েকে বাড়ি রেখে আসতে হয় বলে খুব মানসিক চাপে ছিলাম। স্বামীকেও ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাইরে বড় পর্দায় তাদের দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে আমি দিদি নম্বর ওয়ান হয়ে বেরনোর আগেই সে আমার জয়ের কথা দুই বাড়িতেই জানিয়ে দেয়। জেনে গিয়েছেন ঘনিষ্ঠদেরও কয়েকজন। ফলে শুরু হয় অভিনন্দনের ফোয়ারা। পরে আমিও সোশ্যাল মিডিয়ায় আনন্দ সংবাদটা সকলের সঙ্গে শেয়ার করি। সে থেকে কত যে শুভেচ্ছা! আমার ভালো লেগেছে, আমাদের ঘরে যিনি কাজ করেন, তিনি আরও যত বাড়িতে কাজ করেন, সব জায়গায় গিয়ে আমার কথা বলেছেন। এমনকী আমাদের আবাসনের নীচে ফুল বিক্রি করে যে মাসী, তিনিও তার মুখ থেকে খবরটা পেয়ে পরদিন আমায় ডেকে সন্তোষ প্রকাশ করলেন।

এর পর আসে পর্দার পর্ব। ১৭ আগস্ট টিভি-তে দেখানো হয়। এও আরেক অভিজ্ঞতা। শুটিংয়ের তিন-চতুর্থাংশই এডিটে বাদ যায়। চার ভাগের এক ভাগ মাত্র দর্শকরা দেখতে পান। দিদি নম্বর ওয়ান হওয়ার ব্যাপারটা সবাই টিভিতে দেখে নানা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে লাগলেন। মা-বাবা সেদিন পুরো অনুষ্ঠানটি টিভির সামনে ঠায় বসে থেকে দেখলেন। খুব খুশি হলেন। আমি কলকাতার গড়িয়াতে থাকি। কৃষ্ণনগর নদীয়ায় আমার শ্বশুরবাড়ি৷ দুই জায়গা থেকেই কত চেনা- অচেনা মানুষের ফোন যে পেয়েছি! সবাই বলছিলেন, প্রতিবেশী হিসাবে আমাদের খুব গর্ব হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছিল, দিদি নম্বর ওয়ান হওয়ার কয়েকদিন পরে মেয়ের ভ্যাকসিনের জন্য এক ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েছিলাম। কয়েকজন মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিটিভ বসে ছিলেন। তাঁদের একজন আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। একসময় মেয়ে টানাটানি করে আমার মুখ থেকে মাস্কটি সরিয়ে নেয়। ওই ভদ্রলোক তখন কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি তো দিদি নম্বর ওয়ান? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে বিশেষ ভাবে অভিনন্দিত করেন। বাকিরাও বিস্ময়ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker