Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
বিশ্ব ত্বক স্বাস্থ্য দিবসে কিছু পরামর্শ, লিখেছেন ডা. জয়দীপ রায় ও মিঠুন রায়
//ডা. জয়দীপ রায় ও মিঠুন রায়//
চর্ম এবং ত্বকের নিচের রোগগুলি বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য অসুস্থতার জন্য দায়ী৷ তবে বেশ কয়েকটি দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিকল্পনা এবং নীতি প্রণয়নে এই বিষয়গুলো যথাযথ গুরুত্ব পায় না । চর্মরোগ থেকে যদিও মরণশীলতার হার অনেক কম, তবে উল্লেখযোগ্য অক্ষমতার সৃষ্টি করে ত্বক ও ত্বকের নিচের রোগ৷ ভারতে এই সব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের তুলনায় অনেক বেশি । ২০১৭ সালের সমীক্ষা অনুসারে ভারতে প্রতি এক লক্ষ জনে ৩৩২.৯৬ জন ত্বক এবং ত্বকের নিচের রোগের জন্য অক্ষমতা সহ বেঁচে আছেন । সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সংখ্যার হিসাবে চর্মরোগ দশম স্থানে রয়েছে, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ দ্বাদশ।
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ বলছে, মারাত্মক এবং অ-মারাত্মক উভয় রোগের কারণেই স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় । কিন্তু ত্বকের রোগগুলি এইচআইভি ও যৌন রোগের মতো এত গুরুত্ব পায় না । অথচ চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব কয়েক দশকে অতীতের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে ।
ত্বকের হাইজিন
ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখার জন্য ত্বকের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই সর্বোত্তম উপায় । ত্বকে রোগ সংক্রমণের বিস্তার রোধ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল হাত ধোয়া । ত্বকের যত্নের জন্য কী ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হবে, তা ত্বকের ধরণের উপর ভিত্তি করে বেছে নেওয়া উচিত । যেমন ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন দিনের বেলা ব্যবহার করা হয়। রাতে মাইল্ড ক্লিনজার, নাইটসিরাম ব্যবহার করা হয়৷ মানসিক চাপ কমানো, সুষম স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াও ত্বক নীরোগ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে৷ দিনে ২-৩ লিটার জল পান করুন, ধূমপান এড়িয়ে চলুন । সম্প্রতি একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে, চর্মরোগে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের দোকান থেকে ক্রিম কিনে লাগানো৷ তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ কারণ সে গুলিতে স্টেরয়েড থাকতে পারে৷
ত্বকের রঙ ম্যানিয়া বন্ধ করুন
ফর্সা ত্বকের প্রতি ভারতীয়দের আকর্ষণ স্পষ্ট । হাস্যকরভাবে বেশিরভাগ ভারতীয়ই কালো চামড়া বদলাতে ফেয়ারনেস ক্রিম বা টপিক্যাল স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করেন । এগুলো দিয়ে ত্বকের ক্ষতিই হয় । কিছু ফেয়ারনেস ক্রিমে স্টেরয়েড থাকে, যার ফলে জ্বালাপোড়া হয়, পিগমেন্টেশন হয়ে মুখমণ্ডলের ক্ষতি করে।
দাদ রোগ বা ছত্রাক
ঠিক মতো ত্বকের যত্ন না নিলে, শরীর পরিষ্কার না করলে, পচা বা জমা জলে বেশি চলাচল করলে দাদ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । বিগত বন্যায় প্রায় ৫০টি রিলিফ ক্যাম্পে স্বাস্থ্য শিবিরে যোগদানের অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদের। সেগুলিতে প্রায় ৬০ শতাংশ শিবিরবাসীর চর্মরোগের সমস্যা ছিল । এ রকম সমস্যার বড় কারণ ছিল দাদ বা ছত্রাক । রোজ স্নান করা উচিত এবং আর্দ্রতা পুরোপুরি মুছে ফেলা উচিত । ভেজা কাপড় কখনও পরবেন না, কাপড় ভালো করে ধুয়ে সূর্যালোকে শোকাবেন । সাবান, তোয়ালে এবং পোশাক অন্যের সঙ্গে ভাগ করবেন না । আক্রান্ত স্থানে নির্ধারিত ক্রিম প্রয়োগ করুন এবং পর্যাপ্তভাবে ওষুধ সেবন করুন ।
যৌনাঙ্গের স্বাস্থ্যবিধি
এ নিয়ে মহিলাদের বিশেষ সতর্কতার প্রয়োজন৷ স্বাভাবিক যোনি স্বাভাবিকভাবে নিজেকে পরিষ্কার করে নেয় সাধারণ সাদা স্রাবে । তবু গোপনাঙ্গ ধোয়ার জন্য হালকা গরম জল ব্যবহার করুন । পরে একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে মুছে নিন৷ কটন আন্ডারওয়্যার পরিধান করবেন। নখ দিয়ে গোপনাঙ্গে আঁচড় দেবেন না । স্প্রে, ডিওডোরেন্টস, পাউডার এড়িয়ে চলুন ।
মুখের ব্রণ
সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় । অত্যধিক সুগন্ধি বা অন্যান্য বিরক্তিকর পণ্য এড়িয়ে চলুন । ব্রণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দোকান থেকে কিনে ক্রিম ব্যবহার করবেন না । এতে স্টেরয়েড থাকতে পারে, যা ব্রণে আরও খারাপ করে ।
প্রতি বছর ৬ এপ্রিল বিশ্ব চর্ম স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয় । এবছর বিশ্ব চর্ম স্বাস্থ্য দিবসের থিম হচ্ছে “যারা চিকিৎসা করাতে পারেন না, চর্মরোগ প্রতিরোধে তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে৷”
আইএডিভিএল বরাক চাপ্টারের পক্ষ থেকে কমিউনিটি চর্মরোগবিদ্যাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাতে অধিকতর চর্মরোগী সুচিকিৎসা পেতে পারেন এবং ভুয়ো চিকিৎসার খপ্পরে না পড়েন ।
(লেখক ডাঃ জয়দীপ রায় একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ৷ তিনি শিলচর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং এনইআইএডিভিএল বরাক চাপ্টারের কোষাধ্যক্ষ৷ মিঠুন রায় করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালের যৌনরোগ বিষয়ক পরামর্শদাতা৷)