Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্মমতম পরিহাস, লিখেছেন অধ্যাপক দেবাশিস ভট্টাচার্য
২ জুলাই: করোনা আবহে রাজ্যে বাতিল হয়ে যাওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণের কিছু মাপকাঠি নির্ধারিত হয়েছে বিশেষজ্ঞ সমিতি দুটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের নির্দিষ্ট ব্যবস্থা না থাকার বাস্তবতাকে মাথায় রেখে বলা যায়, মোটামুটিভাবে সরকার ঘোষিত মূল্যায়ন বিধি গ্রহণযোগ্য। একটা কথা ঠিক যে নবম শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা কিংবা স্কুলস্তরে ইউনিট টেস্ট/প্রি বোর্ড পরীক্ষার ভিত্তিতে মাধ্যমিকের ফল নির্ধারিত হবে একথা জানা থাকলে ছাত্রছাত্রীরা ওই পরীক্ষাগুলির জন্য আরও বেশি পরিশ্রম করত, যে পরিশ্রম মাধ্যমিকের আগের দুই মাসে ছাত্রছাত্রীরা করে থাকে। এই শ্রমের সম্ভাব্য পরিণাম মাধ্যমিকের ফলে বিম্বিত হবে কি না সেটা একটা প্রশ্ন।
আর উচ্চতর মাধ্যমিক আর মাধ্যমিক পরীক্ষা চরিত্রে ভিন্ন, দুটি পরীক্ষার ফলাফলে অনেক সময় প্রচুর ব্যবধান লক্ষ করা যায়। তথাপি, একটা ভিত্তি হিসাবে মাধ্যমিকের সর্বাধিক নম্বর পাওয়া তিনটি বিষয়ের গড় আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ঠেকেছে। বাকি ক্ষেত্রগুলিতে কিছু গোঁজামিলের সম্ভাবনা থাকলেও মোটের ওপর এই পদ্ধতিতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। তবে পরিশ্রমী আর মেধাবীদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা ‘বেটারমেন্ট’ পরীক্ষায় বসবার সুযোগ পাবে, সরকার সেটাও জানিয়েছেন। তবে সেপ্টেম্বর- অক্টোবরের মধ্যে এই সীমিত সংখ্যক সম্ভাব্য পরীক্ষার্থীর অফলাইন পরীক্ষা করোনা পরিস্থিতির জন্য সম্ভব না হলে সেটাকে ২০২২ সালে নিয়ে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। ছাত্রছাত্রীদের একই সঙ্গে দুটো পরীক্ষায় ঠেলে দিলে কোনোটাতেই সুবিচার করা বিদ্যার্থীদের পক্ষে অসম্ভব হবে। পরীক্ষা এই বছরেই, পরবর্তী শ্রেণির ক্লাস শুরু হবার তিন মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করে নিলেই ‘বেটারমেন্ট’ অর্থবহ হবে, অন্যথায় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে ‘বেটারমেন্ট’।
যাই হোক, বিশেষ পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থাটির প্রতি মোটামুটিভাবে পরীক্ষার্থী-অভিভাবক আর শিক্ষকসমাজের সমর্থনই লক্ষ করা গেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার গোটা ব্যাপারটার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ তৈরি করে দিয়েছেন এই ফলাফল শুধুই পরবর্তী শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হলেও চাকুরির আবেদনের ক্ষেত্রে গ্রাহ্য হবে না এমন একটি সিদ্ধান্ত জুড়ে দিয়ে। এটা পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্মমতম পরিহাস। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। রাজ্য সরকার আর শিক্ষাবিভাগের এটা মনে রাখা দরকার যে এই মূল্যায়ন পদ্ধতি কোনো দয়ার দান নয়, এটা অতিমারী পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা।
ধারাবাহিক মূল্যায়ন ব্যবস্থা না থাকার জন্য দায় কিন্তু পরীক্ষার্থীদের নয়; বরং এর দায় শিক্ষাবিভাগেরই । ছাত্রছাত্রীদের বলির পাঁঠা করবার কোনো অর্থ হয় না। এই সিদ্ধান্ত বাতিল করবার দাবিতে জনমত গড়ে উঠুক। আমরা যেন ভুলে না যাই কোনো চাকরির ক্ষেত্রেই শুধু মাধ্যমিক-উচ্চতর মাধ্যমিকের মার্কশিট একমাত্র নির্ণায়ক নয়; বরং প্রতিটি চাকরির জন্যই স্বতন্ত্র লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা থাকে। সুতরাং চাকরির আবেদনের যোগ্যতা অর্জনের জন্য স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাব অবান্তর; এটা পরীক্ষার্থীদের হতাশ করবে; দীর্ঘকাল উৎকন্ঠায় রাখবে, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটবে এবং আত্মহননের মতো প্রবণতার সৃষ্টিও করতে পারে। রাজ্য সরকারকে এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করে সামাজিক উৎকন্ঠা নিরসনের দাবি জানাচ্ছি।
(ড. দেবাশিস ভট্টাচার্য আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক)