Barak UpdatesAnalyticsBreaking NewsFeature Story
জঞ্জাল ফেলার জায়গা মিলছে না, দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস লক্ষ্মীপুরবাসীর
জঞ্জাল-যন্ত্রণায় ভুগছে লক্ষীপুর শহর। যত্রতত্র আবর্জনা। কোনও স্থানে স্তূপীকৃত, কোথাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। সাফাইকর্মীরা নিয়মিত আবর্জনা জড়ো করে রাখেন। কিন্তু সেগুলি তুলে নেওয়া হয় না। জমা আবর্জনা পচেগলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পশু-পক্ষী সে সব এদিক-ওদিক ছড়ায়। অসহনীয় অবস্থা। পুরনেত্রী সংগীতা গুরুং জানান, শহরের আবর্জনা ফেলার স্থায়ী জমি নেই। তাই সমস্যা হচ্ছে।
১৯৬০ সালে লক্ষীপুর টাউন হিসেবে ঘোষিত হয়। চার ওয়ার্ড নিয়ে গঠন করা হয় টাউন কমিটি। ২০০৭-সালে টাউন কমিটি পুরসভায় উন্নীত হয়। ওয়ার্ড বেড়ে হয় ১০টি। টাউন কমিটি হোক বা পুরসভা, অধিক সময় ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু শহরের আবর্জনা ফেলার স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি। সমঝোতার মধ্যে এদিক-ওদিক নিয়ে ফেলে রাখা হয়।
গত বছর আস্থা ভোটের মাধ্যমে লক্ষীপুরে পুরবোর্ড গঠন করে বিজেপি। এতেই দেখা দেয় বিপত্তি। কংগ্রেস যে স্থানে জঞ্জাল নিয়ে ফেলত, সেই জঙ্গল মহলে এখন স্থানীয় জনতা আপত্তি করছেন।পুরনেত্রী বিষয়টি লক্ষীপুর বিজেপি নেতা থৈবা সিংহকে জানান। থৈবা এসে তলইনগ্রামে স্থানীয় এক ব্যাক্তির সঙ্গে কথা বলে চুক্তির মাধ্যমে জমি বের করে নেন। চুক্তির শর্ত হলো– জমির দেখভালের জন্য স্থানীয় এক ব্যক্তিকে মাসে তিন হাজার টাকা করে দিতে হবে। আর জমিটির চতুর্সীমায় বেড়া বসিয়ে আবর্জনা ফেলতে হবে। পরবর্তী জমির মালিক জমিটি পুরসভার নামে দান করবেন। সে সময় শুকনো মরশুম থাকায় চুক্তির পরই আবর্জনা ফেলা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বর্ষা আসতেই দেখা দেয় সমস্যা। বৃষ্টির দরুন জমিতে যাওয়ার রাস্তা পুরো কাঁদামাখা হয়ে যায়। আবর্জনার গাড়ি কোনওমতেই ওই জমি পর্যন্ত যেতে পারে না। প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করেও পুরসভা রাস্তাটি গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তুলতে পারেনি। আবর্জনা ফেলা নিয়ে দেখা দেয় সমস্যা। দীর্ঘদিন থেকে জঞ্জাল পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে দেখে শহরে। কংগ্রেস এ নিয়ে মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করে। এর পরই মহকুমা শাসক পুরনেত্রীকে ডেকে আবর্জনা ফেলা নিয়ে কথা বলেন l কিন্তু পুরনেত্রী তত্পর হলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।
আবর্জনা ফেলার জন্য পুনরায় রাস্তা সংস্কার করের কথাবার্তা চলছে। তবে স্থানীয় জনতার দাবি, চুক্তি মেনে চতুর্সীমার বেড়া বসানো হয়নি। এর দরুন গরু-ছাগল ভেতরে ঢুকে পড়ছে। পচাগলা আবর্জনা খেয়ে এলাকার প্রচুর গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই বেড়া না বসানো পর্যন্ত সেখানে জঞ্জাল ফেলতে দেওয়া হবে না বলে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন।
এই দাবি-আপত্তির মধ্যে পুরনেত্রী সমস্ত জঞ্জাল পুড়িয়ে ফেলতে সাফাই কর্মীদের নির্দেশ দেন। এতেও স্বস্তি মেলেনি। এক-দুইদিন জ্বালানোর পর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে হুমকি আসে, আবর্জনা জ্বালালে পরিবেশ দূষিত হয়। তা বন্ধ না হলে তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হবেন। বাধ্য হয়ে পুরসভাকে সে সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসতে হয়।
এই পরিস্থিতির জন্য শহরের নাগরিক পুরনেত্রীর দিকেই আঙুল তুলছেন।
অভিযোগ, শহর উন্নয়নে চতুর্দশ অর্থবর্ষে ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। বোর্ড মিটিংয়ে সেই টাকা শহর উন্নয়নে খরচ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আবর্জনা ফেলার জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বরাদ্দ অর্থ এই কাজের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এখানেও রাজনীতি। থৈবা সিংহের বের করে দেওয়া জমির উপর পুরসভা অর্থ খরচ করার সাহস পাচ্ছে না। কারণ, এখন পর্যন্ত জমির মালিক লিখিতভাবে জমিটি পুরসভার নামে দেয়নি। এই পরিস্থিতিতে অর্থ খরচ করার পরে যদি জমির মালিক দাবি ছাড়ে না, এমন প্রশ্নও উঠছে। তবে জটিল রাজনীতির সূত্র ধরে একাংশ চাইছেন, রাস্তা ঠিকঠাক করে ওই জমিতেই আবর্জনা ফেলা হোক। পুরনেত্রী অবশ্য মহকুমাশাসকের সঙ্গে কথা বলে জঞ্জাল ফেলার জন্য কিছু সরকারি জমির ব্যবস্থা করেন। সেখানেও একদল মানুষ বাধা দিচ্ছেন।
পুরনেত্রী গুরুঙের কথায়, যত বাধা আসুক না কেন, এবার স্থায়ী সমাধানে পুরসভা পিছপা হবে না। তিনি শহরবাসীকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কবে হবে স্থায়ী সমাধান। আর কত কাল পচা-গলা দুর্গন্ধের মধ্যে শহরবাসীকে থাকতে বাধ্য করা হবে।