Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking NewsFeature Story

“মামা”র নেমন্তন্নর অপেক্ষায় জাতীয় পুরস্কার জয়ী নেতাজি বিদ্যাভবনের পাঁচ ছাত্রী

ওয়েটুবরাক, ২২ ডিসেম্বর : তিসা মণ্ডল, ঋতুপর্ণা পাল, পূর্ণিমা বণিক, প্রিয়াঙ্কা দাস ও রাজশ্রী দাস৷ নেতাজি বিদ্যাভবনের নবম শ্রেণির পাঁচ পড়ুয়ার পরিচিতি এখন আর শিলচরে সীমাবদ্ধ নয়৷ এরা এরই মধ্যে হয়ে উঠেছে অসমের মুখ৷ চরিত্র অভিনয় বা পাঁচ মিনিটের অনুনাটকে রাজ্যদল হিসাবে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম হয়েছে। প্রতিযোগিতার সুবাদেই তাদের অসমের বাইরে প্রথম যাওয়া। শিলচরে থেকেও দুইজন এর আগে ট্রেনে চড়েনি। সকলেই যে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারের! দুইজনের বাবা আবার পৃথক সংসারে থাকেন। একজনের বাবা প্রয়াত। মা স্কুলের রাঁধুনি৷ এ ছাড়া, সকলের মাতৃভাষা বাংলা হলেও অভিনয় হিন্দি নাটকে। এতসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে এই মেয়েরা কী করে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করল! নবম শ্রেণির পাঁচ পড়ুয়া অবশ্য দিল্লির ট্রেনে চড়ার আগে থেকেই বলছিল, “আমরাই প্রথম হবো।” ফিরে এসে শোনালো, “কেন হবো না। মামা এসে বলে গেলেন, অসমকে প্রথম করতে পারলে তাঁর বাড়িতে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবেন। সে দিন থেকেই আমরা প্রতিজ্ঞা করি, প্রথম হতে হবে।”

গত ২৯ নভেম্বর শিলচর সফরে এলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভিড়ের মধ্যেই তাদের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, “প্রথম হয়ে ফিরে এসো, আমার বাড়িতে নেমন্তন্ন রইল।” ৭ ডিসেম্বর প্রতিযোগিতা, দুদিন পরে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান জেনে হিসেব কষে বলেছিলেন, “২২ তারিখে আমার বাড়িতে তোমাদের পাঁচজনের নিমন্ত্রণ। তবে মনে রাখবে, দিল্লিতে প্রথম হতে হবে।” এর আগেই অসমের ২২ জেলার মধ্যে প্রথম হওয়ায় তাদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। এর পরই “হিমন্ত মামা”র কথায় তা আরও স্ফীত হয়।
পাঁচ বিজয়ীর কথায়, “২৯ নভেম্বরের পরে এতটুকু আলস্য করিনি। দিনরাত নিজেদের তৈরি করেছি। নির্দেশক শান্তনু পালের বাড়িতে সকাল-সন্ধ্যা ছুটে গিয়েছি। স্কুলেও সুপ্রিয়া সিংহ, দেবস্মিতা দাসের কাছে রিহার্সাল করেছি৷”

প্রথম হয়ে ফেরার পরে শিলচরে তাদের নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। স্টেশনে নেমেই এরা দেখে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠন রূপমের কর্মকর্তারা তাদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শনিবার স্কুলে গিয়ে তাদের সংবর্ধনা জানায় বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। অধ্যক্ষ দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেলাশাসকও সংবর্ধনার জন্য ডেকেছেন। বিদ্যালয় পরিদর্শক অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীও নিজের সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

কিন্তু মামার বাড়ির নেমন্তন্ন? দেবাঞ্জন জানান, “দিল্লি থেকে ফিরেই সব জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে টুইট করেছি। এর জবাব মেলেনি এখনও।” তিসা-ঋতুপর্ণা-পূর্ণিমা-প্রিয়াঙ্কা-রাজশ্রীরা অবশ্য আশাবাদী, মামা কথার খেলাপ করবেন না। ঠিক তাদের গুয়াহাটির সরকারি বাসভবনে ডেকে নেবেন। কিন্তু আজই তো ২২ডিসেম্বর! ভাগ্নীরা একযোগে বলে ওঠে, “দুই-একদিন দেরি হতেই পারে। তাতে কী! আমরা নিশ্চিত, মামার বাড়ির নেমন্তন্ন মিলবেই মিলবে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker