Barak UpdatesHappeningsBreaking News

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে সিপিএমের বিক্ষোভ

ওয়েটুবরাক, ১৪ জুলাই : আসামের বন্যাকে রাষ্ট্রীয় সমস্যা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন সহ বিভিন্ন দাবিতে গতকাল ১৩ জুলাই সিপিএম রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে । দলের কাছাড় জেলা কমিটি সেদিন শিলচর ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে জমায়েত হয়ে মিছিল সহযোগে জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। স্লোগান মুখরিত এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা সম্পাদক দুলাল মিত্র বলেন, এই ভয়াবহ বন্যার দায়ভার অনেকটাই রাজ্যের বিজেপি সরকারকে বইতে হবে । গত মে মাসের বন্যায় বেতুকান্দিতে বাঁধ ভেঙে জল মহিষাবিলে প্রবেশ করে ও শিলচর শহরের বেশ কিছু জায়গা বন্যা কবলিত হয় ।

২৬ দিন অতিক্রান্ত হবার পরও কেন এই ভাঙা অংশ ভরাট করা হল না। নদীর জল যখন নীচে নেমে যায় তখন ভরা মহিষার জল নদীতে নিষ্কাশনের জন্য যে ড্রেন কাটা হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মচারী ও ঠিকাদার জানতেন। তাই যদি হয়ে থাকে, তবে মামলা করতে গিয়ে তাদের কেন তাদের অভিযুক্ত করা হয়নি । যেহেতু মহিষা বিল আগের বন্যায় ভরা ছিল, তাই বেতুকান্দির বাঁধ কাটা থাকায় জুনের বন্যা অনায়াসে সারা শিলচর ও গ্রামাঞ্চলকে ভাসিয়ে দিতে পেরেছে । দুলাল মিত্র বলেন, শিলচরে বন্যা ভয়াবহ হবার জন্য শুধু বেতুকান্দির বাঁধ কাটা দায়ী নয় । বেতুকান্দি ছাড়াও বেরেঙ্গা এবং আরও কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায় । বাঁধের নিম্নমানের কাজ ও দুর্নীতির জন্যই এই ঘটনাগুলি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি । তাছাড়া, স্লুইস গেট গুলির কোন সংস্কার না হওয়াও বন্যার এই ভয়াবহতার অন্যতম কারণ । এ ব্যাপারে বর্তমান বিজেপি সরকারও দায় অস্বীকার করতে পারবে না । তিনি আরও বলেন, মহিষার জল নিষ্কাশনের জন্য নির্মীয়মান স্লুইস গেটের কাজ মাঝ পথে কেন বন্ধ করে দেওয়া হল । এবারের বন্যায় রাজ্য বিজেপি সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ।

বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীরণ আচার্য বলেন, রাজ্যের বিজেপি সরকার বন্যাকেও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে । এই সরকার সকল বন্যাপীড়িত মানুষকে রিলিফ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারেনি । ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেবার ব্যাপারে বর্তমানে যে সার্ভের কাজ চলছে তাতেও রাজনীতিকরণ চলছে । এই সরকার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে ।

বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে সিপিএম কাছাড় জেলা কমিটির পক্ষ থেকে জেলাশাসকের কাছে একটি স্মারকপত্র দেওয়া হয় । স্মারকপত্রে বন্যায় গৃহহীন হওয়া প্ৰতিটি পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা, আংশিকভাবে ঘর ধ্বংস হওয়া পরিবারকে দেড় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, নষ্ট হওয়া প্ৰতিটি ফিসারির জন্য বিঘা প্রতি ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ, বালি মাটিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমির ক্ষেত্রে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গৃহ সমগ্রী বাবদ এককালীন ৭৫০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ, বন্যা কবলিত গ্রামে ১০০ দিনের কাজের জন্য এম এন রেগা প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ, বন্যা ও ভূমিস্খলনে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান, বন্যায় বিধ্বস্ত বাঁধ, স্লুইস গেট, রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট প্রভৃতি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা ; আসামের বন্যা এবং নদীর পার ভাঙন সমস্যাকে রাষ্ট্ৰীয় বিপর্যয় বলে ঘোষণা করা ও এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নির্ধারিত সময়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করে প্ৰয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, চন্দ্রনাথপুর -লংকা বিকল্প রেল সড়ক নির্মাণের সার্ভের কাজকে ত্বরান্বিত করা, তুরুক হয়ে শিলচর-গুয়াহাটি বিকল্প সড়ক নির্মাণ প্রভৃতি দাবি করা হয় ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker