Barak UpdatesHappeningsCultureBreaking News
প্রয়াত সবুজ বিপ্লবের শিল্প রূপকার বরাকের প্রতাপ দেব
২ ফেব্রুয়ারি: এক মাসের মধ্যেই বরাকের শিল্পাকাশে জোড়া নক্ষত্র পতন। প্রথমে শুচিব্রত দেব। এবার কখনও না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন বরাক মূলের প্রথম অ্যাপ্লাইড আর্টিস্ট তথা দেশের সবুজ বিপ্লবের শৈল্পিক রূপকার প্রতাপ চন্দ্র দেব । সম্প্রতি নয়াদিল্লির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৮। রেখে গেছেন স্ত্রী অঞ্জলি দেব, একমাত্র ছেলে শুভেন্দু রঞ্জন দেব সহ অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও গুণমুগ্ধকে।
প্রখ্যাত এই শিল্পীর জন্ম ১৯৩২ সালে করিমগঞ্জের স্টেশন রোডে । ছবি আঁকা শেখার সুতীব্র বাসনা নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে পাড়ি দেন ১৯৫১ সালে। ভর্তি হন গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট এন্ড ক্রাফটে। বিশ্বখ্যাত শিল্পী গণেশ হালুই, শর্বরী রায়চৌধুরী ছিলেন তাঁর সহপাঠী । পরে ১৯৫৬ সালে এডভারটাইজিং এন্ড ডিজাইন- এ প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান পান। ছাত্রাবস্থায়ই বহু জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন । তাঁর ছবির পর্যালোচনা, অলংকরণ বেরোয় আনন্দবাজার, যুগান্তর, স্টেটসম্যান সহ বহু জনপ্রিয় পত্রিকায়। ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসেন বিজ্ঞাপন দুনিয়ায় । এমনকি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো নির্মাণেও প্রতাপবাবুর নেপথ্য ভূমিকা ছিল ।১৯৫৮ সালেই তাঁর প্রতিভা ও সৃজনীতে মুগ্ধ আসামের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চালিহা প্রতাপবাবুকে নিয়ে এরাজ্যে একটি উন্নত মানের আর্ট কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যদিও কার্যকারণ বশতঃ সেটা বাস্তবায়িত হয়নি । না হলে আসামের শিল্পোন্নয়নে একজন বাঙালির বিশেষ ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা ছিল।
পরে ভারত সরকারের কৃষিমন্ত্রকে শিল্পী হিসেবে উচ্চপদে চাকরি পান প্রতাপ। দেশের সবুজ বিপ্লবের যাবতীয় ডিজাইন, প্রচারাভিযানের পরিকল্পনা ছিল তারই মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর উদ্যোগে প্রথম কৃষি মন্ত্রক থেকে বেরোয় কৃষি ম্যাগাজিন। এরপর অনূদিত হয় বিভিন্ন ভাষায়। সরকারের হয়ে প্রচারাভিযানে এবং গ্রাফিক ডিজাইন ও মাস কমিউনিকেশনের পাঠ দিতে দেশের সর্বত্র চষে বেড়ান। ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপান সহ বিভিন্ন দেশে সেমিনারে অংশ নেন । সেসব দেশের টিভি চ্যানেলগুলো তার সাক্ষাৎকারও প্রচার করে। পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে পড়ান বিভিন্ন নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে । সরকারি চাকরিতে উজ্জ্বল অবদান রেখে অবসর গ্রহণ করে ১৯৯৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন বাস্তুকলা একাডেমিতে পড়িয়েছেন। শিল্প ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে ভারত সরকারের অল ইন্ডিয়া ফাইন আর্টস এন্ড ক্রাফট সোসাইটি ( আই ফ্যাক্স ) তাঁকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কারে সম্মানিত করে। পুরস্কার তুলে দেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শংকর দয়াল শর্মা ।
অবশ্য জীবনসায়াহ্নে পৌছেও ছবি আঁকার নিজস্ব পরিসরে মগ্ন ছিলেন শিল্পী। কিন্তু করোনাকালে বার্ধক্যজনিত কারণে বিশেষ সতর্কতার জন্য নিজেকে কিছুটা গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি দিল্লির প্রচণ্ড ঠান্ডায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। কুড়ি – পঁচিশ দিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তখন আবার নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। চিকিৎসকদের প্রাণান্তকর প্রয়াসের মধ্যেই ২৭ জানুয়ারি রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । তার মৃত্যুতে পরিচিত শিল্পী মহলে ব্যাপক শোকের ছায়া নেমেছে। একটু বিলম্ব হলেও তার মৃত্যুর খবর বরাকে পৌঁছার পর কিংবদন্তি এই শিল্পীর মৃত্যুতে এখানকার শিল্পীরাও গভীর শোক ব্যক্ত করেছেন।