Barak UpdatesHappeningsBreaking NewsFeature Story
কখন যে অন্ধকারের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেল !, লিখেছেন হিমাদ্রি শেখর দাস
বন্যার সাতকাহন (এক)
অন্ধকার আমার অপছন্দ নয়৷ তবে নদী , নালা, সাগর পাড়ে সন্ধ্যার পর বসে থাকতে ভালো লাগে না! মনে হয়, অন্ধকার জলাশয় যেন গিলতে আসছে। তাই শিলচরের বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে সন্ধ্যার পর নদী বা সমুদ্রের পাড়ে হাঁটতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। মনের কোনও এক গহীন কোণে এক ভয় লুকিয়ে রয়েছে। কেন এই ভয়? অনেকবার নিজের মনকে জিজ্ঞাসা করে সদুত্তর পাইনি। হতাশ হয়ে নিজেকে আর বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করিনি। কারও সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে তেমন কথাও হয়নি। ২০ জুন রাতে বাড়ির চারিদিকে অথৈ জল দেখে পুরনো সেই ভয় আবার পেয়ে বসলো। বিদ্যুৎহীন এলাকায় অন্ধকার এসে গ্রাস করেছে। চারিদিকে অস্বাভাবিক রকমের নিস্তব্ধতা। হঠাৎ যেন ঝড় বয়ে গেছে শিলচরের উপর দিয়ে। সারাদিন জলের সঙ্গে লড়াই করে শিলচরবাসী ক্লান্ত। মোমবাতির আলো এক-আধটু উঁকি মারছে কারো কারো ঘরে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে জলোচ্ছ্বাসের শব্দ শুনছি। অন্ধকারে সেই অজানা ভয় আবার পেয়ে বসল। বাড়ির গলিতে আমার গাড়ি ডুবে রয়েছে। দেখতে পাচ্ছি ইন্ডিকেটর লাইট মিটমিট করে জ্বলছে। ব্যাটারির শক্তি ফুরিয়ে যাবার পর গাড়িও অন্ধকারে ডুব দিলো।
শিলচরের এবারের বিধ্বংসী বন্যার সাতকাহন নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রায় পনেরো দিনের ভয়াবহ স্মৃতি মগজের অন্দরে স্থান দিতেও কেউ রাজি নয়। কিন্তু সেই স্মৃতি পিছু ছাড়বে না। সারাটা জীবন সে বোঝা হয়েই থাকবে। তাই কিছুটা সাহস করেই স্মৃতির শলতেকে আবার উসকে দিচ্ছি।
অন্ধকারেই খুঁজে পেয়েছি আলোর পথ। বন্যার কয়েকদিন অন্ধকারের সঙ্গে সংসার করতে করতে কখন যে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি তা বুঝতেই পারিনি। তাই ১৩ দিন পর হঠাৎ বিদ্যুতের বাতি জ্বলে ওঠার পর চমকে গিয়েছিলাম। কয়েকদিন তো বেশ ভালোই ছিলাম অন্ধকারে। প্রতি সন্ধ্যাবেলা অন্ধকার ঘরেই গিন্নী হারমোনিয়াম নিয়ে রেওয়াজে বসতো, আর আমি তবলায় সঙ্গত করতাম। সংগীতের জগতে হারিয়ে যেতে বেশ লাগতো। নিজের সত্তাকেই অন্ধকারে খুঁজে পেয়েছিলাম।
বন্যায় প্রাপ্তি, অন্ধকারকে ভালোবাসার আসনে বসানো।
(চলবে)