Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
এনডিআরএফের ত্রাণ বিতরণে ছিল তাচ্ছিল্যের ভাব, লিখেছেন মানস ভট্টাচার্য
বন্যার্তের ডায়েরি (পাঁচ)
রাতে ঘুম হয়নি। সাড়ে বারোটা-একটা থেকে প্রচণ্ড চিৎকার। নৌকো করে চোর এবং ডাকাত দলের হানা। এক একবার এক এক দিক থেকে চিৎকার। কিচ্ছু বোঝার উপায় নেই। যেসব বাড়ি ছেড়ে লোকেরা চলে গেছে, সেই সব বাড়িই টার্গেট পয়েন্ট। সুযোগ পেলে অন্য বাড়িতেও ঢুকবে। চিৎকার করা ছাড়া তো আর কোনও উপায়ও নেই। পুলিশের টহলদারি থাকলেও মেইন রোডে থাকতে পারে । way2Barak.com থেকে জানলাম, আর্যপট্টির কাছে বরাকে বড়সড় একটি স্পিডবোট নিয়ে ডাকাতদল এসেছিল।
আজ সকালেও জল প্রায় একই জায়গায়। এক -দুই ইঞ্চি কমতে পারে। গলিতে ডুব জল। হেলিকপ্টার থেকে ড্রপিং শুরু হয়ে গিয়েছে। আশেপাশে ড্রপিং চলছে। দূরে আমাদের ডান দিকে, গৌড়ীয় মন্দিরের উল্টো, ন্যাশনেল হাইওয়ের উপর সবুজ রঙের উঁচু ফ্ল্যাটে দীর্ঘ সময় ধরে ড্রপিং চলছে। অনেক অনেক প্যাকেট।
এই আশায় আমরাও লাল ব্যাডকভার টাঙিয়ে রেখেছি। বিকেলের দিকে প্রাক্তন কমিশনার-এর লোকেরা নৌকা করে এসে ২-৩ লিটার করে খাওয়ার জল এবং একটি বেশ মোটা মোমবাতির প্যাকেট দিল। জল এবং মোমবাতি পেয়ে আমরা খুশি। আমাদের দুটোরই খুব দরকার। এনডিআরএফ-এরও একটি বোট গলিতে ঢুকতে দেখা গেল। আমরা অপেক্ষায়। ওদের দেওয়ার স্টাইল একদম ঠিক নয়। বোট থেকে জলের বোতল এলোপাতাড়ি ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারছে। সবাইতো দোতলায়, বেশিরভাগ বোতলই জলে পড়ছে। এইভাবে যেমন খুশি ত্রাণ বন্টনের প্রতিবাদ করলাম, একটি কম বয়সী ছেলে বলে ওঠে- ”আমরা যে এসে দিচ্ছি, সেটাই আপনাদের ভাগ্য।” আমি বললাম -”তোমাকে কে দিতে বলেছে? ঠিক ভাবে না পারলে দিও না।” ত্রাণ দেওয়া মহৎ এবং অবশ্যই কঠিন কাজ। জনসেবার ভাবনা না থাকলে ত্রাণ দেওয়া যায় না। মনে সায় না থাকলে এই কাজে আসা উচিত নয়। এটা সেবামূলক কাজ। রাগ করে আমাদেরকে না দিয়েই ওরা চলে যায়, পরে আবার ফিরে এসে ঠিক ভাবে ২ লিটার জল দেয়।
পশ্চিম আকাশে সূর্য। সন্ধ্যা হতে আর বেশি দেরি নেই। জলের আপাত স্থিতিশীল অবস্থা আমাদের মনে আরও চাপ সৃষ্টি করে। এই দুঃসহ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ কী? মাঝে মাঝে এক চরম অসহায়তা গ্রাস করে ফেলে। আশিস ঠাট্টা করে বলে– ‘এই ফ্লাড ‘করোনা’-র ও ঠাকুরদা ‘! ঠিক তাই। ফ্লাড, লাইফকে একদম কনফাইন্ড্ করে দিয়েছে, ভাবাই যায় না।
এই মুহূর্তে একটি ভিডিও দেখছি– যেখানে বাঁধ ভেঙেছে বা কেটে দেওয়া হয়েছে সেই স্পটে দাঁড়িয়ে কাছাড়ের জেলাশাসক কীর্তি জল্লি ভীষন রেগে চিৎকার করে বিভাগীয় এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, মিঃ গোস্বামী-কে কাজে গাফিলতির জন্য ওয়ার্নিং দিয়ে বলছেন–” I will suspend you. I will put you into jail. ” প্রকাশ্যে ডি,সি-র এই ধমক যেমন হাস্যকর তেমনি showy, অর্থাৎ লোক-দেখানো। মাত্র কয়েক লাইন লিখে অনায়াসে যা করতে পারেন, তা না করে তিনি অযথা চিৎকার চেঁচামেচি করলেন৷
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বাঁধ কাঁটা হয়েছে বন্যার প্রায় দিন পনেরো আগে, সেটার পেছনেও নাকি বেশ জমাট রহস্য লুকিয়ে আছে। যখন রেকর্ড বৃষ্টিতে বরাকের জনজীবন বিধ্বস্ত, বন্যার আগাম বার্তা মুখে মুখে, সেই ক্রিটিক্যাল সময়ে ডিসি-র কি উচিত ছিল না, যে সব জায়গায় অতীতে বাঁধ ভাঙার রেকর্ড রয়েছে সেইসব জায়গার নদী-বাঁধগুলো সরেজমিনে দেখা এবং যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে শহরে জল ঢুকতে না পারে? অভিযোগ রয়েছে, ওইসব ভালনারেবল পয়েন্টে দীর্ঘ দিনের মধ্যে কোনো ধরনের রিপেয়ারিং ওয়ার্কস্ই হয়নি। জলসম্পদ বিভাগ সহ জেলা প্রশাসন কি এই দায় এড়াতে পারে?
( চলবে ) ……..………..
Also Read: ছাদের উপরে শুধু লোক আর লোক, ত্রাণের জন্য কী চিৎকার! লিখেছেন মানস ভট্টাচার্য