Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story

জনপ্রতিনিধিদের না পাওয়া পুষিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, লিখেছেন মানস ভট্টাচার্য

বন্যার্তের ডায়েরি (সাত)

মানস ভট্টাচার্য

ইনভার্টারের ব্যাটারি বসে গেছে৷ আর কতো ! মোবাইল চার্জ নিয়েই সমস্যা। আমরা দুজনে তো স্যুইচ অফ করে রেখে দিয়েছি। কিন্তু মেয়ের মোবাইল নিয়ে ঝামেলা, অফ হয় না। কিছুদিন আগে জলে পড়ে গিয়েছিল। আজ ছোট ভাইয়ের ঘর থেকে চার্জ করা হয়েছে। ওদের ইনভার্টারের অবস্থাও ভালো নয়, শুধু চার্জ করাই চলছে। লাইট জ্বালানো পুরোপুরি বন্ধ। অন্ধকার-জীবন আমাদের জড়িয়ে ধরেছে।

CM at relief camp at Adharchand School, Silchar

গতকাল রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। একদিকে আতঙ্ক, অন্যদিকে আংশিক তৃপ্তিবোধ। কিছু জল তো পাওয়া গেল। আগেই তিন-চারটে রেইন-ক্যাচার বানিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় থাকায় ছাদে উঠে এগুলোকে ঠিক করতে হয়েছে। এর আগেও এই পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের জল প্রিজারভড করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬-৭ বালতি জল কালেক্ট করেছি। দুই দিন চলবে।

কন্টিনিয়াসলি এই অ-সম যুদ্ধে আমাদের মানসিক, শারীরিক শক্তি প্রায় তলানিতে। এত প্রতিকূলতা– এত অনিশ্চয়তা ! কী স্ট্রাগল ! টিকে থাকার লড়াইয়ে আমরা যেন পিছিয়ে পড়ছি। এতদিনের মধ্যে প্রশাসনিক অধিকারী থেকে জনপ্রতিনিধি, এঁরা কেউ একটিবারও এলেন না। জানি, তাদের পক্ষে এটা খুব কঠিন কাজ৷ কিন্তু এই সংকটে তাদের পাশে দেখলে আত্মবিধ্বস্ত নাগরিকদের মনের শক্তি, সাহস বেড়ে যাবে। এই অভাব কিন্তু দূর করে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। শিলচরের বন্যাক্রান্ত মানুষ তাঁকে পাশে পেয়েছে। জলমগ্ন শিলচরবাসীর আত্মপ্রত্যয় ফিরিয়ে আনতে তিনি সবাইকে একসূত্রে বেঁধে দিয়েছেন। তাঁর তৎপরতা এবং বুদ্ধির প্রখরতা আরও একবার প্রমাণিত হলো । তাঁর চেষ্টায় প্রতিদিন শিলচরে ১ লক্ষ লিটার করে পানীয় জল আসছে। এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের। জল এসেছে ঠিকই, কিন্তু প্রোপারলি ডিস্ট্রিবিউট হয়নি। এটা আমাদের চারিত্রিক দৈন্যতা এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়।

CM at Bethukandi, Silchar

সন্ধ্যা হয়ে গেছে। জীবনটা যেন থেমে গেছে। কিচ্ছু করার নেই। এর মধ্যেই মোম জ্বালিয়ে একটি আর্টিকেল লিখতে বসেছি। যদিও মোমবাতি, টেবিল ল্যাম্পে আগে অনেক লিখেছি, এখন প্রায় অসম্ভব। কাঁপা কাঁপা কম আলোতে, তীব্র গরম আর মশার কামড় সহ্য করে কোনমতে লেখা শেষ হলো। আমরা সবাই ব্যালকনিতে বসা। উল্টো দিকের বাসার ওরাও। প্রথমে মান্নাবাবু (উল্টো দিকের বাসার) সুন্দর একটি গান করলেন। আমার মেয়েও গান করলো। গানের আসর বেশ জমে উঠেছে।

এই সময়ে আমাদের দুই গলি‌ পরে ‘পূর্বাশা’-র মুখে একটি ভেলা উল্টে যায়। ছেলে ‘সূর্য’-কে পঞ্চায়েত রোড থেকে রেসকিউ করে তার বাবা সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য হাইলাকান্দি রোডের দিকে যাচ্ছিলেন, পথে এই ঘটনা। তারা বিবেকানন্দ রোডের বাসিন্দা। বাড়িতে অনেক জল থাকায় তারা দুর্গাপল্লিতে যাওয়া স্থির করেন। সূর্য সাঁতার জানে না আর জেনেই বা কী করবে! জল অনেক, তীব্র স্রোত। ভেলা উল্টে গেলে অন্ধকারে দুজনই জলে পড়ে যান। অনেক কষ্টে প্রাণ বাঁচাতে তারা কোনভাবে পূর্বাশা গলির  পুরকায়স্থবাবুর গেটের উঁচু স্ল্যাব আঁকড়ে ধরে স্ল্যাবের উপর বসে পড়েন। শরীর প্রায় অবশ। ঘটনার আকস্মিকতা এতটাই যে তাঁদের মুখে কথা ফুটছে না। তারা এই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। কী করে একটি নিরাপদ জায়গায় যাবেন বুঝতে পারছেন না। পুরকায়স্থবাবুরাও অনেক চেষ্টা করলেন৷ কিন্তু সেই ক্রিটিক্যাল জায়গা থেকে কিছুতেই তাদের তুলে আনা গেল না। এনডিআরএফ-কে খবর পাঠানো হলেও তারা এলো না। এইভাবেই রাত কেটে যায়।
.. .. .. .. .. .. .. .. .
(আগামী কিস্তিতে সমাপ্ত)

Also Read: বন্যার দিনগুলিতে আমরা ছিলাম টোটালি আনসিকিওরড, লিখেছেন মানস ভট্টাচার্য

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker