Barak UpdatesHappeningsFeature Story

পিংক বুথ আর দুঃস্বপ্নের দিন-রাত, লিখেছেন হিমাদ্রি শেখর দাস

হিমাদ্রি শেখর দাস*

বরাক উপত্যকায় নির্বাচন ঘোষণার কিছুদিন পর কাছাড় জেলা প্রশাসনের অভিনব উদ্যোগে ২০১-টি ভোটদান কেন্দ্র-কে পিংক বুথ ঘোষণা করা হয়। নারী শক্তিও যে পিছিয়ে নেই, এই বার্তা সমাজে ছড়িয়ে দেবার যে উদ্যোগ জেলাশাসক কীর্তি জল্লি নিয়েছিলেন, এর প্রশংসা করতেই হয়। কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার ভোট শেষ হবার পর পিংক বুথের কর্মীদের নানা অসুবিধা আর সমস্যার খবর শোনা যায়। অবশ্য এইসব অভিযোগ যে নতুন, এমন নয়। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতেও অনেক পুরুষ ভোটকর্মী জেলা প্রশাসনের নানা ব্যর্থতার কথা বলেছেন। কিন্তু এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন।

এবারের নির্বাচনে প্রথমেই শর্ত ছিল, ভোটকেন্দ্রে কোভিড প্রোটকল মেনেই ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে ভোটদান পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া কোভিডের জন্য বুথের সংখ্যাও অনেক বেশি ছিল। ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ভিড় কমাবার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু নেট্রিপে চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ ভিড়ে সেখানে তিলধারণের জায়গা ছিল না। রাস্তায় ছিল ট্রাফিক জ্যাম। রাত বারোটা পর্যন্ত। কেউ কেউ তো ঘরে ফিরেছেন ভোর বেলায়।

যেহেতু প্রবন্ধটি পিংক বুথ কর্মীদের নিয়ে, তাই এখানে মূলতঃ তারা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন, তা-ই এখানে তুলে ধরা হল।

১) প্রথমেই যে ব্যাপারে প্রশাসনের অগ্রাধিকার দেবার কথা ছিল সেটা হল নিরাপত্তা। কিন্তু এখানেই বিস্তর সমস্যা। দু’তিনটে পিংক বুথে নাকি ভোটকর্মীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে অনৈতিকভাবে ভোট দান করানো হয়। রাতে নেট্রিপ থেকে ফেরার সময় মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি। সবাই প্রাণ হাতে নিয়ে গভীর রাতে ঘরে ফিরেছেন।

২) ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাবার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে যে বাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল এতে আসন সংখ্যার তুলনায় ভোটকর্মী আর নিরাপত্তা কর্মীদের সংখ্যা বেশি। এছাড়া এ বারের ভোটের সামগ্রীর বহর একটু বেশিই ছিল। তাই অনেককেই দাঁড়িয়ে গন্তব্যস্থলে যেতে হয়েছে।

৩) কিছু ভোটকেন্দ্রে টয়লেট বা বাথরুমের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় মহিলাদের খুব কষ্ট হয়েছে। টয়লেটে জল না থাকার কথাও অনেকে বলেছেন। তাদের কাপড় বদলানোর জন্য ভালো রুম পর্যন্ত ছিল না। এছাড়া নেট্রিপেও মহিলাদের শৌচাগারের সুব্যবস্থা ছিল না।

৪) খাবার-দাবারের ব্যবস্থা ছিল না কিছু ভোটদান কেন্দ্রে। অনেককেই ঘর থেকে নিয়ে আসা বিস্কুট দিয়েই উদরপূর্তি সেরেছেন।

৫) রাতে ফেরার সময় নেট্রিপের রাস্তায় লম্বা ট্রাফিক জ্যামে অনেকেই ফেঁসেছিলেন। কেউ কেউ এক-দেড় কিলোমিটার হেঁটে নেট্রিপে এসে ভোটের সামগ্রী জমা দিয়েছেন। জমা দেবার সময় স্ক্রুটিনি-তেও অনেক সময় লেগেছে। প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে ইভিএম এবং অন্যান্য সামগ্রী জমা দেন তাঁরা।

৬) ঘরে ফেরা ছিল সব থেকে টেনশনের ব্যাপার। বাড়ির আত্মীয়-স্বজনেরাও বাহন নিয়ে নেট্রিপে আসতে পারছিলেন না ট্রাফিক জ্যামের জন্য। প্রশাসনের ট্র ন্সপোর্ট সেলের গাফিলতির জন্যই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় সবাইকে। নির্বাচন কেন্দ্রে কোভিড প্রটোকল মেনে চললেও নেট্রিপে জমা দেবার সময় এসবের বালাই ছিল না। এই জমায়েতে ভবিষ্যতে ক’জন করোনাক্রান্ত হবেন তা সময় বলবে।

পিংক বুথের কর্মীদের ভোটের সামগ্রী জমা নেবার জন্য শহরের কাছাড় কলেজ অথবা আইএসবিটি-তে ব্যবস্থা করলে ভাল হতো। এই দুর্ভোগ অন্তত হতো না। ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাবার আগে যে আনন্দ আর উত্তেজনা মহিলা কর্মীদের মধ্যে ছিল, সেটা সময়ের সাথে ফিকে হয়ে যায়। তাই এবারের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা পিংক বুথ কর্মীদের জন্য এক প্রকার দুঃস্বপ্নের মত!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker