Barak UpdatesAnalyticsBreaking NewsFeature Story

শুধু দুদিন নয়, মা-বাবা অসুস্থ হলে বিশেষ ছুটি দিক সরকার, লিখেছেন দেবযানী চৌধুরী

///দেবযানী চৌধুরী//

আগামীকাল আর পরশু ৬,৭ জানুয়ারি মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটাতে আসাম সরকারের কর্মচারীদের জন্য প্রথমত দুদিনের বিশেষ ছুটি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এর পক্ষে-বিপক্ষে ইতিমধ্যে মতামত গড়ে উঠেছিল। বলা যায়, এর প্রেক্ষিতেই সরকার এই নির্দেশের পরিবর্তন করে এই দুদিনের বিশেষ ক্যাজুয়েল লিভকে বিহুর ছুটির সঙ্গে সংযুক্ত করেছেন। যাইহোক , হিমন্ত সরকার ভারতীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যে যে ওই ছুটি অযৌক্তিক -অপ্রাসঙ্গিক, এটা অনুভব করতে পেরেছেন। যারজন্য তিনি নির্দেশে পরিবর্তন এনেছেন, এরজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। আগের নির্দেশে সরকারি কর্মীদের বিশেষ বিভাগীয় কতৃর্পক্ষের কাছে আগে থেকে আবেদন জানাতে হয়েছিল। যাদের ছুটি মঞ্জুর হয়েছিল, তাদের মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটানোর মুহূর্তগুলোকে ক্যামেরাবন্দি করে সরকারি পোর্টালে পোস্ট করতে হবে।

আপাতদৃষ্টিতে সরকারের এই নির্দেশ ভারতীয় সংস্কৃতিতে সম্পূর্ন বেমানান। পশ্চিমি দেশগুলোতে মা-বাবারা ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ের পর তাদের সঙ্গে থাকেন না। তারা থাকেন পৃথক বসতিতে। উইকেন্ডে ছেলে কিংবা মেয়ে মা-বাবা, কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে দেখা করেন, সময় কাটান। তাদের জন্য এরকম ছুটির যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে এরকম ছুটি অযৌক্তিক। এমনকি অসম্মানজনক। ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ কোনও কারণ ছাড়া সাধারনত মা-বাবার সঙ্গেই থাকেন পুত্র-পুত্রবধূ। মা-বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব থাকে বিশেষত ছেলের উপরই। যেখানে আমাদের দিন-রাত মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে জুড়ে আছে, সেখানে হঠাৎ করে বছরে দুদিন ছুটি কেন মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য? তাও ওই দুদিন মা-বাবা কিংবা শ্বশুর -শাশুড়ির সঙ্গে যে সময়টা কাটানো হবে, সেটা হবে কৃত্রিম। কারণ মা-বাবাকে সঙ্গে রেখে দশ-বারোটা ছবি তুলে পোর্টালে পোস্ট করাটাই এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে। এ যেন জোর করে দায় চাপিয়ে দেওয়া। এ তো মা-বাবার জন্যও অসম্মানজনক এবং সন্তানের জন্যও।

রাজ্য সরকারে মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির অসুখে বিসুখে চিকিৎসার জন্য, কিংবা সেবার জন্য কোনও ছুটি মঞ্জুরের নিয়ম নেই। শুধু মা-বাবার মৃত্যুর পর পনের দিনের ছুটি পায় সন্তানরা। জীবিত মা-বাবার প্রয়োজনীয় সময়ে সন্তানকে কাছে থেকে সেবার জন্য কোনও সময় বরাদ্ধ করেনি সরকার আজ অব্দি। বৃদ্ধ মা-বাবা অসুস্থ হলে ঘরে কিংবা হাসপাতালে তাদের একা ফেলে এসে সন্তানকে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে হয়, নয়ত তাদের সারা বছরের প্রাপ্য ক্যাজুয়েল কিংবা আর্ন লিভ নিয়ে মা-বাবার চিকিৎসায় সময় দিতে হয়। সরকার যদি আন্তরিকভাবে মা-বাবার জন্য সন্তানদের সময় বরাদ্দ করতে চায়, তাহলে উচিত ছিল সরকারি নির্দিষ্ট দুটি দিন নয়, আর্নলিভ-ক্যাজুয়েল লিভের মত নির্দিষ্ট ছুটি বরাদ্দ রাখা, যাতে তাদের অসুস্থতার সময় সন্তান সেই ছুটির সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। এটা হবে মা-বাবার প্রতি হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকারের সত্যিকারের শ্রদ্ধার্ঘ।

মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ৬,৭ জানুয়ারির ছুটির সুযোগ নেওয়ার অর্থ ছিল, নিজেরাই নিজেদের ছোট করা, অসম্মানিত করা৷ কেন মা-বাবার প্রতি ভালবাসা বা দায়িত্ববোধকে আমাদের প্রমাণ হিসেবে দাখিল করতে হবে? মা-বাবা শুধু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট দুদিনের দায়িত্ব নয়, মা-বাবার দায়িত্ব আমাদের জন্য প্রদর্শনীরও নয়। আমরা সেই গর্বিত সন্তান, যাদের জীবনে মা-বাবা ওতপ্রোত জড়িয়ে। যারা মা-বাবা কিংবা শ্বশুর-শাশুড়িকে নিয়ে ঘুরতে বা সময় কাটাতে কোনও সরকারি ছুটির প্রত্যাশায় থাকেনি এতদিন। তাদের অসুস্থতায় হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে রাত জেগে সকালে কর্মক্ষেত্রে হাজিরা দিয়েছি। মা-বাবার চিকিৎসার জন্য কোন বিশেষ ভাতা না পেলেও গাঁটের পয়সা খরচ করে কিংবা ঋণ করে চিকিৎসা করেছি। তীর্থভ্রমণ করিয়েছি। আজ সরকারের মাথায় যখন তার কর্মীদের বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি কর্তব্যের কথা মাথায় এসেছে, তখন তাদের অসুস্থতায় আমরা যেন পাশে থাকতে পারি, এরজন্য নির্দিষ্ট একটা ছুটি বরাদ্দ করা কিংবা তাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ভাতা দেবার কথা ভাবতেই পারেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker