Barak UpdatesBreaking News
অভিশপ্ত ৩০ অক্টোবরঃ দোষী কে? লিখেছেন তরুণ কলমচি রাহুল রায়
৬ নভেম্বরঃ কে দায় নেবে অভিশপ্ত ৩০ অক্টোবরের রাতে শিলচরের বুকে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক ঘটনার? দু’টি নিরাপরাধ মানুষের মৃত্যু সহ এত মানুষের দুঃখ, বেদনার দোষীটা কে ? মূর্তি বিসর্জনের নামে গত কয়েক বছরে গড়ে ওঠা বেলেল্লাপনার অপসংস্কৃতিকে কি এর জন্য দায়ী করা যায় ? না কি আপন দায়িত্ববিস্মৃত পুলিশ আধিকারিকদের, যারা সেদিন সেই ট্রাকটিকে আটকাতে পারেননি ? না কি সেই ট্রাকচালক ও তার সহযোগীকে, যারা কিনা সেদিন সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত হয়ে উঠেছিল ? দোষী কে সেই আলোচনায় না হয় একটু পরে আসা যাবে। আগে দেখা যাক যাদের দোষী বলা হচ্ছে তাঁদের এই ঘটনার পর কী হবে?
ট্রাকচালক ও তার সহকারী পুলিশ হাজতে আছে। যেহেতু ট্রাক চালানোর সরকারি অনুমতি রয়েছে, তাঁদের খুব একটা বেশি শাস্তি কিন্তু হবে না। খুব বেশি হলে কয়েক মাসের হাজতবাস । কর্তব্যে অবহেলা করার জন্য চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পুলিশ আধিকারিকদের কী হবে তা আর বোধহয় বলে দিতে হয় না । আমরা সবাই জানি কয়েকদিন পর, বড় জোর কয়েক মাস পর আমরা তাঁদের আবার উর্দিতে দেখতে পাবো ।
আর বেলেল্লাপনা, সে তো সেদিন রাতের দুঘর্টনার পরও থেমে থাকেনি। বহাল তবিয়তেই শহরের বুকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল । উদ্দাম নাচ, গান, আলোর রোশনাই কিছুই বাদ যায়নি । পরদিন একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ার নামে কিছু নিরাপরাধ মানুষের গাড়ি ভাঙচুর করল। নিজেদের বিক্রম দেখানোর এরকম ‘সুবর্ণ সুযোগ’ তারাই বা ছাড়বে কেন শহরবাসীও এই ঘটনা নিয়ে বেশি হলে সপ্তাহ খানেক বিব্রত থাকবেন। চায়ের কাপে ঝড় তুলবেন। পত্রপত্রিকায় জনপ্রতিনিধিদের কখনও গা গরম করা, আবার কখনও সহানুভূতিসম্পন্ন বিবৃতি প্রকাশ পাবে । তারপর নতুন কিছু একটা সামনে চলে আসবে। এই ঘটনাটি সবাই বিস্মৃত হয়ে যাবেন । যেমনটা হয়েছিল বিজ্ঞান শিক্ষক জগদীশ চক্রবর্তী বা চিত্র সাংবাদিক মলিন শর্মার সড়ক দুর্ঘটনায় অকাল নিধনের পরও । আজ কে আর তাঁদের কথা বলে !
৩০ অক্টোবরের ঘটনার ভুক্তভোগীদের কথাও কেউ বেশিদিন মনে রাখবে না । আরেকটা অনুরূপ ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত তাঁদের কথা আর মনে হবে না । কিন্তু কেন এভাবে বারবার এই শহরটিকে মৃত্যুদর্শন করতে হচ্ছে? মূর্তি বিসর্জনের নামে বেলেল্লাপনা হচ্ছে, না কি ধর্মীয় রীতি মেনেই তা করা হচ্ছে সেই বিতর্কে যাচ্ছি না । কিন্তু যেহেতু পূজার পর মূর্তি বিসর্জন হয় এবং তা অতি সাড়ম্বরেই করা হয়, তার জন্য কি প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া যেতো না ? আলাদা রাস্তা সম্ভব না হলে বিশেষ সময় কি বেঁধে দেওয়া যেতো না, যখন কিনা সেদিকে সব রকম গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া যেতো ? প্রশাসন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে ছিল কেন ? সেদিন তো আরও ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটতে পারত, দায়িত্বটা কে নিত তখন ?
দুর্ঘর্টনার কথা দূরে সরিয়ে যদি ভাবা যায় যে শিলচর পুরসভা তো দুর্গাপুজোতে মূর্তি বিসর্জনের সময় সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত বরাদ্দ করেছিল। তাহলে, এত রাত্রিতে কেন আবার মূর্তি বিসর্জনের অনুমতি দেওয়া হল ? কার স্বার্থে এই নিয়ম ভাঙ্গা হল ? ধর্মীয় আবেগকে নীরবে ভোটের বাক্স পর্যন্ত পৌঁছে দিতেই তো নেতারা নিজেদের তৈরি করা নিয়ম বেমালুম ভূলে গিয়েছিলেন।চিত্র সাংবাদিক মলিন শর্মার মৃত্যুর পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করে বলা হয় যে, রাত্রি ১১ টার আগে কোনও অবস্থাতেই মাল বোঝাই ট্রাক শহরে ঢুকবে না। সেই ঘোষণার সপ্তাহ যায়নি যথারীতি ট্রাক আবার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শহরে আসতে শুরু করে। তখন প্রশাসন যন্ত্র কার স্বার্থরক্ষায় ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়েছিল?
জনপ্রতিনিধিরা আজ শ্মশানে যাচ্ছেন, সমবেদনা জ্ঞাপন করছেন, মৃতদের পরিজনদের কিছু অর্থ সাহায্যও করছেন, কিন্তু এতে কি নিজেদের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার বোঝা কমবে? না কি মৃতদের দেহে প্রাণ ফিরিয়ে আনা যাবে ? জনপ্রতিনিধিরা যদি সময় থাকতে জনগণের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতেন, সরব হতেন, তাহলে হয়ত এই অতীব দুঃখজনক ঘটনাটি আটকানো যেতো ।