Barak UpdatesAnalyticsBreaking News

উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তি মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নিতে সক্রিয় রাজ্যে : মৃদুল

ওয়ে টু বরাক, ২২ ফেব্রুয়ারি : শিলচরের ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এআইডিএসও, এআইডিওয়াইও, এআইএমএসএস এবং কিশোর কিশোরী সংগঠন কসমোসোলের যৌথ উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী শহিদ বেদীতে মাল্যদান করেন এআইএমএসএস-এর জেলা সম্পাদিকা দুলালি গাঙ্গুলি, এআইডিওয়াইও’র জেলা সম্পাদক বিজিত কুমার সিংহ, এআইডিএসও’র আসাম রাজ্য কমিটির সহ-সভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য ও জেলা সম্পাদক গৌরচন্দ্র দাস সহ উপস্থিত সংগঠনগুলোর সদস্য সদস্যা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

মাল্যদানের পর সেখানে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী মহুয়া দত্ত রায়। এছাড়াও গণসংগীত পরিবেশন করেন গৌতম নন্দী ও স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন স্বাগতা চক্রবর্তী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভার শুরুতে উদ্দেশ্য ব্যখ্যা করে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক গৌরচন্দ্র দাস।

সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটির সহ-সভাপতি কলকাতা থেকে আগত ডা. মৃদুল সরকার আলোচনা সভায় তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৯৬১ সালের ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনের শহিদদের রক্তে রঞ্জিত শিলচরের জনগণ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে সচেতন রয়েছেন। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন। সেই ঐতিহাসিক আন্দোলনে পাকিস্তানের অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে শহিদ হয়েছিলেন আবুল, সালাম, রফিক, জব্বার প্রমুখ। এই তারিখকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পরবর্তীতে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়।

তিনি বলেন, উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির মদতে পরিচালিত আসাম সরকার রাজ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন ভাষিক-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার অপচেষ্টা চালায় বারবার। ১৯৬১, ১৯৭২ এবং ১৯৮৬ সালে বরাক উপত্যকার জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আসাম সরকারের অপচেষ্টা সাময়িকভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব হলেও আজও উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তি চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে   মাতৃভাষার অধিকার কেড়ে নেওয়ার। তিনি এও বলেন, দেশের ২২টি ভাষার সমান মর্যাদা ও গুরুত্ব ভারতের সংবিধানে থাকলেও বর্তমানে হিন্দি ভাষাকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ ভারতের মতো বহুভাষিক রাষ্ট্রে তার ফল হবে মারাত্মক। পৃথিবীর বিশিষ্ট ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদেরা ছাত্র ছাত্রীদের মাতৃভাষাতে পড়াশোনাই জ্ঞান অর্জনের সৰ্বশ্ৰেষ্ঠ পন্থা হিসেবে বিবেচিত করার স্বপক্ষে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।

অন্যদিকে বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডারের সাথে পরিচিত হতে হলেও এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্যের জনগণের সাথে আলাপ আলোচনা ও মত বিনিময়ের ক্ষেত্রেও ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ তা সংকুচিত করে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিলে অন্যান্য ভাষিক-গোষ্ঠীর মতো হিন্দিভাষী ছাত্রছাত্রীরাও উন্নত জ্ঞানার্জনের সুযোগ হারাবে। তাই তিনি সবাইকে দেশের সমস্ত ভাষিক-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হতে আহ্বান জানান। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের জেলা সভানেত্রী স্বাগতা ভট্টাচার্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker